আলুটিলা গুহা, খাগড়াছড়ি

আলুটিলা গুহা (Alutila Cave) বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির একটি প্রাকৃতিক গুহা। এই গুহার দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ ফুট উচ্চতায় আলুটিলা গুহা অবস্থিত।

স্থানীয় মানুষের কাছে এই গুহা “মাতাই হাকড়” বা “দেবতার গুহা” নামে পরিচিত। গুহার ভেতর সূর্যের আলো পৌঁছায় না বলে সব সময় অন্ধকার থাকে। এজন্য গুহার ভিতর প্রবেশ করার জন্য মোবাইল টর্চ, চার্জার লাইট বা মশাল ব্যবহার করতে হয়। গুহার প্রবেশ মুখে ২০ টাকা করে মশাল কিনে নিতে পারেন। 

গুহার ভিতর ধারালো পাথর ও কাঁদার জন্য বেশ পিচ্ছিল তাই গ্রিপের জুতা পড়ে সাবধানে যেতে হবে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে এই গুহা অবস্থিত। তাই গুহায় প্রবেশ করতে আপনাকে ৫০ টাকা টিকিট কাটতে হবে।

১৮ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট গুহায় ২৬৬ টি সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গুহার মুখে পৌঁছাতে হয়। আবার বের হবার জন্য প্রায় ১৬০ টি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়।

গুহার এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। গুহার ভিতর উচ্চতা কিছু কিছু জায়গায় অনেক কম, সেই জায়গায় গুলোতে মাথা নিচু করে যেতে হয়। এমন কি কিছু কিছু জায়গায় হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়।

এই গুহার পাশে রয়েছে রিসাং ঝর্ণা। তাই যারা আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে যাবেন তারা গুহা দেখার পাশাপাশি ঝর্না না দেখে ফিরবেন না।

আলুটিলা গুহা কোথায় অবস্থিত

বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ ফুট উচ্চতায় আলুটিলা গুহা অবস্থিত। মূলত এটি আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের ভিতরে অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন

আলুটিলা গুহা যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সিএনজি, চান্দের গাড়ি বা লোকাল বাসে আলুটিলা গুহা যেতে পারবেন।

১০-১৫ মিলে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ ভাড়া নিয়ে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকায় ঘুরে আসতে পারবেন। সংখ্যায় কম হলে রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিলে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকার ঘুরে আসতে পারবেন। সব কিছু ঘুরে দেখে আসতে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগবে।

চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যেতে চট্টগ্রামের অকিজেন মোড থেকে শান্তি পরিবহন বা বি আর টি সি বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। এছাড়া লোকাল বাসে যেতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি

বাসে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে ঢাকার গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, শ্যামলী, এস আলম, সৌদিয়া, ইকোনো, ঈগল পরিবহন খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন।

এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১,৭০০ টাকা পর্যন্ত। যেতে সময় লাগবে ৮-৯ ঘন্টার মতো।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়ি থাকার জন্য শহরে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম দেখে পছন্দ হলে থাকতে পারবেন। সাধারণত খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ৪,৫০০ টাকার মধ্যে।

নিচে খাগড়াছড়ি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে –

গাংচিল আবাসিক হোটেল: খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত। এখানে নন-এসি সিঙ্গেল, ডাবল, কাপল, ফ্যামেলি সব ধরনের রুম পাবেন। ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01878-332663

হোটেল নূর আবাসিক: খাগড়াছড়ি শহরে কোর্ট রোডে অবস্থিত। এখানে এসি নন-এসি সব ধরনের রুম পাবেন। ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ৩,৫০০ টাকা পর্যন্ত।যোগাযোগ: 01555-778899

হোটেল আবকাশ আবাসিক: খাগড়াছড়ি বাস স্টেশনে অবস্থিত। এসি নন-এসি সব ক্যাটাগরির রুম এখানে পাবেন। ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01819-016668

হোটেল রাজু আবাসিক: খাগড়াছড়ি কলেজ রোডে অবস্থিত। কম খরচে থাকার আদর্শ স্থান। ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01550-606056

হোটেল গ্রীন স্টার আবাসিক: খাগড়াছড়ি শহরের চাঙ্গী ব্রিজের পাশে অবস্থিত। এখান থেকে খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরার জন্য ট্যুর গাইড পাবেন। রুম ভাড়া ১,২০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01994-855114

কোথায় খাবেন

খাগড়াছড়ি শহর বাস টার্মিনাল ও শাপলা চত্বরের পাশে অনেক খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখান থেকে খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া পানথাই পাড়ায় “সিস্টেম রেস্তোরাঁ” থেকে চা, কফি, দেশি খাবার সহ পাহাড়ি খাবার খেতে পারবেন।

পরামর্শ

  • গুহার ভিতর পিচ্ছিল তাই গ্রিপের জুতা পায়ে দিয়ে সাবধানে হাঁটবেন।
  • মশাল নিয়ে গুহার ভিতরে গেলে মশাল ভিতরে না ফেলে নিদিষ্ট স্থানে ফেলবেন।
  • গুহার ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না।
  • গুহার ভিতর উচ্চ শব্দে কথা বলবেন না।

আরো পড়ুন

Leave a Comment