ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজা সুকান্ত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের পত্নী আলেকজান্ডার নামানুসারে ভবনটির নামকরণ করা হয় আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল। পরবর্তীতে এটি আলেকজান্ডার ক্যাসেল (Alexander castle) বা লোহার কুঠির বলে পরিচিত লাভ করে।
ততকালীন সময় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে লোহার কুঠি বা আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল নির্মাণ করা হয়। ক্যাসেলের ভিতর শ্বেত পাথরের ফ্লোর ও নানা ধরনের রাজকীয় আসবাবপত্র দিয়ে ভবনটি সুসজ্জিত করা হয়েছিল।
প্রাসাদের প্রধান ফটকের সামনে দুইটি মার্বেল পাথরের মূর্তি এবং চারপাশে আরো কয়েকটি ভাস্কর্য রয়েছে। দ্বিতলা ভবনের ছাদে অভ্র ও চুমকি ব্যবহার করা হয়েছে প্রাসাদের ভিতর ঠান্ডা রাখার জন্য। প্রাসাদের পিছনে রয়েছে ফুলের বাগান, পুকুর ও কৃত্রিম হ্রদ।
বহু বরেণ্য ব্যাক্তি এই প্রাসাদে আসেন। ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মহারাজার আমন্ত্রণে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পরিবার নিয়ে এখানে আসেন। একই বছর মহাত্মা গান্ধী আসেন। এছাড়া চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, লর্ড কার্জন সহ আরো অনেকে এখানে আসেন।
বর্তমানে এই কুঠিটি ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ৮ কক্ষ বিশিষ্ট এই ভবনে প্রায় ১৫ হাজার গ্রন্থ রয়েছে।
আলেকজান্ডার ক্যাসেল যাওয়ার উপায়
দেশের যেকোনো স্থান থেকে আলেকজান্ডার ক্যাসেল যাওয়ার জন্য প্রথমে ময়মনসিংহ জেলা শহরে যেতে হবে। ময়মনসিংহ শহরের যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল যেতে পারবেন।
বাসে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শৌখিন, এনা, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ সহ ময়মনসিংহগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘন্টা। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩৫০ টাকা।
ট্রেনে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে হাওর এক্সপ্রেস (রাত ১০:১৫ মিনিট), ব্রক্ষপুত্র এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিট), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল ৪:৪৫ মিনিট), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর ১:১৫ মিনিট) ও তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল ৭:৩০ মিনিট) থেকে পছন্দসই ও সময় অনুযায়ী ট্রেনে সরাসরি ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। শ্রেণীভেদে ভাড়া ১২০ টাকা থেকে ৫০১ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ময়মনসিংহ শহরের থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল হেরা, হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল নাইট স্টার আবাসিক হোটেল খান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মুস্তাফিজ উল্লেখযোগ্য।
আপনার পছন্দ ও বাজেটের মধ্যে এসব আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে যেকোনো একটিতে থাকতে পারেন। ময়মনসিংহ আবাসিক হোটেল ভাড়া কত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
কোথায় খাবেন
ময়মনসিংহ শহরে খাবার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল ধানসিঁড়ি, হোটেল সারিন্দা, হোটেল রাজধানী, আভান্তী রেস্টুরেন্ট, সরগরম রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শহরের প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাও খেতে পারেন।
ময়মনসিংহ আরো দর্শনীয় স্থান
আলেকজান্ডার ক্যাসেল ছাড়াও ময়মনসিংহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান সমূহ রয়েছে। এর মধ্যে মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট, শশী লজ, ইস্টার্ন হেরিটেজ রিসোর্ট ময়মনসিংহ, অন্য ভুবন রিসোর্ট ময়মনসিংহ, মুক্তাগাছা মজিদার বাড়ি, বিপিন পার্ক, বাংলাদেশ কৃষি কলেজ, ময়না দ্বীপ উল্লেখযোগ্য।