alternatetext
ইনানী বিচ, কক্সবাজার

ইনানী বিচ, কক্সবাজার

ইনানী বিচ বা ইনানী সমুদ্র সৈকত (Inani Beach, Cox’s Bazar) বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে ও হিমছড়ি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে অবস্থিত।

কক্সবাজার জেলার যতগুলো পর্যটন সেক্টর রয়েছে তাদের মধ্যে ইনানী বিচ হল ইমারজিং টাইগার। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় বিচ ইনানী।

ইনানী বিচে যেতে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে যেতে হবে। বর্তমানে মেরিন ড্রাইভ সড়ক সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সড়কের পাশে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প দেখতে পাবেন।

অনেকে ইনানী বিচকে সেন্টমার্টিনের সাথে তুলনা করে। কারণ এখানে ভাটার সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো প্রবাল পাথর দেখতে পাবেন। ইনানী সমুদ্র সৈকত সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতের মতো উত্তাল থাকে না। শান্ত সৈকত পর্যটকদের আরো বিমোহিত করে।

BM Khalid Hasan Sujon

ইনানী বিচে ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় বিকাল বেলা। বিকালে এখানে তুলনায়মূলক কম পর্যটকেরা আসে। তাছাড়া বিকালে ঘুরতে গেলে সূর্যস্ত দেখতে পাবেন।

ইনানী বিচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল প্রবাল পাথর। ছোট বা বিভিন্ন আকারের প্রবাল পাথর দেখতে পাবেন। এই পাথর গুলো কত বছরের পুরাতন সেটা আপনি কল্পনা করতে পারবেন না।

জোয়ারের সময় এই প্রবাল পাথর গুলো দেখতে পাবেন না। তাই ভাটার সময় বিশাল এলাকা জুড়ে এই পাথর গুলো ভেসে উঠে। এই প্রবাল পাথর গুলো দেখতে কালো এবং খুব ধারালো। প্রবাল পাথর গুলোর সাথে শামুক ঝিনুক লেগে আছে। তাই জুতা পায়ে পাথরের উপর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবেন। পাথর পিচ্ছল হওয়ার জন্য সাবধানের সাথে চলাফেরা করবেন।

প্রবাল পাথরের উপর দাঁড়িয়ে যখন আপনি নীল সমুদ্র দেখবেন তখন সমুদ্রের ঢেউ আপনার পা ভিজিয়ে দিবে। স্বচ্ছ জলের নিচে নানা রকমের ছোট মাছের ছোটাছুটি দেখতে পাবেন এবং সৈকতে দেখতে পাবেন ছুটে বেড়াচ্ছে হাজারো লাল কাঁকড়ার দল।

BM Khalid Hasan Sujon

কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে ইনানী বিচে যাওয়ার সময় উঁচু উঁচু পাহাড় এবং সমুদ্রের নীল জলরাশির উত্তাল ঢেউ দেখতে পাবেন। সড়কের একপাশে বিশাল দিগন্ত নীল সমুদ্র এবং অপর পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন আপনি।

এছাড়া কক্সবাজার টু টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে ইনানী সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়ার সময় হিমছড়ির উঁচু উঁচু পাহাড়, সমুদ্রের তীরে জেলেদের মাছ ধরার সাম্পান, ঝাউবন ও নারিকেল গাছের সারি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনার সকল ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে।

যারা একটু নিরিবিলি, ছিমছাম পরিবেশে সমুদ্র সৈকতে সময় কাটাতে চান তাদের জন্য উপযুক্ত স্থান ইনানী সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের সৌন্দর্য দেখে আপনি অবশ্যই মুগ্ধ হবেন।

ইনানী সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত

ইনানী সমুদ্র সৈকত মুলত কক্সবাজার সৈকতের একটি অংশ। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় ইনানী সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এই সৈকতের দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল)।

কিভাবে ইনানী বিচ যাবেন

ইনানী বিচ বা ইনানী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার যেতে হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া, গ্রীন লাইন, সোহাগ, সেন্টমার্টিন পরিবহন সরাসরি ঢাকা টু কক্সবাজার রুটে চলাচল করে।

বাস ভেদে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভাড়া জনপ্রতি ১,০০০ টাকা থেকে ২,৬০০ টাকা পর্যন্ত। যেতে সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘন্টার মতো। ঢাকা থেকে রাত ১০ টায় বাস ছাড়লে সকাল ৭ টার মধ্যে কক্সবাজার শহরে পৌঁছে যাবেন।

ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য কমলাপুর রেলস্টেশন বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারবেন। সিট ক্লাস ভেদে ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১,৭৫০ টাকার মধ্যে।

আপনার বাজেট বেশি থাকলে বিমানে ঢাকা টু কক্সবাজার যেতে পারবেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা ফ্লাইটে কক্সবাজার যেতে পারবেন। বিমান সিট-ক্লাস ভেদে ভাড়া ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে। যেতে সময় লাগবে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।

কক্সবাজার থেকে ইনানী বিচ যাওয়ার জন্য খোলা জীপ, অটোরিকশা/ইজিবাইক পাওয়া যায়। জীপ রিজার্ভ নিয়ে গেলে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন। একটি জীপে ১০-১৫ জন মানুষ সহজে যেতে পারবেন। লোকাল জনপ্রতি যেতে ১০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন।

অটোরিকশা বা সিএনজি রিজার্ভ করে ইনানী বিচে যেতে ৬০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন। লোকাল জনপ্রতি যেতে ৮০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন। খোলা জীপ, অটোরিকশা/সিএনজি যাতে যাবেন না কেন অবশ্যই ভাড়া ঠিক করে নিবেন।

কক্সবাজার থেকে ইনানী ভাড়া

কক্সবাজার থেকে ইনানী সমুদ্র সৈকত ভাড়া অটোরিকশা বা সিএনজি রিজার্ভ ৬০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। লোকাল যেতে জনপ্রতি ৮০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন।

খোলা জীপ গাড়ি রিজার্ভ ভাড়া ১,৫০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকার মধ্যে। একটি জীপে ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ সহজে যেতে পারবেন। লোকাল যেতে জনপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা।

ইনানী বিচে কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য ইনানী বিচের আশেপাশে হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে ইনানী রয়েল রিসোর্ট, টিউলিপ সী পার্ল রিসোর্ট, লা বেল্যা রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ইনানী সমুদ্র সৈকত কাছে হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটকেরা কক্সবাজার হোটেল ও রিসোর্টে থাকা সুবিধা মনে করে। কক্সবাজার থাকার জন্য প্রায় ৪০০ হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।

আপনার বাজেট অনুযায়ী কক্সবাজার হোটেল গুলো থাকতে হবে। বাজের অনুযায়ী নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েটি হোটেল ও রিসোর্টের নাম উল্লেখ করা হল।

৮০০ থেকে ৩,০০ টাকা: ইকরা বিচ রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, কোরাল রীফ, উর্মি গেস্টন হাউজ ইত্যাদি।

৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা: বীচ ভিউ, ইউনি রিসোর্ট, সী প্যালেস, নিটোল রিসোর্ট, সী ক্রাউন, আইল্যান্ডিয়া, সী গাল, কোরাল রীফ ইত্যাদি।

৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা: সায়মন বিচ রিসোর্ট, কক্স টুড, লং বীচ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, হেরিটেজ, ওশেন প্যারাডাইজ ইত্যাদি।

উপরে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে আপনারা কম দামে হোটেল পাবেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে বিচ থেকে একটু দূরে হোটেল খুঁজতে হবে। কলাতলী বিচ থেকে একটু দূরে রং বিচ হোটেল সামনের উল্টোপাশের গলির মধ্যে কম টাকায় হোটেল পাবেন।

বিচ থেকে যত দুরে হোটেল খুঁজবেন তত কম টাকায় হোটেল পাবেন। সেক্ষেত্রে অটোরিকশা বা সিএনজি মামাদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

কোথায় খাবেন

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ইনানী বিচে মাত্র ৫-৬ ঘন্টায় ঘুরে আসতে পারবেন। তাই সাথে করে হালকা শুকনো খাবার নিতে পারেন বা কক্সবাজার ফিরে এসে খেতে পারেন। অধিকাংশ পর্যটকেরা কক্সবাজার ফিরে এসে খেয়ে থাকে।

কক্সবাজার খাবার জন্য বিভিন্ন বাজেটের রেস্তোরাঁ আছে। মিডিয়াম বাজেটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রেস্তোরাঁ হল ঝাউবন, নিরিবিলি, ধানসিঁড়ি, পৌষি, রোদেলা ইত্যাদি।

ইনানী বিচ স্ট্যাটাস

ইনানী বিচে ঘুরতে এসে আপনি সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রবাল পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আপনি যখন নীল সমুদ্রের জলরাশি দেখবেন, তখন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আপনার দুই পা ভিজিয়ে দিবে।

ইনানী বিচের ভ্রমণ টিপস

  • জোয়ার ভাটার সময় জেনে তারপর বিচে নামবেন।
  • বিকালে ইনানী বিচে যাওয়া চেষ্টা করবেন।
  • কম টাকার হোটেল পেতে বিচ থেকে দূরের হোটেল গুলোতে থাকতে পারেন।
  • যাতায়াত, খাওয়া, কেনাকাটা করার আগে ভালো করে দামদর ঠিক করে নিবেন।
  • অফসিজনে গেলে কম টাকা খরচ হবে।
  • হাতে সময় থাকলে হিমছড়ি, মেরিন ড্রাইভ রোড ঘুরে দেখবেন।

আরো পড়ুন

Similar Posts