কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থান সমূহ
সাগরকন্যা কুয়াকাটায় শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, এখানে দেখার মতো আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। আজকের ভ্রমন টিপসে আপনাদের জানাবো কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আশেপাশে ঘুরে দেখার জন্য অনেক আকর্ষনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, কুয়াকাটার ঐতিহাসিক কুয়া, সীমা বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন পাড়া, শুঁটকি পল্লী, ফাতরার বন, লাল কাঁকড়া চর, গঙ্গাতমির বন, আলিপুর বন্দর ইত্যাদি।
চলুন নিচে থেকে কুয়াকাটার এসব দর্শনীয় স্থান সমূহের বিস্তারিত তথ্য জেনে আসি। সেখানে কি কি দেখবেন এবং কিভাবে যাবেন।
কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থান সমূহ
কুয়াকাটার সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে উল্লেখ করা হল। যাতে আপনারা কুয়াকাটা ভ্রমণে গিয়ে খুব সহজে এসব স্থান ঘুরে দেখতে পারেন।
(১) কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নে অবস্থিত। এই সৈকতের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩ কিলোমিটার।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। যা কুয়াকাটাকে সকল সমুদ্র সৈকত থেকে অনন্য করে তুলেছে। সৈকতে হাঁটাহাঁটি করা বা স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাঁটার কেটে ভ্রমণকে উপভোগ করতে পারবেন।
নীল সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো গভীরভাবে উপভোগ করার জন্য সৈকতে বড় ছাতার নিচে কাঠের লাউঞ্জ চেয়ারে বসে লম্বা সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন। এর জন্য নিদিষ্ট ভাড়া প্রদান করতে হবে।
(২) কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান
কুয়াকাটা সৈকত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ১৬১৩ হেক্টর জায়গা জুড়ে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। যারা প্রকৃতিপ্রেমী তারা এই উদ্যানটি ঘুরে দেখতে পারেন।
এখানে ঝাউবন, সুন্দরী, বাইন, অর্জুন, করমজা, কাঁকড়া, আসামলতা, স্বর্ণলতা, পশুর ইত্যাদি প্রজাতির গাছের দেখা পাওয়া যেত। এছাড়া নারিকেল, খেজুর, তাল, পেয়ারা, জাম ইত্যাদি ফল গাছ ছিলো।
উপকূলের পাশে হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উদ্যানের বেশিরভাগ স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। উদ্যানটি রক্ষার নতুন করে কাজ শুরু হবে।
(৩) কুয়াকাটার ঐতিহাসিক কুয়া
কুয়াকাটার নামকরণের পিছনে এই কুয়ার ইতিহাস রয়েছে। কথিত আছে ১৭৮৪ সালে রাখাইনদের তাদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করার পর বঙ্গোপসাগরের এই উপকূলে তারা আশ্রয় নেই।
তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের জন্য এখানে মিষ্টি পানির বিশাল একটি কূপ খনন করেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই স্থানটি কুয়াকাটা নামে পরিচিত লাভ করে। কুয়াকাটা ভ্রমণে গিয়ে সময় করে অবশ্যই এই ঐতিহাসিক কুয়া দেখে আসবেন।
(৪) সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটার ঐতিহাসিক কূপ থেকে একটি সামনের দিকে এগিয়ে গেলে সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের অবস্থান। ধারণা করা হয় এটি কয়েক শত বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। বর্তমানে এটি ভেঙ্গে নতুন করে দালান তৈরি করা হয়েছে।
এই বৌদ্ধ মন্দিরের ভেতর প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান পর্যটকরা ঘুরতে আসেন।
(৫) রাখাইন পাড়া
সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের রাস্তা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে রাখাইন গোষ্ঠীদের বসবাস দেখতে পাবেন। যাকে অনেকের কাছে রাখাইন পাড়া নামে পরিচিত।
এখানে রাখাইন নারীদের হাতে তৈরি কাপড় বুণন দেখতে পাবেন। আপনি চাইলে তাদের তৈরি করা আকর্ষনীয় শীতের চাদর স্পল্পমূল্যে ক্রয় করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি চাইলে তাদের দৃষ্টি কালচার, ব্যবহৃত সামগ্রী ও প্রথা সম্পর্কে রাখাইন জাদুঘরে যেতে পারেন। সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য জাদুঘর খোলা থাকে। প্রবেশ টিকেট মূল্য ১০ টাকা।
(৬) শুঁটকি পল্লী
কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে জেলেদের বসবাস। যা স্থানীয় মানুষের কাছে জেলে পল্লী নামে পরিচিত। এই পল্লীর জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সৈকতে পাশে শুকিয়ে শুঁটকি মাছ তৈরি করে।
সাধারণত প্রত্যেক তারা এখানে নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বসবাস করে। সমুদ্রের নানা প্রজাতির মাছ দেখতে ও বাড়ির জন্য কম দামে শুঁটকি মাছ এখান থেকে কিনতে পারেন।
(৭) ফাতরার বন
কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকে শেষ প্রান্তে নদীর ঔপাড়ে অবস্থিত ফাতরার বন। সুন্দরবনের অনেক বৈশিষ্ট্য আপনি এখানে দেখতে পাবেন। এই বনে বানর, বন মোরগ, বুনো শুকর, সাপ সহ নানা ধরনের পাখি দেখতে পাবেন।
কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা রয়েছে। এই নৌকা ভাড়া নিয়ে আপনি ফাতরার বন থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।
(৮) লাল কাঁকড়া চর
কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে মানিক মোহনায় লেবুর চর থেকে কিছুদূর এগিয়ে গেলে লাল কাঁকড়া চর অবস্থিত। এখানে আপনি হাজার হাজার লাল কাঁকড়া দেখতে পাবেন। যা দেখতে অসম্ভব সুন্দর।
লাল কাঁকড়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এরা ঠান্ডায় গর্তের ভিতর লুকিয়ে থাকে এবং রৌদ্রে গর্ত থেকে বের হয়। মানুষকে উপস্থিত বুঝতে পারলে তারা ছুটে গর্তে প্রবেশ করে। চরের চারিদিকে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি দেখে আপনার মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
(৯) গঙ্গাতমির বন
কুয়াকাটা সৈকতের পূর্ব দিকে গঙ্গাতমির খাল পার হলে গঙ্গাতমির বনের অবস্থান। স্থানীয়দের কাছে যা গঙ্গাতমির জঙ্গল নামে পরিচিত।
এই জঙ্গলে সুন্দরবনের বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ছাড়াও বন মোরগ, বুনো শুকর, বানর, সাপ সহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি দেখতে পাবেন।
(১০) আলিপুর বন্দর
কুয়াকাটা থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে আলিপুর বন্দর অবস্থিত। এটি দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম মাছ ধরার কেন্দ্র গুলোর মধ্যে একটি। এখানে আপনি শতশত জেলেদের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার দেখতে পাবেন।
আপনি চাইলে এখানকার জেলেদের কাছ থেকে কম দামে সমুদ্রের তাজা মাছ কিনতে পারবেন।
আরো পড়ুন
- কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ গাইড
- কম খরচে কুয়াকাটা হোটেল
- কুয়াকাটা সরকারি হোটেল
- কুয়াকাটা হোটেল লিস্ট