alternatetext
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, সীতাকুণ্ড

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত (Guliakhali Sea Beach) চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সী বিচ এর দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। স্থানীয় মানুষের কাছে এই বিচ “মুরাদপুর বিচ” নামে পরিচিত।

গুলিয়াখালী সী বিচের একদিকে দিগন্তজোড়া সাগরের জলরাশি এবং অন্য দিকে সবুজ কেওড়া বন এই সমুদ্র সৈকতকে অনন্য করে তুলেছে। এই বন সমুদ্রের অনেকটা ভেরত পর্যন্ত চলে গেছে। দেখে আপনার মনে হবে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো।

অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে দিগন্ত মাঠ জোড়া সবুজ ঘাসের বিস্তৃত গালিচা। সমুদ্রের পাশে এমন সবুজ ঘাসের গালিচা দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।

সৈকতের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিক ভাবে জেগে উঠেছে ছোট ছোট আঁকা বাঁকা নালা। জোয়ারের সময় এই নালা গুলোতে পানিতে ভরে যায়। চারিদিকে সবুজ বিস্তৃত ঘাস আর পানি পূর্ণ জেগে উঠে নালা দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

সৈকতের পাশে বয়ে যাওয়া কেওড়া বনের চারিদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল দেখতে পাবেন। এই কেওড়া বন সমুদ্রের অনেকটা ভেরতে চলে গেছে। এখানে হাঁটার সময় সাবধানে হাঁটবেন, পায়ে ব্যাথা লাগতে পারে।

অল্প পরিচিতির কারণে এখানে খুব বেশি পর্যটকদের দেখা পাবেন না, তাই নিরিবিলি একটি পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু স্টুডেন্ট এখানে ঘুরতে এসে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি গুলো ভাইরাল হলে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত দেশ ব্যাপী মানুষের কাছে পরিচিত লাভ করে। সৈকতের পাশে ছোট ছোট দোকান দেখতে পাবেন। সেখান থেকে টুকটাক খাবার কিনে খেতে পারবেন। এছাড়া কিছু খেলনার দোকান দেখতে পাবেন, সেখানে সুন্দর সুন্দর শামুকের তৈরি জিনিসপত্র পাবেন। পরিবার ও বাচ্চাদের জন্য কিনে আনতে পারেন।

আমি সীতাকুণ্ড ট্যুরে গুলিয়াখালী সী বিচ দেখার পাশাপাশি আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেছি। সীতাকুণ্ডের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান গুলো হল বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, মহামায়া লেক, ফয়েজ লেক, সহস্রধারা ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা, ঝরঝরি ঝর্ণা, খৈয়াছাড়া ঝর্ণ, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট ইত্যাদি আমি ঘুরে দেখিছি।

BM Khalid Hasan Sujon

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপায়

গুলিয়াখালী সী বিচ সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত তাই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সীতাকুণ্ড আসতে হবে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম যেকোনো স্থান থেকে সহজে সীতাকুণ্ডে আসতে পারবেন।

ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড

ঢাকার যেকোনো বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম গামী যেকোনো বাসে সীতাকুণ্ড আসতে পারবেন। এসি, নন এসি বাসের ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত। বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন  যেন সীতাকুণ্ড বাজার আপনাকে নামিয়ে দেয়।

এছাড়া ঢাকার যেকোনো বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি সীতাকুণ্ড যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন। বাস ভেদে নন এসি বাসের ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকার মধ্যে।

BM Khalid Hasan Sujon

ট্রেনে ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথমে ফেনী যেতে হবে। শ্রেণী ভেদে সিট ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ১০৩৫ টাকা পর্যন্ত। এরপর ফেনী থেকে লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড বাজারে যেতে পারবেন, ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১০০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড

চট্টগ্রাম অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার জন্য লোকাল বাস বা সিএনজি পেয়ে যাবেন। ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৮০ টাকা। সিএনজি রিজার্ভ করে আসলে ভাড়া লাগবে ৩০০ টাকা।

সীতাকুণ্ড থেকে গুলিয়াখালী যাওয়ার উপায়

সীতাকুণ্ড বাস স্ট্যান্ড ব্রীজের নিচে থেকে গুলিয়াখালী বীচে যাওয়ার জন্য সিএনজি পেয়ে যাবেন। সিএনজিকে গুলিয়াখালী বিচের বাঁধ পর্যন্ত যেতে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩০ টাকা। সিএনজি রিজার্ভ করে নিলে ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা (অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন)। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে বিচের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার।

গুলিয়াখালী বিচের বাঁধ থেকে সৈকতে যেতে জোয়ার সময় ট্রলারে যেতে হবে, জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৫০ টাকা করে। এই ট্রলার গুলো শুধুমাত্র জোয়ারের সময় চলাচল করে। ভাটার সময় ৫ মিনিট পায়ে হেঁটে সৈকতে যেতে পারবেন। বর্ষার সময় রাস্তায় অনেক কাঁদা থাকে। তাই জোয়ারের সময় সৈকতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

কোথায় থাকবেন

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে থাকার জন্য কোনো হোটেল নেই। তাই সীতাকুণ্ড বাজারে মোটামুটি মানের ৩-৪ টি থাকার হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। থাকার জন্য (নন এসি, এসি) রুম ভাড়া লাগবে ৮০০ টাকা থেকে ১,৬০০ টাকার মধ্যে। অগ্রিম বুকিং দিতে যোগাযোগ করুন 01991-787879, 01816-518119 নাম্বারে।

এছাড়া সাইমুন হোটেলে থাকতে পারবেন। রুম ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে হবে। সেখানে ভালো মানের অনেক হোটেল আছে। সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

কোথায় খাবেন

গুলিয়াখালী বিচে খাবার ব্যবস্থা নেই, সী বিচে ছোট ছোট কয়েকটি টপ দোকান আছে। সেখান থেকে পানি ও টুকটাক শুকনো খাবার খেতে পারবেন। চাইলে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে খাবার কিনে সাথে নিয়ে যেতে পারেন।

সীতাকুণ্ড বাজার খাবার জন্য বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া, আপন রেস্টুরেন্ট, আল আমিন হোটেল উল্লেখযোগ্য। খাবার জন্য আল আমিন হোটেলের অনেক সুনাম আছে। এখানে ভাত, মাছ, ডাল, মাংস, ভর্তা, সবজি ইত্যাদি খাবার খেতে পারবেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম গিয়ে সেখানে সব ধরনের উন্নত খাবার খেতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও পরামর্শ

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ঘোরার জন্য বিকালে যাওয়া ভালো, সন্ধ্যায় সূর্যস্ত দেখে আসতে পারবেন। সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিবেন এবং সাঁতার না জানলে সমুদ্রে বেশি দূরত্বে যাবেন না। সৈতকে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। সৈকতে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল আছে তাই সাবধানে চলাচল করবেন।

Similar Posts