alternatetext
চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম

চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম

চন্দ্রনাথ পাহাড় (Chandranath hill) চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলার অন্তর্গত একটি পাহাড়। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই পাহাড়টি হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান এবং পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা আনুমানিক ১০২০ ফুট (৩১০ মিটার), যা চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে উঁচু স্থান। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্য ২টা রাস্তা পাবেন। ডান পাশের রাস্তা পুরোটাই সিঁড়ি আর বাম পাশের রাস্তা পুরোটাই পাহাড়ী পথ, মাঝে মধ্যে কিছু ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে।

বাম পাশের পথ দিয়ে সহজে উপরে উঠা যায় আর ডান পাশের সিঁড়ি দিয়ে সহজে পাহাড় থেকে নিচে নামা যায়। হেঁটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে প্রায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিট সময় লাগে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সিঁড়ি সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের বেশি।

বাম পাশের পাহাড়ি পথ দিয়ে প্রায় ১ ঘন্ট হাঁটার পর দেখতে পাবেন শ্রী শ্রী বিরুপাক্ষ মন্দির। প্রত্যেক বছর শিবরাত্রি এই মন্দিরে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। যাকে শিবর্তুদর্শী মেলা বলা হয়। এই মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সহ ভারত, ভুটান, নেপাল সহ আরো বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসে।

BM Khalid Hasan Sujon

বিরুপাক্ষ মন্দির থেকে ১৫০ ফুট দূরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপর চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। এখানে যেতে হলে খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে হবে। যা পর্যটকদের জন্য একটু কষ্টকর।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার সময় কষ্ট হলে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে খাবারের দোকান ও বসার ব্যবস্থা আছে, সেখানে বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। পাহাড়ে উঠার জন্য ৪০ টাকা দিয়ে লাঠি কিনে নিবেন, লাঠি ফেরত দিলে ২০ টাকা ফেরত পাবেন।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখতে পাবেন। ঝর্ণায় পানি নাও থাকতে পারে, বর্ষাকালে এই ঝর্ণার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পাহাড়ে উঠার সময় বিভিন্ন ধরনের গাছ, বানর, পাখি, জুম চাষ, ফুলের চাষ দেখতে পাবেন।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে একদিকে বিশাল সমুদ্র এবং অপর দিকে সবুজ পাহাড়ের নির্জনতা দেখে মুগ্ধ হবেন। যারা একসাথে পাহাড়, ঝর্ণা ও সমুদ্র উপভোগ করতে চান তাদের জন্য আদর্শ স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড়।

BM Khalid Hasan Sujon

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ইতিহাস

প্রচীন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস জানলে জানা যায় প্রচীনকালে এখানে মহামানবঙ্গ বসবাস করতেন। অযুদ্ধের রাজা রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন। মহামানবঙ্গ এখানে আসবেন জেনে তাদের স্নানের ব্যবস্থার জন্য ৩ টি কুণ্ড সৃষ্টি করেন।

রামচন্দ্র ভ্রমণ কালে তার স্ত্রী সীতা এখানে স্নান করেন। এরপর থেকে এই অঞ্চলের নাম ধীরে ধীরে সীতাকুণ্ড হিসাবে পরিচিত লাভ করে।

রাজমালা অনুসারে প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে গৌরের বিখ্যাত রাজা আদিসুরের বংশধর রাজা বিশ্বম্ভর সমুদ্র পথে চন্দনাথে আসার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে পর্তুগীজ ও আরাকানরা এই অঞ্চলটি দখল করে এবং বহু বছর শাসন করেন।

BM Khalid Hasan Sujon

প্রায় ১২৮ বছর রাজস্ব শেষে ১৬৬৭ খ্রি. মুঘল সেনাপতি বুজরুগ উন্মে খান আরাকান ও পর্তুগীজদেন হটিয়ে এই অঞ্চল দখল করে নেয়। এরপর ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের রাজত্ব শুরু হয় এবং এই অঞ্চলটি হিন্দুদের দখলে রয়েছে।

চন্দ্রনাথ পাহাড় কিভাবে যাবো

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় পূর্ব দিকে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত। তাই দেশের যেকোনো স্থান থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির দেখতে প্রথমে সীতাকুণ্ড আসতে হবে। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজিতে ২০ টাকা ভাড়ায় চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে যেতে পারবেন। সিএনজি রিজার্ভ নিলে ২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা নিবে।

বাসে ঢাকা টু সীতাকুণ্ড: ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম গামী সৌদিয়া, হানিফ, ঈগল, এস আলম, শ্যামলী, গ্রীন লাইন, মর্ডাণ ইত্যাদি বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন। এই সবগুলো বাস সীতাকুণ্ডে থামে। নন-এসি / এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১,১০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে ঢাকা টু সীতাকুণ্ড: কম খরচে ঢাকা টু সীতাকুণ্ড আসতে হলে “ঢাকা মেইল” ট্রেনে সীতাকুণ্ড আসতে হবে। “ঢাকা মেইল” ট্রেন সীতাকুণ্ডে থামে, অন্যান্য ট্রেন গুলো শুধুমাত্র শিবর্তুদর্শী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থাকে। ঢাকা মেইল ট্রেন ঢাকা থেকে রাত ১১ টায় ছাড়ে এবং সকাল ৬ টায় সীতাকুণ্ড পৌঁছায়। ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। ঢাকা মেইল ট্রেনে অগ্রিম টিকেট বুকিং করা ভালো।

এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গামী যেকোনো অন্তঃনগর ট্রেনে ফেনী রেল স্টেশনে নামতে হবে। সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে ১,০৩৫ টাকা পর্যন্ত। ফেনী রেল স্টেশন থেকে অটোরিকশাতে ২০-২৫ টাকা ভাড়া দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস টার্মিনাল যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে ৭০-৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে সীতাকুণ্ড বাজার আসতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড: চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে সরাসরি সীতাকুণ্ড আসতে ভাড়া লাগবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বাসে আসতে হলে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার বা এ কে খান মোড় থেকে বাসে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে সীতাকুণ্ড বাজার আসতে পারবেন। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুণ্ড থাকার জন্য মিডিয়ায় মানের কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এইসব হোটেল গুলো হল সৌদিয়া, নিউ সৌদিয়া, জলসা, হোটেল কম্পোট জোন, সায়মন উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া এসি ১০০০ টাকা এবং নন এসি ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। সৌদিয়া হোটেল বুকিং করতে যোগাযোগ 01991-787979, 01816-518119 নাম্বারে।

এছাড়া টেলি-কমিউনিকেশন এর নিকটে থাকার জন্য একটি ডাকবাংলো আছে। সেখানে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন।

ভালো থাকার জন্য চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে মোটামুটি মানের হোটেলে রয়েছে। সেখানে থাকতে রুম ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া নিউমার্কেট, স্টেশন রোড়, জিইসি মোড়ের আশেপাশে আবাসিক হোটেল আছে, সেখানে রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থাকার জন্য কয়েকটি বাজেট হোটেলের নাম ঠিকানা নিচে উল্লেখ করা হল।

হোটেল সাফিনা: পারিবারিক পরিবেশ থাকার জন্য মাঝারি মানের হোটেল। হোটেলের ছাদের উপর খাওয়ার জন্য রেস্তরাঁ আছে। ঠিকানা: এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম। রুম ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্যে। যোগাযোগ: 031-0614004

হোটেল ল্যান্ডমার্ক: আগ্রাবাদে থাকার জন্য ভালো একটি হোটেল। ঠিকানা: ৩০৭২ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। রুম ভাড়া ২,৩০০ টাকা থেকে ৩,৪০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01731-886997

হোটেল নাবা ইন: যাদের বাজেট বেশি তারা এই হোটেলে সুন্দর পরিবেশে থাকতে পারবেন। ঠিকানা: রোড় ৫, প্লট-৬০, ও আর নিজাম রোড়, চট্টগ্রাম। রুম ভাড়া ২,৫০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা। যোগাযোগ: 01755-564382

হোটেল প্যারামাউন্ট: মিডিয়াম বাজেটে থাকার জন্য আদর্শ জায়গা। ঠিকানা: স্টেশন রোড়, চট্টগ্রাম। নতুন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীত পাশে। রুম ভাড়া এসি ১,৪০০-১,৮০০ টাকা এবং নন এসি ৮০০-১,৩০০ টাকা। যোগাযোগ: 0171-3248754

হোটেল এশিয়ান: ছিমছাম পরিবেশে থাকার জন্য সুন্দর একটি হোটেল। ঠিকানা: এসআর, স্টেশন রোড়, চট্টগ্রাম। রুম ভাড়া এসি ১,৭২৫ টাকা এবং নন এসি ১,০০০ টাকা। যোগাযোগ: 01711-889555

কোথায় খাবেন

সীতাকুণ্ড বাজারে খাবার জন্য মাঝামাঝি মানের কয়েকটি হোটেল রয়েছে। এই হোটেল গুলোর মধ্যে আপন রেস্টুরেন্ট, সৌদিয়া রেস্টুরেন্ট এবং আল-আমিন রেস্টুরেন্ট উল্লেখ্যযোগ্য। আমার জানা মতে আল-আমিন রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য সুনাম আছে।

ভালো মানের খাবার খেতে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে সেখানে থাকা উন্নত রেস্টুরেন্ট গুলোতে খেতে পারবেন। খাবার আগে অবশ্যই খাবারের দাম জেনে নিবেন।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে সতর্কতা অবলম্বন

  • চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার সময় বাঁশের কাঞ্চি নিয়ে উঠবেন। কাঞ্চি ভাড়া ৪০ টাকা, কাঞ্চি ফেতর দিলে ২০ ফেরত পাবেন।
  • ভারী ব্যাগ বা জিনিসপত্র নিয়ে পাহাড়ে উঠবেন না। সেখান থেকে কাঞ্চি নিলেন সেখানে লকারে টাকার বিনিময়ে ব্যাগ রাখতে পারবেন।
  • পাহাড়ে উঠার সময় ধীরে ধীরে সাবধানে উঠবেন। কষ্ট হলে বিশ্রাম নেওয়ার স্থান আছে সেখানে বিশ্রাম নিয়ে আবার চলা শুরু করবেন। 
  • খাবার পানি ও শুকনো খাবার সাথে রাখবেন। পাহাড়ে উঠার সময় দোকান পাবেন কিন্তু দাম বেশি নিবে।
  • বর্ষার সময় পাহাড়ে না উঠাই ভালো। তাছাড়া শীতের খুব সকলে কুয়াশা থাকায় পাহাড়ে উঠবেন না।
আরো জানুন-

প্রশ্ন উত্তর (FAQ)

চন্দ্রনাথ পাহাড় কোথায় অবস্থিত?

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সীতাকুণ্ড উপজেলায় চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত। এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান এবং ভ্রমণের জন্য দর্শনীয় স্থান।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা?

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা আনুমানিক ১০২০ ফুট বা ৩১০ মিটার। যা চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় বা স্থান।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে কত সময় লাগে?

হেঁটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। পাহাড়ি রাস্তা ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয়। তবে নামতে ২৫-৩০ মিনিট সময় লাগে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সিঁড়ি সংখ্যা কত?

স্থানীয় মানুষের তথ্য অনুযায়ী এখানে প্রায় ৩,৫০০ টি সিঁড়ির ধাপ রয়েছে।

চন্দ্রনাথ পাহাড় কত কিলোমিটার?

সীতাকুণ্ড বাজার থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় ৪ কিলোমিটার। বাজার থেকে সিএনজি ভাড়া মাত্র ২০ টাকা। বন্ধুদের সাথে পায়ে হেঁটেও যেতে পারবেন।

Similar Posts