ঝরঝরি ঝর্ণা ও ট্রেইল ভ্রমণ, সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম
ঝরঝরি ঝর্ণা ও ট্রেইল চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার পান্থছিলা এলাকায় অবস্থিত। এই ঝর্ণাটি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের খুব কাছে অবস্থিত। ঝর্ণাটি আকারে বেশি বড় নয়।
ঝর্নার পাশ দিয়ে উপরে উঠলে বেশ কয়েকটি ক্যাসকেড দেখতে পাবেন। এর মধ্যে স্বর্গের সিঁড়ি নামে একটা ক্যাসকেড রয়েছে যেটা দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। এটি দেখতে খাঁজকাটা সিঁড়ির মতো।
ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইলের শেষ মাথায় মূতি ঝর্ণা নামে আর একটি ক্যাসকেড রয়েছে। এই ট্রেইল খুব একটা কঠিন না। কারণ এখানে অনেক ছোট বাচ্চাদের তাদের পিতা-মাতার সাথে যেতে দেখেছি। ঝরঝরি ট্রেইলের প্রতিটি বাকে বাকে অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
ঝরঝরি ঝর্ণা কিভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল বাস স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী হানিফ, এস আলম, সোহাগ, ঈগল, ইউনিক, শ্যামলী পরিবহন সহ যেকোনো পরিবহনে করে সীতাকুণ্ড বাজার নেমে যাবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,২০০ টাকা। বাসে সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন আপনাকে সীতাকুণ্ড বাজার নামিয়ে দিবে।
ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনে ফেনী রেলস্টেশন নেমে যাবেন। সিট ভেদে ভাড়া ২৬৫ থেকে ৯০৯ টাকা। ফেনী রেলস্টেশন থেকে সিএনজি করে ২৫ টাকা ভাড়া দিয়ে মহিপাল বাস স্টেশন যাবেন। সেখানে থেকে বাসে সীতাকুণ্ড বাজার যাবেন।
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে লেগুনা বা সিএনজি করে পান্থছিলা বাজার নেমে যাবেন। আসতে সময় লাগবে ১০-১৫ মিনিট। ভাড়া লাগবে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
পান্থছিলা বাজার থেকে ঝরঝরি ঝর্ণা যাওয়ার উপায়
পান্থছিলা বাজার থেকে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে রেললাইন পেয়ে যাবেন। রেললাইন ধরে বাম দিকে ৪-৫ মিনিট হেঁটে ডান দিকে মাটির রাস্তা পাবেন। এই পথ ধরে সামনে এগিয়ে গিয়ে কানি ঝিরিপথ দেখতে পাবেন।
কানি ঝিরিপথ দিয়ে প্রায় ৩০ মিনিটের পথ হাঁটলে বাম পাশে আরো একটি ঝিরিপথ দেখতে পাবেন। এই পথ দিয়ে ৫-১০ মিনিট হাঁটার পর একটি পাহাড় অতিক্রম করে ডান দিকে এগিয়ে গিয়ে উপরে তাকালে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির দেখতে পাবেন।
এই ঝিরি পথ ধরে ২০ মিনিট হাঁটলে ঝরঝরি ঝর্ণায় পৌঁছে যাবেন। এই ঝরঝরি ঝর্ণা থেকে আরো সামনের দিকে ২০ মিনিট হেঁটে গেলে মূতি ঝর্ণা দেখতে পাবেন।
ঝরঝরি ট্রেইল সম্পূর্ণ শেষ করতে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগবে। আপনি যদি ট্রেইলে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে পন্থিছিলা বাজার থেকে স্থানীয় কাউকে গাইড নিতে পারেন। গাইড খরচ ৩০০-৪০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
ঝর্ণার আশেপাশে খাবার হোটেল নেই। গাইডের সাথে কথা বলে স্থানীয় মানুষের বাড়িতে খাবার ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া সীতাকুণ্ড বাজার খাবার জন্য মোটামুটি মানের কয়েকটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেল সৌদিয়া, হোটেল আল-আমিন ও আপন রেস্তোরাঁ। এখানে খাবার মেন্যু হলো সাদা ভাত, মাংস, মাছ, ডাল, সবজি, ভর্তা, ডিম ভাজি ইত্যাদি।
কোথায় থাকবেন
পন্থিছিলা বাজারে থাকার জন্য কোনো হোটেল নেই। থাকার জন্য সীতাকুণ্ড বাজার মোটামুটি মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল সাইমুন, রুম ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা। যোগাযোগ মোবাইল নাম্বার 01825-128767, 01827-334082.
হোটেল সৌদিয়া, রুম ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৬০০ টাকা। যোগাযোগ মোবাইল নাম্বার 01991-787979, 01816-518119। এছাড়া সীতাকুণ্ড ডাকবাংলোতে অনুমতি নিয়ে কম খরচে থাকতে পারবেন।
সতর্কতা
- ঝরঝরি ট্রেইলে শুকনো খাবার সাথে নিয়ে যাবেন।
- শক্ত ও গ্রীপের জুতা বা ট্রেকিং সু ব্যবহার করুন।
- মোটামুটি লম্বা বাঁশের লাটি ব্যবহার করুন, নিজের ব্যালেন্স ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
- সাঁতার না জানলে খুমে নামবেন না প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিবেন।
- দুর্গম পাহাড়ি পথ চলতে ভুল হতে পারে তাই গাইড নেওয়া ভালো।
- ঝিরিপথে জোঁকের উপদ্রব খুব বেশি তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- ঝর্ণায় ময়লা আবর্জনা (পানির বোতল, বিস্কুটের প্যাকেট) ফেলবেন না।
- সাথে প্রয়োজনীয় ঔষধ, গামছা, মাথার ক্যাপ, পানির বোতল নিয়ে যাবেন।
- স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
সীতাকুণ্ডের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
ঝরঝরি ঝর্ণা ও ট্রেইল ছাড়াও সীতাকুণ্ডের আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ মন্দির, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, রুপসী ঝর্ণা, সোনাইছড়ি ট্রেইল, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, ছাগলকান্দা ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, সহস্রধারা ঝর্ণা ২, সুপ্তধারা জলপ্রপাত উল্লেখ্যযোগ্য।