ডিসি পার্ক চট্টগ্রাম (DC Park Chittagong): ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদার হাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কাছে একটি সরকারি জমি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন।
এর ১ মাস পর সেখানে বিশাল একটি ফুলের বাগান তৈরি করার পরিকল্পনা করেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসাকের উদ্যোগে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যায় করে দুবাইয়ের মিরাকেল গার্ডেন এর মতো তৈরি করেন এক ফুলের সাম্রাজ্য।
১৯৪ একর খাস জমির উপর গড়ে তোলা ডিসি পার্কে ১২৭ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ডিসি পার্ক এ ফুল উৎসব আয়োজন করা হয়।
এবছর ডিসি পার্কে ফুলের উৎসব দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রায় ৫০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। প্রতিদিনই এই পার্কে চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে।
কয়েক মাস আগে যেস্থান ছিলো অবৈধ স্থাপনা এখন সেখানে নানা ধরনের ফুল, পাখিদের কলকাকলি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এই ফ্লাওয়ার পার্কে বিকালে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে এই পার্কের আকার ও ফুলের সংখ্যার দিক থেকে ডিসি পার্ক চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান। এখানে ১২৭ প্রজাতির ১ লাখের বেশি ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হবে।
ডিসি পার্কের বিশেষ আকর্ষণ
মাসব্যাপী ফুল উৎস: ডিসি পার্কে প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মাসব্যাপী ফুলের মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই ফুল উৎসবে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ঢল নামে।
নৌকা প্রদর্শনী: ডিসি পার্কে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা প্রদর্শনী দেখতে পাবেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের ক্লোন করা বেশ কিছু নৌকা দেখতে পাবেন। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক সমাজের নৌকা গুলো এখানে প্রদর্শনী করা হয়েছে।
নৌকা ভ্রমণ ও কায়াকিং: ডিসি পার্কের লেকে নৌকা ভ্রমণ ও কায়াকিং করতে পারবেন। নৌকা ও কায়াকিং করার জন্য আপনাকে (জনপ্রতি) ৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হবে। ১৫ মিনিট আপনি নৌকা ও কায়াকিং ভ্রমণ করতে পারবেন।
সানসেট ভিউ পয়েন্ট: ডিসি পার্কে সন্ধ্যার পর সানসেট ভিউ পয়েন্টে অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। চারিদিকে রংবেরঙের আলো দেখতে পাবেন।
সেলফি কর্ণার: ডিসি পার্কে দর্শনার্থীদের ছবি তোলার জন্য কালারফুল একটি সেলফি কর্ণার আছে। যারা ছবি তুলতে পছন্দ করেন তারা এখানে বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলতে পারবেন। সত্যিই এই স্থানটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
কিডস জোন: ডিসি পার্কে বাচ্চাদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য কিডস জোন আছে। এখানে বিভিন্ন বিভিন্ন রকমের খেলনা ব্যবস্থা করা আছে। সেখানে বাচ্চারা আনন্দ করতে পারবেন।
মাছ ধরার ব্যবস্থা: ডিসি পার্কে মাছ ধরার জন্য বিশাল আয়তনের লেক আছে। যারা বরশি দিয়ে মাছ ধরতে ভালোবাসেন তারা এখানে টিকেটের বিনিময়ে মাছ মাছ ধরতে পারবেন।
ফুলের বাগান: ডিসি পার্কের যে দিকে চোখ যাবে সেখানে ফুলের বাগান দেখতে পাবেন। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান। এখানে ১২৭ প্রজাতির কয়েক হাজার ফুলের গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটি ফুলের নাম লেখা আছে, এতে সহজে কোনটা কি ফুল জানতে পারবেন।
ডিসি পার্কে কি কি ফুল দেখতে পাবেন
ডিসি পার্ক চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান। এখানে ১২৭ প্রজাতির দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার ফুল গাছ দেখতে পাবেন। চারিদিকে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের সমারোহ।
শিউলি, ডালিয়া, হাসনাহেনা, চন্দ্রমল্লিকা, অপরাজিতা, ম্যাগনোলিয়া, চেরি, ইউলো, উইস্টেরিয়া,জারবেরা। আরো আছে হাইব্রিড জবা, চিলিজবা, কনকাম্বরী, শিমুল, পলাশ, বকুল, কৃষ্ণচড়া, ধানলিলি, করবী, নীলকন্ঠ, গন্ধরাজ, রেইনলিলি, কাঠমল্লিকা, লিলিয়াম, বাসন্তী, ইনকা মেরী গোল্ড, জিনিয়া, বেলী, কামিনী, দোলনচাঁপা, মাধবীলতা সহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুল।
এছাড়া আছে শীতপ্রধান নেদারল্যান্ড সহ আরো বিভিন্ন দেশের টিউলিপও, টিউলিপ ফুল। যা পর্যটকদের বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করে।
ডিসি পার্ক চট্টগ্রাম সময়সূচী ও প্রবেশ মূল্য
ডিসি পার্ক সপ্তাহে ৬ দিন (শুক্রবার, শনিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার) সকাল ৯ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুধুমাত্র রবিবার ডিসি পার্ক বন্ধ থাকে।
ডিসি পার্ক এ দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা প্রতিজন। অনলাইনে টিকেট কেনার সিস্টেম এখনো চালু হয়নি। আশাকরি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হবে।
ডিসি পার্ক চট্টগ্রাম লোকেশন কোথায়
ডিসি পার্ক চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এর পাশে বন্দর টোল রোড়ে অবস্থিত। ঠিকানা: পোর্ট কন্টাক্টিং রোড, সলিমপুর ৪৩১৭। গুগল ম্যাপে লোকেশন দেখুন।
ডিসি পার্ক চট্টগ্রাম কিভাবে যাবো
দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদার হাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এর পাশে বন্দর টোল রোড়ে ডিসি পার্ক চট্টগ্রাম অবস্থিত। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদার হাট লিংক রোড়ে নেমে ২০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে ডিসি পার্কে যেতে পারবেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে যেকোনো গাড়িতে চড়ে রোজদার হাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কাছে বন্দর টোল রোড়ে নেমে ডিসি পার্কে যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
চট্টগ্রাম ডিসি পার্কের ভিরতে খাবার জন্য ফুচকা, চটপটি, বিরানি, তেহারি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের খাবার পাবেন। তবে এখানে তুলনামূলক বাহিরের থেকে দাম বেশি। তাই আপনারা বাহিরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
থাকার জন্য চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম শহর, সেখানে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল এবং খাবার জন্য রেস্টুরেন্টে পেয়ে যাবেন।