তারুয়া সমুদ্র সৈকত, ভোলা

তারুয়া সমুদ্র সৈকত (Tarua Sea Beach) বাংলাদেশের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণে অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের একপাশে বঙ্গোপসাগর এবং অন্য পাশে বিস্তৃত চারভূমি ও ম্যানগ্রোভ বন।

প্রায় ৪০ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠে এই ঢালচর এলাকা। স্থানীয় জেলেরা এখানে মাছ ধরতে আসতো এবং শতশত তারুয়া নামের মাছ ধরা পড়তো জালে। ধারণা করা হয় এই তারুয়া মাছের নাম অনুসারে এই সৈকতের নামকরণ করা হয়।

সৈকত সংলগ্ন ম্যানগ্রোভ বনে হরিণ, বুনো মহিষ, বানর, লাল কাঁকড়া সহ নানা ধরনের জীব জন্তু ও পাখির দেখা পাবেন। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে এই দ্বীপকে। যারা ছবি তুলতে পছন্দ করেন তাদের জন্য আদর্শ স্থান। যারা ক্যাম্পিং করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই দ্বীপ আদর্শ স্থান। এখানে নিরাপদে ক্যাম্পিং করতে পারবেন।

তারুয়া সৈকতে আসা পর্যটকেরা একই সাথে উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের বিশাল জলরাশি, সাগরের উত্তাল গর্জন, বালুময় মরুপথ, ছায়াঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, নানা ধরনের পাখিদের কল-কাকলি ও বৈচিত্র্যময় প্রাণী।

BM Khalid Hasan Sujon

তারুয়া সমুদ্র সৈকতে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি ল্যান্ডিং ষ্টেশন বানানো হয়েছে। যেখানে লঞ্চ ও ট্রলার গুলো ভীড়াতে পারে।

তারুয়া সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাব ও খরচ কত

ঢাকার সদরঘাট থেকে তাশরিফ ৩ ও ৪ বা ফারহান ৫ ও ৬ প্রতিদিন রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে ও সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে বেতুয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ডেকের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

বেতুয়া সকালে নেমে নাস্তা করে জনপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজি করে চর কচ্ছপিয়া যেতে হবে। মোটরসাইকেলে ২ জন যেতে ভাড়া লাগবে ২০০-২৫০ টাকা।

BM Khalid Hasan Sujon

চর কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলারে করে চর কুকরি মুকরি যেতে হবে, ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। সকাল ১১:৪৫ এর মধ্যে কচ্ছপিয়া ট্রলার ঘাটে পৌঁছাতে হবে। চর কুকরি মুকরি থেকে খুব সহজে ট্রলারে করে তারুয়া যেতে পারবেন।

এছাড়া চর ফ্যাশন বাজার থেকে কচ্ছপিয়া ঘাট পর্যন্ত বাস বা সিএনজি করে যেতে পারবেন। সময় লাগবে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। এরপর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে তারুয়া যেতে পারবেন। ট্রলার ভাড়া ৩,৫০০-৪,৫০০ টাকা, যেতে সময় লাগবে আড়াই ঘন্টা।

আবার কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল ৩ টায় একটি লঞ্চ তারুয়া উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লঞ্চে জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

তারুয়া থাকার জন্য কোনো হোটেল নেই। তবে এখানকার মানুষেরা খুবই অতিথিপরায়ণ। থাকার জন্য এখানকার স্থানীয় কোনো পরিবারের সাথে কথা বলে থাকতে পারেন।

BM Khalid Hasan Sujon

এছাড়া কুকরি মুকরি ইউনিয়ন পরিষদের একটি গেস্ট হাউজ রয়েছে, অনুমতি নিয়ে সেখানে থাকতে পারেন। 

তারুয়া সৈকত দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত ঘাস এর সবুজ মাঠ। তাই এখানে ক্যাম্পিং করার আদর্শ স্থান। আপনি যদি ক্যাম্পিং করতে ভালোবাসেন তাহলে এখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন।

খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা

এখানে খাবার জন্য ভালো মানের খাবার হোটেল নেই। তবে মন ভরে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারবেন। এর মধ্যে রূপালী ইলিশ, গলদা চিংড়ি, ডাব, কাঁকড়া ও খেজুরের সর খেতে পারবেন।

এখানে মহিষের দুধের ছানা একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এছাড়া পাবেন মহিষের দুধের দই ও রসগোল্লা। যেকোনো স্থানে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিবেন অবশ্যই।

আরো পড়ুন