alternatetext
দামতুয়া ঝর্ণা

দামতুয়া ঝর্ণা, আলীকদম, বান্দরবান

দামতুয়া ঝর্ণা (Damtua Waterfall) বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার মুরং এলাকায় অবস্থিত। এই ঝর্ণাটি বেশ কিছু নামে পরিচিত। তার মধ্যে ডামতুয়া ঝর্ণা, তুক আ ঝর্ণা ও লামোনই ঝর্ণা নাম উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে বান্দরবান জেলায় যে কয়টি ঝর্ণা রয়েছে তার মধ্যে আকার আকৃতি ও সৌন্দর্যের দিক থেকে অন্যতম সুন্দর একটি ঝর্ণা। ঝর্ণায় যাওয়ার পথ দুর্গম হওয়ায় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে এটি আকর্ষণীয় স্থান।

দামতুয়া ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার পথে তুক অ ঝিরি ঝর্ণা, ওয়াংপা ঝর্ণা সহ আরো বেশ কিছু সুন্দর ক্যাসকেড দেখতে পাবেন। এখানে যাওয়ার জন্য প্রায় ১২-১৩ কিলোমিটার পাহাড়ী পথ হাঁটতে হবে। যা বয়স্ক শিশুদের জন্য সহজ নয়।

দামতুয়া বা ডামতুয়া ঝর্ণাটি মুরং এলাকায় অবস্থিত। এই ঝর্ণাটি যে ঝিরিতে অবস্থিত তাকে তুক অ বলে। এখানে “তুক” অর্থ ব্যাঙ আর “অ” অর্থ ঝিরি। অর্থাৎ তুক অ অর্থ ব্যাঙ ঝিরি।

BM Khalid Hasan Sujon

দামতুয়া অর্থ খাড়া দেওয়া যা বেয়ে ব্যাঙ উপরে উঠতে পারে না। ওয়াঞ্জপারাগ অর্থ উঁচু স্থান থেকে পানি গড়িয়ে পড়া। তাই ঝর্ণাটিকে তুক অ, ডামতুয়া ও ওয়াঞ্জপারাগ নামে ডাকা হয়।

এই ঝর্ণায় দুই দিক থেকে পানি পড়ার কারণে ঝর্ণা সহ খেলা জায়গায় চাঁদের আলোতে অন্য রকমের সুন্দর লাগে। যে কারণে স্থানীয়রা মুরং ভাষায় “লামোনই ঝর্ণা” বলে। লামো অর্থ চাঁদ আর নই অর্থ আলো। অর্থাৎ লামোনই অর্থ চাঁদের আলো।

দামতুয়া ঝর্ণা যাওয়ার উপযুক্ত সময়

বছরের যে কোন সময় ঝর্ণা দেখতে যেতে পারবেন। বর্ষার সময় বা বর্ষা সিজনের পরে ঝর্ণায় বেশি পানি থাকে। তাই সেই সময় ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে ঝর্ণায় যাওয়ার পাহাড়ি পথ অনেক কঠিন হয়ে যায়।

BM Khalid Hasan Sujon

কিভাবে যাবেন

দামতুয়া ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে আলীকদম এসে আলীকদম পান বাজার থেকে বাইকে চড়ে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টের আদুপাড়া আসতে হবে। ১ টি বাইকে ২ জন আসতে পারবেন, জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ২৫০ টাকা (ভাড়া দামাদামি করে নিবেন)।

আপনারা পর্যটকের সংখ্যা বেশি হলে আলীকদম থেকে চান্দের গাড়ি বা জীপ গাড়ি ভাড়া করে নিবেন। আলীকদম থেকে যাওয়ার পথে ১০ কিলোমিটার দূরে আর্মি ক্যাম্প। সেখানে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ফোন নাম্বার দিয়ে এন্টি করে যাবার জন্য অনুমতি নিতে হবে। আবার বিকাল ৫ টার আগে আর্মি ক্যাম্পে ফিরে এসে রিপোর্ট করতে হবে।

আদুপাড়া গ্রাম থেকে আপনার ট্রেকিং শুরু হবে। ট্রেকিং শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহ দুপুরে খাবার সাথে নিবেন। ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আবশ্যক আপনাকে গাইড নিতে হবে। গাইড ফি ১০০০ টাকা (দামাদামি করে নিবেন) এবং দামতুয়া ঝর্ণার পাশাপাশি বেশ কিছু ঝিরি ও ঝর্ণা রয়েছে সেগুলো দেখে আসার ব্যাপারে আলাপ করবেন।

ঢাকা থেকে আলীকদম

BM Khalid Hasan Sujon

ঢাকা বাসে আলীকদম আসার জন্য ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ ও শ্যামলি পরিবহন সরাসরি আলীকদম চলাচল করে। এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকা।

এছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যেকোনে পরিবহনে চকরিয়া যেতে পারবেন। এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৯৫০ টাকা থেকে ২,২০০ টাকা। সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন চকরিয়া বাজারে নামিয়ে দিতে।

চকরিয়া বাজারে নেমে নতুন বাস স্টেশন থেকে আলীকদম যাওয়ার জন্য লোকাল বাস পাবেন। আপনারা পর্যটক সংখ্যা বেশি হলে এবং দ্রুত যেতে চাইলে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ ভাড়া করে আলীকদম যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

আলীকদম থেকে ১ দিনে ঝর্ণা দেখে আবার আলীকদম ফিরে আসতে পারবেন। তাছাড়া আর্মি ক্যাম্প থেকে দামতুয়া থাকার অনুমতি দেয় না। আলীকদম থাকার জন্য তেমন ভালো কেনো হোটেল নেই। তাই সবচেয়ে ভালো হয় সারাদিন আলীকদম ঘুরে সন্ধ্যায় ঢাকায় বাসে ফিরে আসা।

আর যারা একান্তই থাকতে চাচ্ছেন তারা আলীকদম গেস্ট হাউজ, হোটেল আলীকদম ও হোটেল দামতুয়া এ থাকতে পারবেন। রুম ভেদে ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। রুম দেখে পছন্দ হলে দামাদামি করে রুম ভাড়া নিবেন।

এছাড়া আলীকদম উপজেলা সড়কে অবস্থিত “দ্যা দামতুয়া ইন” নতুন হোটেলে থাকতে পারেন। যোগাযোগ করুন ০১৭৪৮ ৯১২১২৭ মোবাইল নাম্বারে।

কোথায় খাবেন

আলীকদম উপজেলা শহরে বা আলীকদমের পান বাজারে খাবার জন্য বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল আছে। সেখান থেকে কম খরচে দেশি খাবার (সাদা ভাত, ডাল, মুরগির মাংস, সবজি, মাছ) খেতে পারবেন।

এছাড়া ট্রেকিং করার জন্য সাথে শুকনো খাবার যেমন বিস্কুট, চকলেট, কলা, খাবার ইত্যাদি সাথে নিয়ে যাবেন। আদুপাড়া থেকে ট্রেকিং করে ঝর্ণায় যাওয়ার পথে কয়েকটা টং দোকান পাবেন সেখান থেকে হালকা কিছু খেতে পারবেন।

ঝর্ণায় যাওয়ার গাইড

ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আদুপাড়ায় গাইড সমিতি আছে। আপনার টিম মেম্বার যাই থাকুক না কেন গাইড ভাড়া ১০০০ টাকা দিতে হবে। নেদুইা দা (গাইড), যোগাযোগ করুন ০১৫৫৭ ৩৯৮৬৩৫ নাম্বারে।

ঝর্ণা ভ্রমণ টিপস ও পরামর্শ

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সাথে রাখুন।
  • যে কোনো ভাড়ার জন্য অবশ্যই দামাদামি করুন।
  • ঝর্ণার যাওয়ার পথ দুর্গম তাই ট্রেকিং করার জন্য গ্রীপের জুতা ব্যবহার করুন এবং সাবধানে হাঁটবেন।
  • ট্রেকিং করার সময় হালকা ওজনের ব্যাগ ক্যারিং করুন।
  • খাবার জন্য শুকনো খাবার, পানি, স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ঔষুধ সাথে নিবেন।
  • পথে জোঁক আছে তাই লম্বা মোজা পড়ে নিবেন।
  • পাহাড়ি ও ঝিরি পথে সাবধানে হাঁটবেন।
  • বয়স্ক ও শিশুদের না আনায় ভালো।
  • আদিবাসীদের সাথে ভালো আচারন করুন।
  • ঝর্ণার ময়লা ফেলবেন না এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করুন।

আরো পড়ুন

Similar Posts