নলতা শরীফ, কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা

বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নলতা গ্রামে নলতা শরীফ (Nalta sharif) বা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ সমাধি কমপ্লেক্স অবস্থিত। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সংস্কারক ও সমাজহিতৈষী খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ ১৮৭৩ সালে নলতা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার বিশেষ অবদান ছিলো। আউলিয়া হিসাবে তিনি ছিলেন সমাদৃত। ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ মৃত্যুবরন করার পর নলতা গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর সমাধিস্থলকে কেন্দ্র করে বর্তমানে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ কমপ্লেক্স বা নলতা শরীফ গড়ে উঠেছে।

প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর গড়ে ওঠা কমপ্লেক্সেে মাজার, মসজিদ, পুকুর, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, অফিস, অতিথিশালা ও খেলার মাঠ রয়েছে। প্রায় ৪ বিঘা জায়গায় উপর উঁচু ঢিবির উপর সমাধি সৌধ, যার চারপাশে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান।

সমাধি সৌধে উঠার জন্য দক্ষিণ পাশের প্রশস্ত সহ আকর্ষণীয় ৩ টি সিঁড়ি রয়েছে। সমাধি সৌধে ১ টি কেন্দ্রীয় গম্বুজ সহ মোট ৯ টি গম্বুজ রয়েছে। কেন্দ্রীয় গম্বুজটি বেশ বড় ও আকর্ষণীয়।

BM Khalid Hasan Sujon

নলতা শরীফে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ ও তার পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে গড়ে তোলা হয়েছে একটি জাদুঘর। এছাড়া এখানে নির্মানাধীন রয়েছে বিশাল ধারণ ক্ষমতার একটি আধুনিক মসজিদ।

খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ এর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ৮, ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সম্পূর্ণ কমপ্লেক্স আকর্ষণীয় ডেকোরেশন করা হয়। মাহফিল সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। মাহফিল উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। যেখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়।

১৯৫০ সাল থেকে প্রতি রমজান মাসে বাংলাদেশের বৃহত্তম ইফতার মাহফিল এখানে আয়োজন করা হয়। যেখানে একাত্রে বসে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ইফতার করেন। আশপাশের বহু মানুষ এখানে ইফতার করতে আসেন এবং একসাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।

নলতা শরীফ পরিদর্শনের সময়সূচি

নলতা শরীফ বা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ কমপ্লেক্স  সারা বছর ভক্তদের জন্য খোলা থাকে। জাদুঘরটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

যারা নলতা শরীফ পরিদর্শনে যাবেন তারা মাহফিলের সময় গেলে সুন্দর আকর্ষণীয় ডেকোরেশন, লাইটিং সহ বিশাল মেলা দেখতে পাবেন। ওরস মাহফিলের সময় দর্শনার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী, নবীনগর, সাভার ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস, হানিফ, সোহাগ, শ্যামলী, এম আর, সাতক্ষীরা লাইন, টুঙ্গিপাড়া, ইমাদ, গ্রীন লাইন, কে লাইন, গ্রীন লাইন, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, এ. কে. ট্রাভেল, সৌদিয়া পরিবহনে করে সাতক্ষীরা শহরে আসতে পারবেন। এসি/নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।

সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে কালিগঞ্জগামী যেকোনো বাসে চড়ে নলতা বাজারে নেমে যাবেন। বাসে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৮০ টাকা। নলতা বাজার থেকে ৫ মিনিট হেঁটে গেলে নলতা শরীফ পৌঁছে যাবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

কোথায় থাকবেন

সাতক্ষীরা শহরে থাকার জন্য মাঝামাঝি মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল আল-কাশেম আবাসিক, হোটেল সাতক্ষীরা প্যালেস, হোটেল টাইগার প্লাস, হোটেল সম্রাট প্লাজা, হোটেল সংগ্রাম, হোটেল উত্তরা, হোটেল বৈশাখী উল্লেখ্যযোগ্য।

এছাড়া মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট ও লেক ভিউ ক্যাফে রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। সাতক্ষীরা আবাসিক হোটেল সমূহের বিস্তারিত তথ্য জানুন।

কোথায় খাবেন

সাতক্ষীরা শহরে খাবার জন্য হোটেল সোনারগাঁও, লেক ভিউ ক্যাফে, পানসি রেস্তোরাঁ, স্বপ্ন রেস্তোরাঁ, আব্বাস হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাতক্ষীরার বিখ্যাত সন্দেশ, বাগদা চিংড়ি, সুন্দরবনের খাঁটি মধু অবশ্যই খাবেন।

সাতক্ষীরার আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

নলতা শরীর ছাড়াও আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির, কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক সুন্দরবন, মোজাফফর গার্ডেন, লেক ভিউ ক্যাফে, নলতা শরীফ, রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র উল্লেখ্যযোগ্য।

হাতে সময় নিয়ে এসব দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখে আসতে পারেন। সাতক্ষীরা গেলে অবশ্যই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন দেখে আসবেন।

আরো পড়ুন