বাংলাদেশে চা বাগানের কথা বললে প্রথমে মনে পড়ে সিলেটের শ্রীমঙ্গলের কথা। কিন্তু সমতল ভূমিতে যে চায়ের চাষ করা সম্ভব সেটা পঞ্চগড় চা বাগান (Panchagarh tea garden) এর দিকে তাকালে বোঝা যায়। ১৯৯৮ সালে পঞ্চগড়ে প্রথম চা চাষ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর পঞ্চগড় দেশের তৃতীয় বৃহত্তর চা অঞ্চল হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে। এক সময় এখানে পতিত সমতল ভূমিতে গো-চারণ করা হত। সেই সমতল ভূমিতে এখন চায়ের চাষ করা হয়। যেদিকে চোখ যায় শুধু চা বাগান আর চা বাগান।
২০০৬ সালে পঞ্চগড়ে চা আবাদি জমির পরিমান ছিল ৯২৫ একর, যা বর্তমানে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ হাজার ৭৯ একর। এখান থেকে বছরে প্রায় ৯ কোটি কেজির বেশি সবুজ চা পাতা উৎপাদন হচ্ছে এবং চা উৎপাদন হচ্ছে প্রায় পৌনে ২ কোটি কেজির বেশি।
পঞ্চগড় জেলায় বর্তমানে মোট ৯ টি বড় চা বাগান ও ৮ হাজার ৩৫৫ টি ছোট চা বাগান রয়েছে। বর্তমানে এই শিল্পের সাথে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সংযুক্ত রয়েছে। চা শিল্প থেকে বছরে গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা, যা দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়।
পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে সড়ক পথে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। সড়কের দুপাশে যতদূর চোখ যায় শুরু সবুজ চা বাগান দেখতে পাবেন।
দেশের একমাত্র অর্গানিক পদ্ধতিতে চা চাষ করা হয় পঞ্চগড়ের কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া এখানে আরো অনেক চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো মধ্যে ডাহুক টি এস্টেট এন্ড রিসোর্ট, স্যালিলেন টি এস্টেট ও তেতুলিয়া চা করপোরেশন লিমিটেড উল্লেখযোগ্য।
পঞ্চগড় চা বাগান কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় চা বাগান যাওয়ার জন্য প্রথমে পঞ্চগড় জেলা শহর যেতে হবে। সেখান থেকে বাসে তেতুলিয়া গিয়ে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট, ডাহুক টি এস্টেট, স্যালিলেন টি এস্টেট ও তেতুলিয়া চা করপোরেশন লিমিটেড এর বড় বড় চা বাগান গুলো দেখে আসতে পারেন। এছাড়া ছোট ছোট অনেক চা বাগান রয়েছে সেগুলো ও দেখে আসতে পারেন।
ঢাকা থেকে পঞ্চগড়
বাসে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যাওয়ার জন্য ঢাকার মিরপুর, গাবতলী ও শ্যামলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, বরকত ট্রাভেল, তানযিলা ট্রাভেল সহ আরো বিভিন্ন পরিবহনে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। এসি নন এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১,১০০ টাকা থেকে ১,৯০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়
ট্রেনে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যাওয়ার জন্য ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ভাড়া শোভান চেয়ার ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ১,৩৩৪ টাকা এবং এসি কেবিন (বার্থ) ২,৩৯৮ টাকা। ট্রেনে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেতে হবে লাগে প্রায় ১০ ঘন্টা ৩০ মিনিট।
বাসে ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়া
বাসে ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস বাসে তেঁতুলিয়া যেতে পারবেন। এসি নন এসি বাস ভেদে ভাড়া ১,১৫০ টাকা থেকে ১,৯০০ টাকা পর্যন্ত। বাসে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় হয়ে তেঁতুলিয়া যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
চা দেখতে গিয়ে থাকার জন্য পঞ্চগড় শহরে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এই হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল মৌচাক, হোটেল প্রীতম, হোটেল এইচকে, হেটেল ইসলাম, হোটেল রাজ নগর উল্লেখযোগ্য। এই হোটেল গুলোতে ৬০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা মধ্যে এসি নন এসি ডাবল বেডরুম পাবেন।
এছাড়া যারা তেতুলিয়া উপজেলা শহরে থাকতে চাচ্ছেন তাদের জন্য তেতুলিয়া শহর ও শহরের আশেপাশে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এই আবাসিক হোটেলে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪,৫০০ টাকা মধ্যে থাকতে পারবেন।
তেতুলিয়া আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে তেতুলিয়া স্কায়ার আবাসিক হোটেল, হোটেল সীমান্তের পাড়, হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘা আবাসিক, দোয়েল আবাসিক হোটেল, আয়াত আবাসিক হোটেল, কাজী ব্রাদার্স আবাসিক উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
পঞ্চগড় চা বাগান দেখতে গিয়ে খাবার জন্য পঞ্চগড় শহরে মোটামুটি মানের অনেক গুলো খাবার হোটেল রয়েছে। এই খাবার হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল হাইওয়ে, হোটেল নিরিবিলি, হোটেল মৌচাক, হোটেল করোটিয়া ও হোটেল হামজার উল্লেখযোগ্য। এই হোটেল গুলোর খাবারের মান অনেক ভালো।
এছাড়া তেতুলিয়া উপজেলা শহর বাস টার্মিনালের পাশে বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল পাবেন। এসব খাবার হোটেল গুলোতে চা-নাস্তা সহ বাঙ্গালী খাবার খেতে পারবেন।
পঞ্চগড়ের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান সমূহ
পঞ্চগড় ভ্রমণে গিয়ে চা বাগান সহ হাতে সময় নিয়ে আশেপাশে দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে আসতে পারেন। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম উল্লেখ করা হল।
- আনন্দধারা রিসোর্ট
- তেতুলিয়া ডাকবাংলো
- বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট
- মির্জাপুর শাহী মসজিদ
- মহারাজার দিঘী
- ডাহুক টি রিসোর্ট
- বারো আউলিয়া মাজার
- রকস মিউজিয়াম
আরো পড়ুন