পানাম নগর – হারিয়ে যাওয়া এক শহর
পানাম নগর বা পানাম সিটি (Panam City) নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। সোনারগাঁও ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই নগরী গড়ে উঠে। যা বাংলাদেশিদের কাছে এক হারানো নগরী হিসাবে পরিচিত।
বড় নগর, খাস নগর ও পানাম নগর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো আকর্ষণীয়। ১৫ শতকে ঈসা খাঁ সোনারগাঁও বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। ২০০৬ সালে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ডের তৈরি বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি স্থাপনার তালিকায় পানাম সিটি স্থান পেয়েছে।
পানাম নগরীর বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণশৈলীতে রয়েছে ভিন্নতার ছাপ। এই নগরীর প্রত্যেকটি দালানকোঠায় রয়েছে অপূর্ব কারুকার্য ও আভিজাত্য ছোঁয়া। এই নগরের টিকে থাকা বাড়ি গুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখ্যযোগ্য। এর মধ্যে পানাম সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। এই বাড়ি গুলো কোনটি এক তলা, কোনটি দুই তলা আবার কোনটি তিন তলা বিশিষ্ট।
সতর্কতা: পানাম সিটির ভবন গুলো অনেক বছর আগের তৈরি এজন্য ভবন গুলো ঝুঁকিপূর্ণ তাই নির্দেশনা অমান্য করে ভবনের উপরে উঠবেন না।
পানাম নগরীর চারদিকে থেকে পঙ্খীরাজ খাল দিয়ে ঘেরা। এই পঙ্খীরাজ খালটি মেনিখালী নদ নামে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। এই নগরীর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা ও পূর্বে মেঘনা নদী অবস্থিত। এই নদী পথ ধরে মসলিন রপ্তানি হত।
নিখুঁত পরিকল্পনা নিয়ে এই নগরী গড়ে তোলা হয়েছিল। নরগীর পানি সরবাহের জন্য দুইপাশে ২টি খাল ও ৫টি পুকুর আছে এবং প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে কুয়া আছে। নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করার জন্য খালের দিকে ঢালু করা।
নগরীর প্রত্যেকটি বাড়ি পরস্পর থেকে সম্মানজনক দূরত্বে তৈরি করা হয়েছে। নগরীতে যাতায়াতের জন্য একটি মাত্র রাস্তা, যা এই নগরীর মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে।
পানাম নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও রয়েছে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, পাঠশালা, মাঠ, গোসলখানা, চিত্রশালা, দরবার কক্ষ, বিচারালয়, গুপ্ত পথ, পুরাতন জাদুঘর, খাজাঞ্চিখানা, নাচঘর ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে ৪০০ বছরের পুরাতন টাঁকশাল বাড়ি।
জানা যায় ১৪০০ শতাব্দীতে এই নগরীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নামি-দামি শিক্ষকগণ পড়াতে আসতেন। এছাড়াও এখানে একটি ভৃত্য বাজার ছিলো।
পানাম নগর কোথায় অবস্থিত
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পানাম নগর অবস্থিত। সোনারগাঁও প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই নগরী বা সিটি গড়ে ওঠে। এখানে কয়েক শতাব্দীর পুরাতন ভবন আছে, যেগুলো বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে পানাম সিটি বা নগরি যাওয়ার জন্য গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, দোয়ার বা বোরাকের এসি বাসে চড়ে ৪০-৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা নেমে যাবেন।
মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি করে ৩০-৩৫ টাকা ভাড়া দিয়ে পানাম নগরীতে যেতে পারবেন।
সময়সূচী ও প্রবেশ টিকেট মূল্য
সপ্তাহের ৭ দিনই পানাম সিটি বা নগরী খোলা থাকে। পানাম সিটি কখনো বন্ধ থাকে না কিন্তু সোনারগাঁও জাদুঘর সপ্তাহের বুধবার ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে।
পানাম সিটিতে প্রবেশ টিকেট মূল্য ১৫ টাকা। আর জাদুঘরের প্রবেশ টিকেট মূল্য ৩০ টাকা।
পানাম সিটিতে আরো যা দেখবেন
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর: পানাম সিটি থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর অবস্থিত। এই জাদুঘরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়া জাদুঘরে ১১টি গ্যালারিতে দুর্লভ ঐতিহ্যের নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।
গোয়ালদি মসজিদ: লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে ২০ টাকা সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ১৫১৯ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে মোল্লা হিজাবর খান নির্মিত গোয়ালদি মসজিদ দেখে আসতে পারেন।
আরো পড়ুন
- বাংলার তাজমহল
- সোনারগাঁও জাদুঘর
- জিন্দা পার্ক
- মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি