পারকি সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম
পারকি সমুদ্র সৈকত (Parki beach) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। স্থানীয় লোকেদের কাছে এই সৈকত পারকি চর নামে পরিচিত।
এই সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং স্থানভেদে প্রস্থ ৩০০ থেকে ৩৫০ ফুট। কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে এই পারকি সমুদ্র সৈকতের অবস্থান।
২০১৩ সাল থেকে বারাসত ইউনিয়ন পরিষদ এই সৈকতকে পর্যটন স্পষ্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে এই সমুদ্র সৈকত পর্যটনদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এখানকার সবুজ ঝাউবন, নীল জলরাশী ও লাল কাঁকড়া ভ্রমণকারীদের সর্বদা স্বাগত জানায়।
একদিকে সবুজ সারি সারি ঝাউবনের সবুজ সমারোহ, অন্যদিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি ও সমুদ্র সৈকতের মৃদু বাতাস আপনার মনকে আনন্দে ভরিয়ে দিবে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো এখানকার ঝাউবনে আপনি প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতে পারবেন।
ভ্রমণকারীদের বিনোদনের জন্য এই সৈকতে রয়েছে সী-বাইক, স্পীড বোড, হর্স রাইডিং সহ আরো অনেক আকর্ষণীয় গেম। এসব উপভোগ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে প্রতি ঘন্টায় নিদিষ্ট ভাড়া গুনতে হবে।
সৈকতে ছাতার নিচে হেলানো চেয়ারে বসে বিস্তৃত সমুদ্র উপভোগ করতে পারবেন। সাথে বিভিন্ন ধরনের জুস, ডাব, ও বিভিন্ন ড্রিংকসের ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
পারকি সমুদ্র সৈকত থেকে উত্তর দিকে হেঁটে গেলে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলি নদীর মোহনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সময়ের সাথে সাথে এই সৈকতের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৈকতকে পর্যটকবান্ধব করে তোলা হচ্ছে এবং যাতায়াত, নিরাপত্তা, হোটেল ও কেনাকাটার জন্য দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে।
পারকি সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপায়
ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে চট্টগ্রাম আসবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন।
চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে প্রথমে পতেঙ্গা ১৫ নাম্বার জেটি ঘাট যেতে হবে। সেখান থেকে বোটে কর্ণফুলি নদী পার হয়ে অন্য পারে যেতে হবে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি করে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে পারকি চর বা সৈকত যেতে পারবেন।
আবার চট্টগ্রাম থেকে বাসে চড়ে আনোয়ারা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাবেন। সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে পারকি সৈকতে যেতে পারবেন। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে প্রাইভেট কার, ক্যাব বা সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে পারকি সৈকতে যেতে পারবেন।
কম খরচে এবং দ্রুত সময় চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতে যেতে চাইলে ১৫ নাম্বার জেটি ঘাট থেকে কর্ণফুলি নদী পার হয়ে সিএনজি করে পারকি সৈকতে যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
পারকি সমুদ্র সৈকতের ঝাউবনে পর্যটকদের খাবার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল গড়ে তুলেছে। এখান থেকে সাদা ভাত, মাংস, মাছ, ভর্তা, ডাউল সহ আরো বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারবেন। এখানে আরো রয়েছে ফুসকা, চটপটি, ঝালমুড়ি সহ নানা ধরনের খাবার।
যারা ভালো মানের রেস্টুরেন্টে খেতে চান তারা চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে বাঙ্গালী, চাইনিজ, থাই ও ফাস্ট ফুট খেতে পারবেন। এছাড়া চট্টগ্রামের বিখ্যাত মেজবানি ও কালা ভুনা খেয়ে দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
বর্তমানে পারকি সমুদ্র সৈকতে প্রচুর পর্যটকদের আগমনের জন্য এখানে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হোটেল গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটার কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে এখানে থাকার জন্য কোনো হোটেল-মোটেল নেই। তাই চট্টগ্রাম থেকে যারা এই সৈকতে ঘুরতে আসবেন তারা সকালে এসে সারাদিন ঘুরে সূর্যস্ত দেখে আবার চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যাবেন।
চট্টগ্রাম শহরের থাকার জন্য অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। নিচে কয়েকটি হোটেলের নাম ঠিকানা উল্লেখ করা হল।
- হোটেল এশিয়ান: চট্টগ্রাম এসআর স্টেশন রোডে অবস্থিত। যোগাযোগ 01711-889555
- হোটেল প্যারামাউন্ট: চট্টগ্রাম নতুন স্টেশনের বিপরীত পাশে অবস্থিত। যোগাযোগ 01713-248754
- হোটেল ল্যান্ডমার্ক: ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম অবস্থিত। যোগাযোগ 01820-141995, 01731-886997
- হোটেল নাবা ইন: রোড ৫, প্লট ৬০, ও.আর নিজাম রোড চট্টগ্রাম। যোগাযোগ 01755-564382
- হোটেল সাফিনা: চট্টগ্রাম এনায়েত বাজারে অবস্থিত। যোগাযোগ 031-0614004
আরো পড়ুন