প্রাচীন বাংলার প্রত্নতাত্ত্বক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী (Puthia rajbari) অন্যতম। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী বেদী দ্বিতল এই রাজবাড়ী নির্মাণ করেন। রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ও নাটোর মহাসড়কের দিকে বাঘা-পুঠিয়া জেলা সড়কের পাশে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ী।
ইন্দো-ইয়োরোপীয় স্থাপত্যে উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত এই রাজবাড়ীটি বর্তমানে লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজা জনৈক নীলাম্বর এখান থেকে তার রাজ কার্য পরিচালনা করতেন। রাজবাড়ীর নিরাপত্তার জন্য চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশেপাশে ছয়টি রাজদিঘী রয়েছে। প্রত্যেকটি রাজ দিঘীর আয়তন ছয় একক করে। এছাড়া ছয়টি মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। এছাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, দোলমঞ্চ মন্দির ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালে পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ।
পুঠিয়া রাজবাড়ী প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতিদিন আশেপাশের বহু পর্যটক রাজবাড়ী দেখতে ভিড় জমায়।
পুঠিয়া রাজবাড়ী যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে রাজশাহী বাস ট্রেন ও বিমানে যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর ও আব্দুল্লাহপুর বাস স্টেশন থেকে একতা, বাবুল, সোহাগ, হানিফ, গ্রীন লাইন, শ্যামলী, দেশ ট্রাভেল সহ রাজশাহীগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে রাজশাহী আসতে পারবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা, বনলতা, ধুমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে রাজশাহী যেতে পারবেন। পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন শুক্রবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন বৃহস্পতিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৬ টায় এবং সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রবিবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ট্রেনের সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ১,৫৪৭ টাকা।
ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে রাজশাহী বিমানবন্দর যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া ৪২,০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা।
রাজশাহী থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ী
রাজশাহী জেলা সদর থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। রাজশাহী বা নাটোর থেকে লোকাল বাসে চড়ে পুঠিয়া বাস স্টেশনে নেমে ৫ মিনিটের পথ হেঁটে গেলে রাজবাড়ী পৌঁছে যাবেন। ভ্রমণের জন্য ব্যাক্তিগত গাড়ি থাকলে রাজশাহী শহরের প্রায় ৩০ কিলোমিটার আগে এই স্থানটি পড়বে।
কোথায় থাকবেন
পুঠিয়া থাকার জন্য জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো রয়েছে। তাদের অনুমতি ও ভাড়া দিয়ে এখানে থাকতে পারেন। যোগাযোগ পুঠিয়া জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইল নাম্বার 01721-776348. পুঠিয়া বাস স্টেশনের পাশে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে সেখানে থাকতে পারেন।
এছাড়া রাজশাহী শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সুকর্ণ আবাসিক, হোটেল হকস, হোটেল আল আরাফাহ, হোটেল এশিয়া, হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল আনজুম উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীতে কম খরচে আবাসিক হোটেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন।
রাজশাহী জেলা সদরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল রয়েছে। এখানে ১,৯০০ টাকা থেকে ৪,৬০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের রুম পাবেন। অগ্রিম বুকিং করুন 0721-775237.
কোথায় খাবেন
পুঠিয়া বাস স্টেশনের আশেপাশে খাবার জন্য হোটেল রয়েছে। সেখান থেকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার খেতে পারেন।
ভালো মানের খাবার খেতে চাইলে রাজশাহী শহরের গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল, রহমানিয়া হোটেল, মাস্টারশেফ হোটেল, কাচ্চি ভাই, নর্থ বার্গ, ক্যালিস্টো, হাংরি হিরোস, হাইডআউট ক্যাফে থেকে খেতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সমূহ
রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী ছাড়াও আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সাফিনা পার্ক এন্ড্র রিসোর্ট, শহীদ জিয়া শিশু পার্ক, বাঘা মসজিদ, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, পদ্মা গার্ডেন রাজশাহী, উৎসব পার্ক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।