পুঠিয়া রাজবাড়ীর যে ছয়টি মন্দির রয়েছে পুঠিয়া শিব মন্দির তার মধ্যে একটি। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতত্ত্বিক নিদর্শন। অনেকের কাছে আবার বড় শিব মন্দির পরিচিত। বর্তমানে এখনো এই শিব মন্দিরে নিয়মিত পূজা হয়।
১৮২৩ সালে গোবিন্দ মন্দির পুঠিয়া রাজপরিবারের তত্ত্বাবধানে রাণী ভুবনময়ী দেবী কর্তৃক এই মন্দির নির্মাণ করেন। রাণী ভুবনময়ী দেবীর নামানুসারে অনেকের কাছে ভুবনেশ্বর মন্দির নামে পরিচিত।
মন্দিরটি ৩৫.০৫ মিটার উঁচু বর্গাকার মঞ্চের উপর চুন সুড়কি ও ইট দ্বারা নির্মিত। মন্দিরে চারপাশে টানা বারান্দা ও মধ্যে একটি গর্ভগৃহ রয়েছে। মন্দিরের ৪ কোণে চারটি ও কেন্দ্রে ১টি মোট ৫টি চূড়া রয়েছে। চূড়ার চারপাশে মৌচাকুতির অসংখ্য ছোট ছোট চূড়া রয়েছে।
মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করার জন্য পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে ১টি করে প্রবেশ পথ ও বারান্দায় ৫টি করে প্রবেশ পথ আছে। মন্দিরের পেছনে গোপাল চৌকি নামক বিশাল একটি দিঘি রয়েছে। মন্দির থেকে দিঘিতে নামার জন্য আলাদা একটি দ্বিমুখী সিঁড়ি আছে।
শিব মন্দিরের দেওয়ালের বাইরে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী খোদাই করা আছে, বর্তমানে তার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।
পুঠিয়া শিব মন্দির কিভাবে যাবেন
পুঠিয়া শিব মন্দিরে যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে রাজশাহী জেলা শহরে যেতে হবে। রাজশাহী জেলা সদর থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। রাজশাহী বা নাটোর থেকে লোকাল বাসে চড়ে পুঠিয়া বাস স্টেশনে নেমে ৫ মিনিটের পথ হেঁটে গেলে শিব মন্দির পৌঁছে যাবেন।
ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে রাজশাহী বাস ট্রেন ও বিমানে যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর ও আব্দুল্লাহপুর বাস স্টেশন থেকে একতা, বাবুল, সোহাগ, হানিফ, গ্রীন লাইন, শ্যামলী, দেশ ট্রাভেল সহ রাজশাহীগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে রাজশাহী আসতে পারবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা, বনলতা, ধুমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে রাজশাহী যেতে পারবেন। পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন শুক্রবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন বৃহস্পতিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৬ টায় এবং সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রবিবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ট্রেনের সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ১,৫৪৭ টাকা।
ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে রাজশাহী বিমানবন্দর যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া ৪২,০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
পুঠিয়া থাকার জন্য জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো রয়েছে। তাদের অনুমতি ও ভাড়া দিয়ে এখানে থাকতে পারেন। যোগাযোগ পুঠিয়া জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইল নাম্বার 01721-776348. পুঠিয়া বাস স্টেশনের পাশে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে সেখানে থাকতে পারেন।
এছাড়া রাজশাহী শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সুকর্ণ আবাসিক, হোটেল হকস, হোটেল আল আরাফাহ, হোটেল এশিয়া, হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল আনজুম উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীতে কম খরচে আবাসিক হোটেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন।
রাজশাহী জেলা সদরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল রয়েছে। এখানে ১,৯০০ টাকা থেকে ৪,৬০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের রুম পাবেন। অগ্রিম বুকিং করুন 0721-775237.
কোথায় খাবেন
পুঠিয়া বাস স্টেশনের আশেপাশে খাবার জন্য হোটেল রয়েছে। সেখান থেকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার খেতে পারেন।
ভালো মানের খাবার খেতে চাইলে রাজশাহী শহরের গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল, রহমানিয়া হোটেল, মাস্টারশেফ হোটেল, কাচ্চি ভাই, নর্থ বার্গ, ক্যালিস্টো, হাংরি হিরোস, হাইডআউট ক্যাফে থেকে খেতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সমূহ
পুঠিয়া শিব মন্দির ছাড়াও আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সাফিনা পার্ক এন্ড্র রিসোর্ট, শহীদ জিয়া শিশু পার্ক, বাঘা মসজিদ, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, পদ্মা গার্ডেন রাজশাহী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।