বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, রাজশাহী

রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র হেতেম খাঁ-তে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (Varendra research museum). প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা।

১৯১০ সালে বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামচন্দ্র বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করে বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২ টি দুস্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন।

এই নিদর্শন গুলো সংরক্ষণের জন্য ১৯১৩ সালে শরৎ কুমার রায়ের দান করা জায়গায় উপর জাদুঘরটির নিজস্ব ভবন তৈরি করেন। ১৯৪৭ বরেন্দ্র জাদুঘরের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেয়। এরপর ১৯৪৯-১৯৬১ সালে জাদুঘরের অর্ধেক অংশ মেডিকেল স্কুল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

১৯৬৪ সালে জাদুঘরটি বন্ধ হবার উপক্রম হলে ঔ বছরের ১০ অক্টোবর এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিগ্রহণ করে। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ যেমন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী পরিদর্শন করেন।

BM Khalid Hasan Sujon

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচী

বরেন্দ্র জাদুঘরে জনপ্রতি প্রবেশ টিকেট মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সপ্তাহের শনিবার ও বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর খোলা থাকে। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত ছুটির দিন গুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে।

বরেন্দ্র জাদুঘরের নিদর্শন সমূহ

বর্তমানে বরেন্দ্র জাদুঘরে প্রায় ৯ হাজারের বেশি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন রয়েছে। জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে মোহেনজোদারো সভ্যতার প্রত্নতত্ত্ব, একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি, গঙ্গা মূর্তি, সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন, পাথরের মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা ইত্যাদি।

BM Khalid Hasan Sujon

কিভাবে যাবেন

বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র হেতেম খাঁ-তে অবস্থিত। রাজশাহী শহরের যেকোনো স্থান থেকে জাদুঘরে যেতে পারবেন। রাজশাহী কলেজের পাশে এই জাদুঘরে অবস্থান।

ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে রাজশাহী বাস ট্রেন ও বিমানে যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর ও আব্দুল্লাহপুর বাস স্টেশন থেকে হানিফ, একতা, বাবুল, শ্যামলী, সোহাগ, গ্রীন লাইন, দেশ ট্রাভেল সহ রাজশাহীগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে রাজশাহী আসতে পারবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা, বনলতা, ধুমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে রাজশাহী যেতে পারবেন। পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন শুক্রবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন বৃহস্পতিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৬ টায় এবং সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রবিবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ট্রেনের সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ১,৫৪৭ টাকা।

ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে রাজশাহী বিমানবন্দর যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া ৪২,০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা।

BM Khalid Hasan Sujon

কোথায় থাকবেন

রাজশাহী শহরের থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল হকস, হোটেল আল আরাফাহ, হোটেল এশিয়া, হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সুকর্ণ আবাসিক, হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল আনজুম উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীতে কম খরচে আবাসিক হোটেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন।

এছাড়া রাজশাহী শহরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল রয়েছে। এখানে ১,৯০০ টাকা থেকে ৪,৬০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের রুম পাবেন। অগ্রিম বুকিং করুন 0721-775237.

কোথায় খাবেন

পার্কের ভেতর ও বাহিরে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। এসব রেস্টুরেন্ট থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

রাজশাহী শহরের খাবার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল, মাস্টারশেফ হোটেল, রহমানিয়া হোটেল, নর্থ বার্গ, ক্যালিস্টো, হাংরি হিরোস, কাচ্চি ভাই, হাইডআউট ক্যাফে উল্লেখযোগ্য।

আশেপাশের আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ

বরেন্দ্র জাদুঘর ছাড়াও রাজশাহী জেলায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সাফিনা পার্ক এন্ড্র রিসোর্ট, শহীদ জিয়া শিশু পার্ক, বাঘা মসজিদ, পদ্মা পাড় রাজশাহী, পদ্মা গার্ডেন রাজশাহী, উৎসব পার্ক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, পুঠিয়া শিব মন্দির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।