বাঁশখালী চা বাগান, চট্টগ্রাম
বাঁশখালী চা বাগান (Banshkhali Tea garden) চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। মূলত এটি চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগান হলেও বাঁশখালী চা বাগান নামে সকলের কাছে পরিচিত।
এই চা বাগানটি প্রায় ৩ হাজার একর পাহাড়ী জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। এই চা বাগানের উৎপাদিত চায়ের যেমন পুষ্টিগুন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দেশ জুড়ে কদর। এখানে প্রায় ৭০০ একর জায়গা জুড়ে চা পাতা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের কাজ চলে।
বর্তমানে এখানে ৭০০ জন নারী-পুরুষ চা পাতা উৎপাদন, সংগ্রহ থেকে আরম্ভ করে বাজারজাতকরণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। চা পাতার মানের দিক থেকে মধুপুর চা বাগান, খৈয়াছড়া চা বাগান, ক্লিফটন চা বাগান ও কর্ণফুলী চা বাগানের পরেই এই বাগানের স্থান।
বর্তমানে বিদেশে রপ্তানি হওয়া ক্লোন চা উৎপাদনে বাগানটি দেশের প্রথম স্থানে রয়েছে। বর্তমানে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় এই চা বাগানটি পরিচালনা হচ্ছে। শীত মৌসুমে চা নতুন পাতা গজালে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে এই চা বাগানে।
যেদিকে তাকাবেন দেখতে পাবেন শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। সারা বছর প্রায় এখানে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা দেখা যায়। স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পিকনিক করার স্পট হিসেবে ব্যবহার করছে।
চা বাগানটির প্রতিষ্ঠার সঠিক সময় পাওয়া না গেলেও লোকমুখে শোনা যায় ১৯৯২ সালে ইংরেজরা এই বাগানটি আরম্ভ করেন। তখন এই বাগানের ম্যানেজার ছিলো হিগিন। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে বাগানটি মালিকানার অনুপস্থিত দেখা যায়।
এরপর থেকে বাগানের অধিকাংশ জমি স্থানীয় অধিবাসীরা অবৈধ দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে জমিদার বাহাদুর রায় এই চা বাগানের মালিকানা নেয়। বর্তমানে চা বাগানটি সিটি গ্রুপের পরিচালিত রয়েছে।
বাঁশখালী চা বাগান কিভাবে যাবেন
বাঁশখালী চা বাগান বা বেলগাঁও চা বাগানে যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে আসতে হবে। চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট বাস স্টেশন বা নতুন ব্রিজ থেকে চাঁদপুর যাওয়ার বাসে চড়ে জনপ্রতি ৪৫ টাকা ভাড়া দিয়ে চাঁদপুর বাজারে নেমে যাবেন।
চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজ থেকে চাঁদপুর বাজারে বাসে আসতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগবে। চাঁদপুর বাজার থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি করে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে পুকুরিয়া বাজার যেতে হবে।
পুকুরিয়া বাজার থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি করে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে চা বাগানের গেইটের সামনে যেতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ১০-১৫ মিনিট।
এছাড়া চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া চানপুর বাজারে নেমে যাবেন। সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি করে চা বাগানে আসতে পারবেন।
খাওয়া-দাওয়া
বেলগাঁও চা বাগানে ঘুরতে গেলে খাবার জন্য সেখানে কোনো দোকান বা হোটেল নেই। তাই যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম শহর থেকে আপনাকে প্রয়োজনীয় পানি ও শুকনো খাবার কিনে নিয়ে যেতে হবে। চা বাগান ঘুরে দেখে চট্টগ্রাম শহরে ফিরে এসে সেখান থেকে খাবার খেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
বাঁশখালী থাকার জন্য তেমন ভালোমানের হোটেল বা রিসোর্ট নেই। তাই আপনাকে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্টে থাকতে হবে। আপনার বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন হোটেল ভাড়া পেয়ে যাবেন।
ভ্রমণ টিপস
- চা বাগান ভ্রমণের সময় স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলুন।
- চা বাগানের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না।
- চা বাগান ভ্রমনে গেলে সাথে হালকা শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে যাবেন।
- চা কারখানার ভেতর প্রবেশ করবেন না।
- স্থানীয় আধিবাসীদের সাথে ভালো আচার-আচরণ করুন।
আশেপাশে আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ
বাঁশখালী উপজেলায় আরো বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন- বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী ইকোপার্ক। আপনার হাতে সময় থাকলে এই দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখে আসতে পারেন।