বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত (Bashbaria Sea Beach) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া নামক একটি স্থানে অবস্থিত। বর্তমানে পর্যটকদের নিকট একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে।
এখানে দেখতে পাবেন সারি সারি ঝাউগাছ, গুলিখালির মতো জেগে উঠা সবুজ ঘাসের চর, পিকনিক স্পট, সারি সারি নৌকা, কাঁদা-বালির মাঠ, খোলামেলা পরিবেশ সব মিলিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে টানে।
এই সমুদ্র সৈকতের মূল আকর্ষণ হল লোহার ব্রিজ বা ফেরি ঘাট। এই ফেরি ঘাটের উপর দিয়ে হেঁটে আপনি সমুদ্রের মাঝে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর যেতে পারবেন। সেখান থেকে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সূর্যস্ত উপভোগ করতে পারবেন। এই ফেরি ঘাটে উঠার জন্য ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হবে।
এই বিচে অনেক খেজুর গাছ দেখতে পাবেন। শীতের সকালে গেলে খেজুরের রস খেতে পারবেন, প্রতি গ্লাস ২০ টাকা। এছাড়া স্পিড বোটে করে আসেপাশে ঘুরে দেখতে পারবেন।
যারা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ক্যাম্পিং করতে চাচ্ছেন তারা নিশ্চিতে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। এটা ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ একটি স্থান।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাবেন
বাসে ঢাকা থেকে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত যেতে চাইলে চট্টগ্রাম গামী যেকোনো বাসে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া বাজারে। বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখলে আপনাকে বাঁশবাড়িয়া বাজারে নামিয়ে দিবে।
ট্রেনে ঢাকা থেকে আসতে চাইলে ফেনী নামতে হবে। এরপর ফেনীর মহিপাল থেকে বাঁশবাড়িয়া বাজারে নামতে হবে। ভাড়া লাগবে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো।
বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে সিএনজি বা অটোরিকশাতে করে বাঁশবাড়িয়া সি বিচে যেতে পারবেন। রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে গেল ৩০০ টাকা ভাড়া লাগবে। অনেক সময় সন্ধ্যার পর এখানে বাঁশবাড়িয়া সি বিচ থেকে সিএনজি পাওয়া যায় না। তাই ড্রাইভারের নাম্বার নিয়ে রাখা ভালো।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশবাড়িয়া আসার জন্য অলংকার মোড়, এ কে খান মোড় থেকে বাস বা টেম্পুতে করে বাঁশবাড়িয়া বাজারে নামতে হবে। ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে বিচে আসতে পারবেন। রিজার্ভ নিলে ৩০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুণ্ড বাজারে থাকার জন্য সাইমুন নামে সাধারণ মানের একটি হোটেল আছে। ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে এখানে রুম পেয়ে যাবেন। এছাড়া সীতাকুণ্ড পৌরসভা এলাকায় ডি টি রোড়ে হোটেল সৌদিয়া নামে নতুন আবাসিক হোটেল তৈরি করেছে।
সেখানে এসি রুম ভাড়া ১,৬০০ টাকা এবং নন এসি রুম ভাড়া ৮০০ টাকা। থাকার জন্য অগ্রিম বুকিং কনতে যোগাযোগ করুন 01816-518119, 01991-787979 নাম্বারে।
উন্নত মানের হোটেলে থাকার জন্য আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে হবে। সেখানে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।
কোথায় খাবেন
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের পাশে খাবার জন্য কয়েকটি দোকান হয়েছে। যখন পর্যটকদের ভিড় বাড়ে তখন এই দোকান গুলো খেলা থাকে। এখান থেকে শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি কিনে খেতে পারেন।
সীতাকুণ্ড বাজার খাবার জন্য কয়েকটি হোটেল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আপন রেস্টুরেন্ট, হোটেল সৌদিয়া ও আল আমিন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, ডাল, মাংস, ভর্তা, সবজি ইত্যাদি খাবার খেতে পারবেন।
খাবার জন্য খরচ হবে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। এখানে খাবার জন্য আল আমিন রেস্টুরেন্টের বেশ সুনাম আছে। আমি নিজেও সীতাকুণ্ড ভ্রমণে গিয়ে এই হোটেলে খাবার খেয়েছি।
সীতাকুণ্ড ভ্রমণ পরিকল্পনা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় দেখার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। এমন ভাবে ট্যুর প্ল্যান করবেন যাতে একটা দর্শনীয় স্থান থেকে অন্য দর্শনীয় স্থানে সহজে যাওয়া যায়। কি কি দেখবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন সব কিছু আগেই থেকেই প্ল্যান করে নিবেন।
শুধু সীতাকুণ্ডেই দেখার মতো আছে চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, গুলিয়াখালি সী বিচ, মহামায়া লেক, ঝরঝরি ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা, কুমিরা ঘাট সহ আরো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।