বাঘা মসজিদ ভ্রমণ, রাজশাহী

ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ (Bagha mosque) রাজশাহী জেলা শহর থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত। ১৫২৩ সালে হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান শাহ এই মসজিদ নির্মাণ করেন।

ইটের গাঁথুনি চুন ও সুরকি দিয়ে তৈরি প্রাচীন মসজিদের চারপাশে ৪ টি এবং মাঝখানে দুই সারিতে মোট ১০ টি গম্বুজ রয়েছে। বাইরের ও ভেতরের দেয়ালে মেহরাব ও স্তম্ভ রয়েছে। মসজিদের দৈর্ঘ্য ২২.৯২ মিটার, প্রস্থ ১২.১৮ মিটার এবং উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। ২.২২ মিটার পুরু দেয়াল।

মসজিদের পূর্ব পাশে ৫ টি দরজা রয়েছে, উত্তর-দক্ষিণ পাশের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া রয়েছে। মসজিদের ভেতর উঁচু বেদিতে একটি আলাদা নামাজের কক্ষ রয়েছে। এখানে কারা নামাজ পড়তো সেটা এখনো সকলের কাছে অজানা।

২৫৬ বিঘা জায়গায় উপর অবস্থিত মসজিদ সংলগ্ন ৫২ বিঘা জায়গায় উপর একটি দিঘী ও পাশে একটি কবরস্থান রয়েছে। এই দিঘীর চারপাশে বাঁধানো পাড়ে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ রয়েছে। প্রতি বছর শীতের মৌসুমে এই দিঘীতে অসংখ্য অতিথি পাখিদের কলতানে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা।

BM Khalid Hasan Sujon

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদের ছাদ ও গম্বুজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাঘা মসজিদের ছাদ ও গম্বুজের পুনঃনির্মাণ করেন। মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৩ দিন পর্যন্ত বাঘার মেলা হয়। মেলাটি প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্য। আশেপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীরা এই মেলায় ঘুরতে আসেন।

বাঘা মসজিদ ঐতিহাসিক মসজিদ হওয়ার দেশের পঞ্চাশ টাকার নোটে বাঘা মসজিদের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। 

বাঘা মসজিদ যাওয়ার উপায়

দেশের যেকোনো স্থান থেকে বাঘা মসজিদে যেতে হলে প্রথমে রাজশাহী শহরে আসতে হবে। রাজশাহী সদর বাস স্টেশন থেকে বাঘা যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন। রাজশাহী সদর বাস স্টেশন থেকে বাঘা যেতে জনপ্রতি বাস ভাড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া নিয়ে বাঘা মসজিদ ভ্রমণে যেতে পারেন।

BM Khalid Hasan Sujon

ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে রাজশাহী বাস ট্রেন ও বিমানে যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর ও আব্দুল্লাহপুর বাস স্টেশন থেকে সোহাগ, বাবুল, হানিফ, দেশ ট্রাভেল, একতা, শ্যামলী, গ্রীন লাইন সহ রাজশাহীগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে রাজশাহী আসতে পারবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা, বনলতা, ধুমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে রাজশাহী যেতে পারবেন। পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন শুক্রবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন বৃহস্পতিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৬ টায় এবং সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রবিবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ট্রেনের সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ১,৫৪৭ টাকা।

ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা, বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার এয়ারলাইন্সে রাজশাহী বিমানবন্দর যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া ৪২,০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

রাজশাহী শহরের থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল আল আরাফাহ, হোটেল এশিয়া, হোটেল আনজুম, হোটেল হকস, হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সুকর্ণ আবাসিক উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীতে কম খরচে আবাসিক হোটেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন।

BM Khalid Hasan Sujon

এছাড়া রাজশাহী শহরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল রয়েছে। এখানে ১,৯০০ টাকা থেকে ৪,৬০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের রুম পাবেন। অগ্রিম বুকিং করুন 0721-775237.

কোথায় খাবেন

রাজশাহী শহরের খাবার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে রহমানিয়া হোটেল, কাচ্চি ভাই, গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল, হাইডআউট ক্যাফে, নর্থ বার্গ, মাস্টারশেফ হোটেল, ক্যালিস্টো, হাংরি হিরোস উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন