বারিক্কা টিলা (Barikka tila) যা স্থানীয় মানুষের কাছে বারেক টিলা বা বারিক টিলা নামে পরিচিত। বারেক টিলা বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত।
সবুজ উঁচু টিলার একপাশে খাসিয়া পাহাড়, অন্যপাশে স্বচ্ছ পানির যাদুকাটা নদী। টিলার উপর দাঁড়িয়ে মেঘের খেলা দেখতে পাবেন। টিলায় ৩৬৫ একর জায়গা জুড়ে রংবেরঙের নানা প্রজাতির গাছপালা দেখতে পাবেন।
এই টিলাতে রয়েছে ৪০ টির মতো আদিবাসীদের বসবাস। এছাড়া রয়েছে হিন্দুদের তীর্থস্থান ও মুসলমানদের একটি ধর্মীয় মাজার। বছরের নিদিষ্ট দিনে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ এই তীর্খস্থান ও মাজারে ভিড় জমায়। তখন বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত ১-২ দিনের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
বারিক্কা টিলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যাদুকাটা নদী যা ভারতের খাসিয়া পাহাড় থেকে বয়ে এসেছে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পানিতে ভারত থেকে প্রচুর বালি, পাথর ও কয়লা আসে। তখন এই নদীতে স্থানীয় মানুষের বালু, পাথর ও কয়লা তোলার কর্মব্যস্ততার দৃশ্য দেখা যায়।
টিলা থেকে টেকেরঘাট যাওয়া জন্য একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দুইপাশের সৌন্দর্য সত্যিই আপনাকে মুগ্ধ করবে। টিলা থেকে বড়ছড়া চারাগাঁও শুল্ক স্থলবন্দর যেতে চাইলে ৪০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে হবে।
বারিক্কা টিলা ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ স্থান। এখান থেকে সূর্যোদয়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। টিলার উপর দাঁড়িয়ে চারিদিকের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য দেখে আপনার সব ক্লান্তি নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।
এছাড়া টিলায় দুইটি মিষ্টি পানির ছড়া রয়েছে। স্থানীয় লোকেরা এই ছড়ার মিষ্টি পানির খাবার জন্য ব্যবহার করে। বর্ষা মৌসুমে ছাড়া এই ছড়ায় তেমন পানি থাকে না। এই ছড়া দেখতে চাইলে কিছু পথ ট্রেকিং করতে হবে। ছড়া যাওয়ার পথ চেনার জন্য স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিতে পারেন।
বারিক্কা টিলা কিভাবে যাবেন
বারিক্কা টিলা যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, আব্দুল্লাহপুর থেকে শ্যামলী পরিবহন, মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন, হানিফ পরিবহন, গ্রীন লাইন, এস আলম সোহাগ পরিবহন সহ আরো বিভিন্ন পরিবহনের এসি / নন-এসি বাস নিয়মিত চলাচল করে।
এসি/নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৩০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ বাসে যেতে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সুনামগঞ্জ যেতে ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটগামী যেকোনো ট্রেনে চড়ে সিলেট যাবেন। সিলেটের কুমারগাও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জগামী বিরতিহীন বাসে চড়ে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টা।
সুনামগঞ্জ শহরের যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি বা মোটরসাইকেল ভাড়া করে সরাসরি বারেক টিলা যেতে পারবেন। একটি মোটরসাইকেলে দুজন যেতে পারবেন। মোটরসাইকেল ভাড়া লাগবে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।
কোথায় খাবেন
বারেক টিলায় খাবার জন্য বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। এছাড়া বড়ছড়াবাজার ও যাদুকাটা নদীর পাশে টেকেরঘাট ছোট বাজারে খাবার জন্য হোটেল রয়েছে। এখান থেকে খাবার খেতে পারবেন।
এছাড়া যারা ভালো মানের খাবার খেতে চান তারা সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে খেতে পারবেন। সুনামগঞ্জ শহরে খাবার জন্য আধুনিক মানের অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেখান থেকে আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
বারেক টিলার পাশে বড়ছড়া বাজারে থাকার জন্য কয়েকটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় সেখানে থাকতে পারবেন। তাহিরপুর বাজারে ও নিলাদ্রি লেকের পাশে চুনা পাথার কারখানার গেস্ট হাউজ অনুমতি নিতে থাকতে পারবেন।
যারা ভালো মানের হোটেলে থাকতে চান তারা সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে ১,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের হোটেলে থাকতে পারবেন। সুনামগঞ্জ আবাসিক হোটেল তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। অধিকাংশ পর্যটকেরা ডে-ট্যুরে এসে বারেক টিলা ঘুরে ফিরে যায়।
নিচে রাত্রিযাপন করার জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আবাসিক হোটেল হল –
- হোটেল টাংগুয়া ইন, তাহিরপুর বাজার
- হোটেল নূরানী, পুরাতন বাসস্টেশন, সুনামগঞ্জ
- হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্টেশন, সুনামগঞ্জ
- হিজল রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট, টেকেরঘাট
- হোটেল সারপিনিয়া, জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ
বারিক্কা টিলার আশেপাশে আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ
বারেকের টিলা ভ্রমণে গিয়ে আশেপাশে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। হাতে সময় নিয়ে স্বল্প খরচে এসব দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখে আসবেন। এগুলোর মধ্যে শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী, নিলাদ্রি লেক, টাঙ্গুয়ার হাওর উল্লেখযোগ্য।