বরিশালের ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুল দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating guava market). বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় পেয়ারা বাগান।
ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার বসে তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায়। ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় পেয়ারা বাগানের মালিকরা এই বাজারে পেয়ারা বিক্রি করতে আসে। বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আড়তদাররা আসে পেয়ারা কিনতে। পেয়ারা ছাড়াও এই বাজারে আমড়া ও কাঁচা কলা পাওয়ার যায়। এখান থেকে কম টাকায় পেয়ারা কিনতে পারবেন।
ভাসমান বাজারের উত্তর পাশে খালের উপর একটা সেতু আছে। সেখান থেকে ভাসমান বাজারের সৌন্দর্য খুব ভালো করে উপভোগ করা যায়।
স্বচ্ছ খালের পানিতে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ভিমরুলির পেয়ারা বাজারে যেতে যেতে দু’পাশের সবুজ প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবে। মাঝে মাঝে দেখতে পাবেন ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ছেলেরা ডিজে গান বাজিয়ে পিকনিক করতে।
এছাড়া খালের সাথে তৈরি করা ঘরবাড়ি, ব্রিজ, স্কুল সহ চারপাশের সম্মোহনী রুপ উপভোগ করতে পারবেন। খালের মধ্যে দিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় যাওয়ার সময় হাত দিয়ে পেয়ারা ও আমড়া স্পর্শ করতে পারবেন। আর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে চারপাশের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়।
জুলাই ও আগষ্ট মাসে পেয়ারা মৌসুম থাকায় প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটে এবং বাজারে প্রচুর পেয়ারা কেনাবেচা হয়। দুপুর ১২ টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত বাজারে ভিড় থাকে। তাই এই সময়ের মধ্যে পেয়ারা বাজারে পৌঁছাবেন। ছুটির দিন গুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে।
আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান
ভাসমান বাজারে যাওয়ার সময় রিয়ান পেয়ালা পার্ক ও পাশে আরো একটি পেয়ালা পার্ক ঘুরে দেখতে পারেন। এই পার্কের প্রবেশ টিকেট মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। এখানে একটি ওয়ার্চ টাওয়ার রয়েছে, সেখান থেকে পেয়ারা বাগান সহ আশেপাশের সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন।
৩০ টাকা টিকেটের বিনিময়ে পেয়ারা পার্কে প্রবেশ করে যত খুশি পেয়ারা খেতে পারবেন কিন্তু বাসার জন্য পেয়া আনতে পারবেন না। সতর্ক থাকবেন পেয়ারা বাগানের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
ভাসমান পেয়ারা বাজার যাওয়ার উপায়
বরিশাল পেয়ারা বাজার যেতে হলে প্রথমে আপনাকে বরিশাল যেতে হবে। রাজধানী ঢাকা থেকে বাস ও লঞ্চে বরিশাল যেতে পারবেন।
বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, সোহাগ, ঈগল, শাকুরা, লাবিবা, ইম্পেরিয়াল, এনা, দিগন্ত, শ্যামলী পরিবহন সহ বরিশালগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে বরিশাল যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো পদ্মা সেতু পার হয়ে বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এসে থামে।
ঢাকা টু বরিশাল এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১,২০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বাস ছেড়ে যায়।
এছাড়া ঢাকা থেকে অনেক লোকাল বাস বরিশালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এসব লোকাল বাসে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে বরিশাল যেতে পারবেন।
লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বহু লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অধিকাংশ লঞ্চ গুলো সদরঘাট থেকে রাত ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাতে যাত্রা করলে ভোর ৫ টার দিকে বরিশাল পৌঁছে যাবেন। সকালে অনেক লঞ্চ ছেড়ে সন্ধ্যায় পৌঁছায়।
ঢাকা থেকে বরিশাল চলাচলকারী লঞ্চ গুলোর মধ্যে গ্রীন লাইন, এম ভি মানামী, এডভেঞ্চার ১, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৮, সুরভী ৯, পারাবত ৯, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরো বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে।
এসব লঞ্চের ভাড়া ডেক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৪,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।
বরিশাল থেকে ভাসমান পেয়ারা বাজার
বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে চৌমাথা যেতে হবে, জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩০ টাকা। চৌমাথা থেকে লেগুনা করে আটঘর ট্রলার ঘাট যেতে হবে, জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৭০ টাকা। এছাড়া বরিশাল বাস টার্মিনাল থেকে সিএনজি ভাড়া করে আটঘর ট্রলার ঘাট যেতে পারবেন।
আটঘর ট্রলার ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ছোট ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া নিয়ে ভাসমান পেয়ারা বাজার ঘুরে আসতে পারেন। নৌকা ভাড়া করার সময় অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।
কোথায় খাবেন এবং কি কি খাবেন
খাবার জন্য ভিমরুল বাজারে বৌদির হোটেল বিখ্যাত। এখান থেকে দুপুরের খাবার সাদা ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল ও বিখ্যাত গুঠিয়ার সন্দেশ খেতে পারেন।
এছাড়া বরিশাল শহরে খাবার জন্য অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বরিশাল ইন, খাবার ঘর হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ, গাডেন ইন রেস্টুরেন্ট, খাবার বাড়ি রেস্তোরাঁ এন্ড সুইটমিট, আকাশ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, তামিম হোটেল উল্লেখযোগ্য।
বরিশালের বিখ্যাত সন্দেশ মিষ্টি এবং সকাল সন্ধ্যা হোটেলের লুচি সবজি ও সরমালাই অবশ্যই স্বাদ নিতে ভুলবেন না। বরিশাল শহরের পুরান বাজার এলাকার হকের রসমালাই, রসগোল্লা, ছানা, নয়াবাজার মোড়ের নিতাই মিষ্টি ভান্ডার ও বটতলা এলাকার শশীর মিষ্টি খেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
ঝালকাঠি শহরে থাকার জন্য হালিমা বোডিং, ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউজ ও আরাফাত বোর্ডি এ থাকতে পারেন। এখানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন।
ভালো মানের আবাসিক হোটেল থাকতে চাইলে বরিশাল শহরে যেতে হবে। বরিশাল শহরে থাকার জন্য ভালো মানের অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে।
এসব হোটেলে নিরাপদে ও কম খরচে থাকতে পারবেন। আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল রোদেলা, হোটেল গ্রান্ড প্ল্যাজা, রিচমার্ট রেস্ট হাউজ, হোটেল এথেনা, হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখযোগ্য। বরিশাল আবাসিক হোটেল ভাড়া কত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
পরামর্শ
- খালের পানিতে ময়লা আর্জবনা ফেলবেন না।
- সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট পরে নিবেন।
- গ্রুপ করে ভ্রমণে গেলে খরচ কম হয়।
- বৌদির হোটেলের বিখ্যাত খাবার খেয়ে আসবেন।
- পেয়ারা বাগান মালিকের অনুমতি নিতে বাগানে ঢুকবেন।
- নৌকার মাঝি ও স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
বরিশালের আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ
ভাসমান পেয়ারা বাজার ছাড়াও বরিশাল জেলায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে গুঠিয়া মসজিদ, কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি, দুর্গাসাগর দিঘী, কলসকাঠী জমিদার বাড়ি, শাপলা বিল বরিশাল উল্লেখযোগ্য।