মাধবকুন্ড জলপ্রপাত – যাবার উপায়, খরচ ও পরামর্শ

সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় মাধবকুন্ড জলপ্রপাত (Madhabkunda waterfall) অবস্থিত। মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের মেইন গেইট থেকে আধা কিলোমিটার পথ হেঁটে গেলে জলপ্রপাতের দেখা মিলবে। নিচ থেকে ৩৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থান মাধবছড়ার। পাতাড়িয়া পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই ছড়ার পানি মাধবকুণ্ড ঝর্ণা হয়ে নিচে পড়ে।

বিশাল এই জলরাশি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে মিশে গেছে হাকালুকি হাওরে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটকেরা আসেন প্রকৃতির এই ভালোবাসা উপভোগ করতে। ঝর্ণার পানিতে গাঁ ভিজিয়ে সকল ক্লান্ত দুর করে। কেউ বা আবার ছবি তুলে স্মৃতি হিসাবে তুলে রাখে।

এখান থেকে কয়েক বছর আগে পর্যটকদের কাছে এই জলপ্রপাত ছিলো একমাত্র আকর্ষণ। বর্তমানে বাংলাদেশে আরো অনেক জলপ্রপাত আবিষ্কৃত হলেও পর্যটকদের কাছে এর আকর্ষণ একটুও কমেনি।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের পাশে পরিকুন্ড নামে আরো একটি ঝর্ণা আছে। ঝিরি পথ ধরে ১৫ মিনিট হেঁটে গেলে এই ঝর্ণার দেখা পাবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

২০০১ সালে এখানে ২৬৭ একর জায়গা নিয়ে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্ট হাউজ ও রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়।

জলপ্রপাত ছাড়াও ইকোপার্ক ঘুরে দেখতে বেশ উপভোগ্য। ইকোপার্কে রয়েছে চা বাগান, কমলা, লেবু, পান-সুপারি, খাসিয়া পল্লী, জুম চাষ ও শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান। চৈত্র মাসে মধুকৃষ্ণা ত্রায়োদশী তিথিতে এই জলপ্রপাত সংলগ্ন কুন্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। এই স্নান উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রবেশ টিকেট মূল্য

মাধবকুন্ড ইকোপার্কে প্রবেশ টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা।

BM Khalid Hasan Sujon

যাওয়ার উপযুক্ত সময়

যেকোনো জনপ্রপাত বা ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। একইভাবে বর্ষাকালে বা বর্ষাকালের ১-২ মাস পরে মাধবকুন্ড ঝর্ণা ভ্রমণে গেলে ঝর্ণায় প্রচুর পানি পাবেন। অন্যান্য সময়ও যেতে পারবেন কিন্তু  ঝর্ণায় পানি কম থাকবে।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত যাওয়ার উপায়

দেশের যেকোনো স্থান থেকে মাধবকুন্ড ঝর্ণায় যেতে চাইলে প্রথমে সিলেট যেতে হবে। আপনি বিভিন্ন ভাবে এই ঝর্ণায় যেতে পারবেন। নিচে কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে মাধবকুন্ড

ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিয়ানীবাজারগামী এনাশ্যামলী পরিবহন সহ যেকোনো পরিবহনে চড়ে কাঠালতলী বাজার নেমে যাবেন। নন-এসি/এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।

কাঁঠালতলী বাজার থেকে লোকাল বা রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিয়ে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের সামনে যেতে পারবেন। লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া ২৫ থেকে ৩০/টাকা এবং রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।

BM Khalid Hasan Sujon

ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে  পারাবত, জয়ন্তিকা ও উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলস্টেশন নেমে যাবেন। সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২৮০-৬৩৯ টাকা, যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা।

কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে রিজার্ভ সিএনজি করে কাঁঠালতলী বাজার হয়ে মাধবকুণ্ড যেতে হবে। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়া কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে সিএনজি করে প্রথমে কাঁঠালতলী বাজার গিয়ে সেখান থেকে আবার সিএনজি করে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যেতে হবে।

সিলেট থেকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক

সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে বড়লেখাগামী বাসে চড়ে বড়লেখা নেমে যাবেন। বড়লেখা থেকে রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া করে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যেতে পারবেন।

আবার বড়লেখা থেকে লোকাল সিএনজি করে কাঁঠালতলী বাজার এসে সেখান থেকে লোকাল বা রিজার্ভ সিএনজি করে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যেতে পারবেন।

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুণ্ড

শ্রীমঙ্গল থেকে বড়লেখাগামী যেকোনো লোকাল বাসে চড়ে বড়লেখার আগে কাঁঠালতলী বাজার নেমে যাবেন। সেখান থেকে লোকাল বা রিজার্ভ সিএনজি করে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যেতে পারবেন।

এছাড়া শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি বা জীপ গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি ইকোপার্কের সামনে আসতে পারবেন।

মৌলভীবাজার থেকে মাধবকুণ্ড

মৌলভীবাজার থেকে লোকাল বাস বা সিএনজি/প্রাইভেট কার/জীপ গাড়ি রিজার্ভ করে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যেতে পারবেন। এছাড়া বড়লেখাগামী যেকোনো লোকাল বাসে চড়ে কুলাউড়া পার হয়ে বড়লেখার আগে কাঁঠালতলী বাজার নেমে যাবেন। সেখান থেকে লোকাল বা রিজার্ভ সিএনজি করে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

মাধবকুণ্ড থাকার জন্য জেলা পরিষদের দুইটি ডাকবাংলো ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে থাকার জন্য কয়েক দিন আগে অগ্রিম বুকিং দিয়ে আসতে হবে।

অধিকাংশ পর্যটকেরা থাকার জন্য সিলেট শহর, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্ট গুলো বেশি পছন্দ করে। থাকার জায়গা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। সিলেটের দরগা রোড় ও লামা বাজার এলাকায় ৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকায় পছন্দসই আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজ পেয়ে যাবেন। সিলেট মাজার গেইট হোটেল সমূহের তথ্য জানুন।

কোথায় খাবেন

মাধবকুণ্ড খাবার জন্য ভালো মানের রেস্টুরেন্ট না থাকলেও মাঝামাঝি মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এখানে খাবারের দাম অনেক বেশি। তাই প্রয়োজন না হলে এখান থেকে খাবেন না।

এছাড়া শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার শহরে খাবার জন্য অনেক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখান থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পাঁচ ভাই, পালকি ও পানসী রেস্টুরেন্ট থেকে কম খরচে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। এখানকার ৩২ প্রকারের ভর্তা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

পরামর্শ

  • মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষাকালে ভ্রমণ করুন।
  • কম খরচে মাধবকুণ্ড যেতে চাইলে গ্রুপ করে এবং লোকাল পরিবহনে যাতায়াত করুন।
  • কেনাকাটা, যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া করার আগে দামাদামি করে নিবেন।
  • সন্ধ্যার আগে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক থেকে গন্তব্যে ফিরে আসবেন।
  • জলপ্রপাতের আশেপাশের পাথর গুলো অনেক পিচ্ছিল তাই সাবধানে চলাচল করুন।
  • বর্ষাকালে ঝিরিতে স্রোত থাকে তাই সাবধানে চলাচল করুন।
  • জলপ্রপাতের নিচে অনেক গভীর তাই সেখানে নামবেন না।
  • নোটিশ বোর্ডের লেখা অনুসারণ করুন।
  • স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
  • জলপ্রপাতের আশেপাশের ময়লা ফেলবেন না।
  • ঝর্ণার পানিতে গোসল করার জন্য অতিরিক্ত এক সেট জামাকাপড় নিবেন।
  • ক্যামেরা ম্যান থেকে ছবি তোলার আগে দামাদামি করে নিবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও জলপ্রপাত ছাড়াও মৌলভীবাজার আরো অনেক দর্শনীয় স্থান সমূহ রয়েছে। এসব দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখার জন্য সঠিক ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে হবে। কি কি দেখবেন, কোথায় কত সময় অবস্থান করবেন সবকিছু সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।

মৌলভীবাজার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে হামহাম ঝর্ণা, লাউয়াছড়া উদ্যান, মাধবপুর চা বাগান, নবাব বাড়ি, মনিপুরী পল্লী, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন