মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত (Mandarbaria sea beach) সাতক্ষীরা জেলার বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর তীরে একপাশে সমুদ্র সৈকত এবং অন্য পাশে সুন্দরবনের প্রকৃতি যেকোনো পর্যটকের মন কেড়ে নিবে।
৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে একটি অজানা স্থান। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এমন সব পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত যারা অনেক কষ্ট স্বীকার করে দুঃসাধ্য পথ অতিক্রম বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন শুনতে রাজি আছেন।
সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর নৌঘাট থেকে এই সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা শহর থেকে নীলডুমুর পর্যন্ত বাসে এসে বাকি পথ ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বা স্পিড বোটে যেতে হবে।
নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া যেতে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদীর মোহনা অতিরিক্ত করে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ নদী বেয়ে যেতে হবে। যেতে যেতে নদীর উভয় পাশে সুন্দরবনের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
দেখতে পাবেন হরিণ, বানর, পানকৌড়ি, বালিহাস, কুমির সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর চলাচলের দৃশ্য। গাছের মধ্যে রয়েছে সুন্দরী, গরান, কেওড়া, পশুর, বাইন, গোলপাতা, হেতাল, খলসী, গেওয়া, সিংড়া ইত্যাদি।
দেশের অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে মান্দারবাড়িয়া সৈকত একেবারেই আলাদা, অপূর্ব সৌন্দর্য ঘেরা এক জায়গা। যেখানে পিছনে বাঘের ভয় আর সামনে অসম্ভব ভালোলাগার হাতছানি দেয় সমুদ্র সৈকত ও সবুজ রহস্যে ঘেরা সুন্দরবন।
নির্জন এই সমুদ্র সৈকতের বুকে বাঘ ও হরিণের পায়ের ছাপ আপনার ভ্রমণের উত্তেজনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমার দেখা দেশের সবচেয়ে নির্জন বালুময় সমুদ্র সৈকত মান্দারবাড়িয়া, যেখানে অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করে।
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত যাওয়া উপযুক্ত সময়
শীতকাল (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি মাসে) মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপযুক্ত সময়। এসময় বুড়িগোয়ালিনির নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া যাওয়ার জন্য ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিডবোট ও স্টিমার চলাচল করে।
মান্দারবাড়িয়া যাওয়ার জন্য অবশ্যই সুন্দরবন ফরেস্ট অফিস থেকে অনুমতি (পাস) নিতে হবে। জনপ্রতি পাস খরচ ৩০০ টাকা। বন বিভাগ থেকে একজন নিরাপত্তা কর্মী আপনাদের সাথে থাকবে।
মান্দারবাড়িয়া সৈকত যাওয়ার উপায়
রাজধানী ঢাকার গাবতলী, নবীনগর, সাভার ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস, হানিফ, সোহাগ, শ্যামলী, এম আর, সাতক্ষীরা লাইন, টুঙ্গিপাড়া, ইমাদ, গ্রীন লাইন, কে লাইন, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, এ. কে. ট্রাভেল, সৌদিয়া পরিবহনে করে সাতক্ষীরা শহরে আসতে পারবেন। এসি/নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।
সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে গেইটলক বাসে চড়ে শ্যামনগর যেতে হবে। এরপর বুড়িগোয়ালিনির নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত যাওয়ার জন্য ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, স্পিডবোট ও স্টিমার পাবেন। সাতক্ষীরা সদর শহর থেকে বুড়িগোয়ালিনির দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বা স্টিমারে যেতে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা এবং স্পিডবোটে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগবে।
কোথায় থাকবেন
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে থাকার জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন হোটেল, বর্ষা রিসোর্ট, টাইগার পয়েন্ট গেস্ট হাউজ, হোটেল সৌদিয়া, হোটেল সোনার বাংলা, রূপসী বাংলা লজ ও আকাশলীনা রিসোর্ট উল্লেখ্যযোগ্য।
এছাড়া সাতক্ষীরা শহরে থাকার জন্য হোটেল আল-কাশেম আবাসিক, হোটেল টাইগার প্লাস, হোটেল সাতক্ষীরা প্যালেস, হোটেল উত্তরা আবাসিক থাকতে পারবেন। সাতক্ষীরা আবাসিক হোটেল সমূহের তথ্য জানুন।
কোথায় খাবেন
মুন্সিগঞ্জের সুশীলন ও বর্ষা রিসোর্টে থাকার পাশাপাশি খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে এখান থেকে খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া সাতক্ষীরা শহরের পানসি রেস্তোরাঁ, সোনারগাঁও, স্বপ্ন রেস্তোরাঁ, লেক ভিউ ক্যাফে থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। সাতক্ষীরার বিখ্যাত বাগদা চিংড়ি, চুই ঝালের মাংস, সন্দেশ, সুন্দরবনের খাঁটি মধু খাবেন।
সাতক্ষীরার আরো দর্শনীয় স্থান
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক, সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির, মোজাফফর গার্ডেন, লেক ভিউ ক্যাফে, নলতা শরীফ, রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র উল্লেখ্যযোগ্য।