মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি, নারায়ণগঞ্জ
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি (Murapara jamidar bari) বা মঠেরঘাট জমিদার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বাবু রামরতন ব্যানার্জী প্রায় ৬২ বিঘা জায়গায় উপর এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এরপর তার কয়েকজন বংশধর এই জমিদার বাড়ির সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে জমিদার প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী এই ভবনের পিছনের অংশ সংস্কার করে পরিবার নিয়ে বসবাস শুর করেন।
এরপর তার পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ভবনের সামনের অংশ সংস্কার, ১টি নতুন ভবন নির্মাণ ও ২ টি পুকুর খনন করেন। তার দুই পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে এই বাড়ির দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী তার পরিবার নিয়ে কলকাতা চলে যায়। এরপর বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকার বাড়িটি দখল নিয়ে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র ও হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করে।
এই জমিদার বাড়িতে ৯৫টি কক্ষ, বাড়ি সংলগ্ন ২টি পুকুর, মন্দির, বৈঠকখানা, দৃষ্টিনন্দন নাচের ঘর, অতিথিশালা, কাছারি ঘর, ভান্ডার, আস্তাবল রয়েছে। জমিদার বাড়ি প্রবেশের মুখে বিশাল ফটক রয়েছে। এছাড়া দালানের মন্দিরের চূড়াটি প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতায়।
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই জমিদার বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনার তালিকাভুক্ত কর। বর্তমানে এখানে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যা স্থানীয় লোকেদের কাছে সরকারি মুগাপাড়া কলেজ নামে পরিচিত।
অতিতের দাপুটে এই জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের বেশ আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। ঢাকা থেকে দিনে ঘুরতে গিয়ে দিনে ফিরে আসার জন্য আদর্শ পর্যটন স্থান।
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল থেকে মেঘলা গ্লোরি বা আসিয়ান বাসে করে ভুলতা বা রূপসী বাস টার্মিনাল যাবেন। এছাড়া ভৈরব বা নরসিংদীগামী বাসে চড়ে ভুলতা বাস টার্মিনাল নেমে যাবেন।
ভুলতা বা রূপসী বাস টার্মিনাল থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি চড়ে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন। অটোরিকশা বা সিএনজি রিজার্ভ নিলে ১০০ টাকা ভাড়া লাগবে।
অন্য পথে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে বাসে জনপ্রতি ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজে নেমে যাবেন। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে জনপ্রতি ৪০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে রূপগঞ্জ শীতালক্ষ্যা ফেরিঘাট পার হয়ে অটোরিকশা বা সিএনজি করে জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
জমিদার বাড়ি দেখতে গিয়ে খাবার জন্য রূপসী এলাকায় খাবার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল বা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আপনি সেখান থেকে ২৫০-৩০০ টাকায় দুপুরে খাবার খেতে পারবেন। খাবার মেন্যু গুলোর মধ্যে রয়েছে সাদা ভাত, মাছ, ভর্তা, মুরগি / গরু, সবজি, ডাল, সালাত ইত্যাদি।
জমিদার বাড়ির আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
এই জমিদার বাড়ির কাছে সোনারগাঁও এর আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলার তাজমহল, সোনারগাঁও জাদুঘর, পানাম নগর বা সিটি ও জিন্দা পার্ক।