সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দির (Jeshoreshwari kali temple). এই কালী মন্দিরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। যশোরেশ্বরী নামের অর্থ যশোরের দেবী।
সত্য যুগে দক্ষ যুঞ্জের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগের পর মহাদেব মৃত দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয় নৃত্য আরম্ভ করেন। বিঞ্চু দেব তার সুদর্শণ চক্র কতৃক সতীর দেহ ছেদন করেন। এসময় সতী মাতার দেহ খন্ড গুলো ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন।
সতী মাতার দেহ খন্ড গুলো যে সকল স্থানে পতিত হয়েছে সেসব স্থানকে শক্তিপীঠ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। যশোরেশ্বরী কালী মন্দির তেমনি একটি শক্তিপীঠ। সারা পৃথিবীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের এমন ৫১ টি পীঠের একটি যশোরেশ্বরী কালীমন্দির রয়েছে।
ইতিহাস থেকে ধারণা করা হয়, আনারি নামের এক ব্রাক্ষণ যশোরেশ্বরী কালী মন্দির ও শক্তিপীঠের ১০০ টি দরজা নির্মাণ করেন। যদিও ইতিহাস থেকে মন্দিরের নির্মাণকালের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, লক্ষ্মণ সেন ও মহারাজা প্রতাপাদিত্য যশোরেশ্বরী কালী মন্দির সংস্থার করেন।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে লক্ষ্মণ সেন কালী মন্দির সংস্কারের পাশাপাশি মন্দিরের পাশে নাটমন্দির নামে একটি বৃহৎ মঞ্চমল্ডপ নির্মাণ করেন। আর কালী মন্দির তৈরি করেন মহারাজা প্রতাপাদিত্য।
২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং এই কালী মন্দির পরিদর্শন করে কালীর মাথায় একটি স্বর্ণের মুকুট উপঢৌকন হিসেবে পরিয়ে দেন। ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর এই মুকুট চুরি হয়ে যায়।
যশোরেশ্বরী কালী মন্দির কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গাবতলী, নবীনগর, সাভার ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস, হানিফ, সোহাগ, শ্যামলী, এম আর, সাতক্ষীরা লাইন, টুঙ্গিপাড়া, ইমাদ, গ্রীন লাইন, কে লাইন, গ্রীন লাইন, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, এ. কে. ট্রাভেল, সৌদিয়া পরিবহনে করে সাতক্ষীরা শহরে আসতে পারবেন। এসি/নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।
সাতক্ষীরা শহরে থেকে গেইটলক বিরতিহীন বাসে চড়ে শ্যামনগর এসে সেখান থেকে ঈশ্বরীপুর গ্রামের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে থাকার জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন হোটেল, বর্ষা রিসোর্ট, টাইগার পয়েন্ট গেস্ট হাউজ, হোটেল সৌদিয়া, হোটেল সোনার বাংলা, রূপসী বাংলা লজ ও আকাশলীনা রিসোর্ট উল্লেখ্যযোগ্য।
এছাড়া সাতক্ষীরা শহরে থাকার জন্য হোটেল আল-কাশেম আবাসিক, হোটেল টাইগার প্লাস, হোটেল সাতক্ষীরা প্যালেস, হোটেল উত্তরা আবাসিক থাকতে পারবেন। সাতক্ষীরা আবাসিক হোটেল সমূহের তথ্য জানুন।
কোথায় খাবেন
মুন্সিগঞ্জের সুশীলন ও বর্ষা রিসোর্টে থাকার পাশাপাশি খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে এখান থেকে খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া সাতক্ষীরা শহরের পানসি রেস্তোরাঁ, সোনারগাঁও, স্বপ্ন রেস্তোরাঁ, লেক ভিউ ক্যাফে থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। সাতক্ষীরার বিখ্যাত আম, বাগদা চিংড়ি, চুই ঝালের মাংস, সন্দেশ, সুন্দরবনের খাঁটি মধু খাবেন।
সাতক্ষীরার আরো দর্শনীয় স্থান
যশোরেশ্বরী কালী মন্দির ছাড়াও আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, মোজাফফর গার্ডেন, নলতা শরীফ, বনবিবির বটগাছ, লেক ভিউ ক্যাফে, রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র উল্লেখ্যযোগ্য।