alternatetext
রামু রাবার বাগান Ramu Rubber Garden

রামু রাবার বাগান ভ্রমণ গাইডলাইন

রামু রাবার বাগান (Ramu Rubber Garden) রামু উপজেলায় পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে ঐতিহ্যবাহী এই রাবার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় রামু রাবার বাগান অবস্থিত।

১৯৬০ থেকে ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহায়তায় অনাবাদি জমি গবেষণার মাধ্যমে রামুতে রাবার গাছের চাষাবাদ শুরু হয়। শুরুর সময় রাবার বাগানে ৫৮,০০০টি উৎপাদনক্ষম রাবার গাছ থাকলেও বর্তমানে রাবার গাছের সংখ্যা ১,৪০,০০০ টি।

ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, টিলা ও বিস্তৃত সমতল পাহাড়ের মাঝে ২,৬৮২ একর জায়গায় এই রাবার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ১,১৩০ একর জায়গা থেকে লিকুইড বা কষ সংগ্রহ করা হয়। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কষ সংগ্রহের মওসুম।

বর্তমানে রাবার বাগানে উৎপাদনক্ষম গাছের সংখ্যা ৫৮,০০০ টি। এই গাছ গুলো থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রবার উৎপাদন করা হয়। এই বাগানের পাশের রয়েছে রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা। সেখানে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর রপ্তানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

BM Khalid Hasan Sujon

একটি রাবার গাছ ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার লিকুইড বা কষ উৎপাদন করতে পারে। এরপর গাছ গুলো ৩২ থেকে ৩৩ বছর বয়সে অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন এই গাছ গুলো জ্বালানি বা আসবাবপত্র বানানো কাজে ব্যবহার করা হয়।

বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রামু রাবার বাগানের চারিপাশে তাকালে দেখতে পাবেন অপূর্ব সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে আপনি সবুজের সমারোহে হারিয়ে যাবেন। গাছের ছায়ায় বসলে আপনার শরীর ও মন জুড়িয়ে যাবে।

বর্তমানে রামু রাবার বাগান একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। প্রত্যেকদিন দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটকেরা রাবার বাগান ও উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে এখানে আসছে। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পিকনিক স্পট।

রাবার বাগানে প্রবেশ করার জন্য কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও রাবার উৎপাদন কারখানায় প্রবেশ করার সময় অবশ্যই কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

BM Khalid Hasan Sujon

রামু রাবার বাগানের মধ্যে অবস্থিত রেস্ট হাউজ। এখানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রেস্ট করতে পারবেন এবং রাতে থাকতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে যথাযথ কারণ দেখাতে হবে।

আপনার হাতে সময় থাকলে রামু বৌদ্ধ মন্দির সহ রামুর জনপ্রিয় স্থান গুলো ঘুরে দেখতে পারেন।

কিভাবে রামু রাবার বাগান যাবেন

রামু রাবার বাগান যেতে হলে প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার আসতে হবে। ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, সোহাগ, ঈগল, গ্রীন লাইন, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন সহ আরো বিভিন্ন পরিবহন সরাসরি কক্সবাজার যায়।

BM Khalid Hasan Sujon

এসি, নন-এসি পরিবহন ভেদে টিকেট মূল্য ১,০০০ টাকা থেকে ২,৬০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকা টু কক্সবাজার  যেতে সময় লাগবে ৮-৯ ঘন্টা। ঢাকা থেকে রাত ১০টায় বাস ছেড়ে গেলে সকাল ৭টার মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন।

ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে পর্যটন এক্সপ্রেস বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে কক্সবাজার যেতে পারবেন। এসি, নন-এসি কেবিন ভেদে টিকেট মূল্য ৫০০ টাকা থেকে ১,৭৫০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ফ্লাইটে কক্সবাজার যেতে পারবেন।

ঢাকা টু কক্সবাজার বিমান ভাড়া ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। যেতে সময় লাগবে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা। বাজেট বেশি থাকলে বা দ্রুত সময় যেতে চাইলে বিমানে যেতে পারেন।

কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু রাবার বাগান অবস্থিত। কক্সবাজার থেকে সিএনজি বা অটোরিকশাতে রামু রাবার বাগানে যেতে পারবেন। সিএনজি বা অটোরিকশা রিজার্ভ করে বা লোকালে যেতে পারবেন।

রামু চৌমুহনী রেলস্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রোড়ের পাশে এই রাবার বাগানের অবস্থান। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে বাস থেকে ১৮ কিলোমিটার আগে নেমে গেলে রাবার বাগান পেয়ে যাবেন।

কোথায় থাকবেন

রামু থাকার জন্য রামু রাবার বাগান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিনন্দন একটি রেস্ট হাউজ আছে। পর্যটক হিসাবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানে থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যথাযথ কারণ দেখাতে হবে আপনি কেন থাকতে চান।

অধিকাংশ পর্যটকেরা থাকার জন্য কক্সবাজার হোটেল ও রিসোর্ট গুলো সুবিধাজনক মনে করে। বর্তমানে কক্সবাজারে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের ৫০০ টির বেশি হোটেল ও রিসোর্ট আছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী যেকোনো হোটেল ও রিসোর্টে থাকতে পারবেন।

মিডিয়াম বাজেটের মধ্যে কক্সবাজার থাকার জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি হোটেল ও রিসোর্ট গুলো হল:

৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা: সায়মন বিচ রিসোর্ট, কক্স টুডে, হেরিটেজ, ওশেন প্যারাডাইজ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, লং বীচ ইত্যাদি।

৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা: নিটোল রিসোর্ট, ইউনি রিসোর্ট, সী ক্রাউন, আইল্যান্ডিয়া, সী প্যালেস, সী গাল, বীচ ভিউ ইত্যাদি।

৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা: কল্লোল, অভিসর, ইকরা বিচ রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট, উর্মি গেস্ট হাউজ, মিডিয়া ইন, কোরাল রীফনী, লিমা রিসোর্ট ইত্যাদি।

কম টাকায় হোটেল ও রিসোর্ট খুঁজতে সমুদ্র সৈকত ও মেইন রোড থেকে যত দূরে হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া নিবেন তত কম টাকায় হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া পাবেন। কম টাকায় হোটেল ভাড়া নেওয়ার জন্য রিকশাওয়ালা মামাদের পরামর্শ না নেওয়া ভালো। প্রয়োজনে হোটেলের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।

সিজন অফ-সিজন অনুযায়ী হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া কমবেশি হয়ে থাকে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সিজনের সময় হোটেল অগ্রিম বুকিং করে যাওয়া ভালো।

কোথায় খাবেন এবং কি খাবেন

রামু উপজেলায খাবার জন্য মাঝারি মানের কিছু সংখ্যাক রেস্তোরাঁ আছে। সেখান থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। তবে খাবার আগে অবশ্যই দাম জেনে নিবেন।

কক্সবাজার থেকে রামু কাছাকাছি হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটকেরা কক্সবাজার ফিরে গিয়ে খাওয়া সুবিধাজনক মনে করে। কক্সবাজার খাবার জন্য বিভিন্ন মানের রেস্তোরাঁ আছে।

মাঝামাঝি মানের রেস্তোরাঁ গুলোর মধ্যে ধানসিঁড়ি, নিরিবিলি, পৌষি, ঝাউবন, রোদেলা ইত্যাদি উল্লেখ্য। এখানে ভাত, ডাল, দেশি মুরগি, খাঁসি, গরু, কবুতর,  বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও মাছের ভর্তা ইত্যাদি খেতে পারবেন।

এছাড়া উন্নত মানের খাবার খেতে কেওএফসি (KFC) রয়েছে। কম টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরানি খেতে লাবনী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতের পাশে হান্ডি রেস্তোরাঁ থেকে ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে সুস্বাদু বিরানি খেতে পারবেন।

যারা কক্সবাজার যাবেন তারা অবশ্যই কোরাল মাছের বারবিকিউ খেয়ে দেখতে পারেন। পর্যটকদের কাছে কোরাল মাছের বারবিকিউ খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার।

রামু রাবার বাগান ভ্রমণ পরামর্শ ও সর্তকতা

  • রাবার বাগানের মধ্যে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
  • রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় চুল্লির কাছে যাবেন না কারণ, চুল্লিতে সব সময় আগুন থাকে।
  • বাগানের মধ্যে দিয়াশলাই, বিড়ি-সিগারেট কিছু নিবেন না, অঘটন ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
  • অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে শীতের সময় কষ উৎপাদন বেশি হয়, তাই এই সময় রাবার বাগানে ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।
  • বাগানে প্রবেশের কোনো বিধিনিষেধ নেই, তবে কারখানায় প্রবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন আছে। 
  • রেস্তোরাঁয় খাওয়ার আগে দাম জেনে তারপর খাবেন।

রামু বৌদ্ধ মন্দি

Similar Posts