রিসাং ঝর্ণা, খাগড়াছড়ি

রিসাং ঝর্ণা (Risang waterfall) খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামে অবস্থিত একটি পাহাড়ি ঝর্ণা। স্থানীয় মানুষের কাছে এই ঝর্ণা সাপ মারা রিসাং নামেও পরিচিত। ১৯৯৩-৯৪ সালে প্রাকৃতিক এই ঝর্ণাটি আবিষ্কার হয় বলে জানা যায়।

রিছাং শব্দটি এসেছে খাগড়াছড়ির মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা থেকে। রিং শব্দের অর্থ পানি এবং ছাং শব্দের অর্থ উঁচু স্থান থেকে কোনো কিছু গড়িয়ে পড়াকে বুঝায়। অর্থাৎ রিছাং শব্দের অর্থ উঁচু স্থান থেকে পানি গড়িয়ে পড়াকে বুঝায়। রিছাং ঝর্ণার অপর নাম তেরাং তৈকালাই।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে এই ঝর্ণার অবস্থান। রিসাং ঝর্ণা থেকে ২০০ গজ ভিতরে গেলে আরো একটি ঝর্ণা রয়েছে। যা রিছাং ঝর্ণা ২ বা অপু ঝর্ণা নামে পরিচিত। এই ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য পাকা সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে।

১০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে পড়া ঝর্ণা প্রাকৃতিক ওয়াটার স্লাইডিং এর সৃষ্টি হয়েছে। ঝর্ণায় সিঁড়ি বেয়ে যাওয়ার সময় চারিদিকে সবুজের সমারোহ আপনাকে মুগ্ধ করবে।

খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার, মাটিরাঙ্গা উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এবং খাগড়াছড়ি টু ঢাকা মেইল রোড থেকে ১ কিলোমিটার দক্ষিণে এই ঝর্ণা অবস্থিত।

রিসাং ঝর্ণা কিভাবে যাবেন

রিসাং ঝর্ণা দেখার জন্য প্রথমে আসতে হবে খাগড়াছড়ি সদর শহরে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সিএনজি বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি ঝর্ণায় যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গাড়ি থেকে নেমে ৫০০ মিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে।

আবার খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনাল থেকে লোকাল বাসে চড়ে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আলুটিলা গুহার সামনে নামবেন। এরপর ২ কিলোমিটার দূরে মেম্বার এলাকায় যেতে জনপ্রতি ৫ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে যেতে পারেন অথবা পায়ে হেঁটে বা বাইকে চড়ে যেতে পারবেন। যাওয়ার জন্য বাইক ভাড়া ৫০ টাকা এবং আসার জন্য বাইক ভাড়া ৫০ টাকা। মোট যাওয়া-আসা জনপ্রতি ১০০ টাকা।

আপনারা সংখ্যায় বেশি হলে ২,০০০-৩,০০০ টাকায় চান্দের গাড়ি এবং সংখ্যায় কম হলে ৮০০-১,০০০ টাকায় সিএনজি রিজার্ভ করে রিসাং ঝর্ণা ঘুরে দেখে আসতে পারবেন। এই ঝর্ণার পাশে আলুটিলা গুহা, বৌদ্ধ মন্দির, দেবতা পুকুর, ঝুলন্ত ব্রিজ সহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলো দেখে আসবেন।

চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি

চট্টগ্রাম অক্সিজেন মোড থেকে শান্তি পরিবহন বা বিআরটিসি পরিবহনে সরাসরি খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। সকাল ৭ টা থেকে প্রতি ঘন্টা পরপর বাস ছেড়ে যায়।

এছাড়া অনেক লোকাল বাস খাগড়াছড়ি যায়। লোকাল বাসে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টার মতো।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনে সরাসরি খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন।

এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকা পর্যন্ত। যেতে সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা। বাস ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা গিয়ে খাবার জন্য যাত্রাবিরতি করবে।

কোথায় খাবেন

খাগড়াছড়ি সদর বাস টার্মিনাল ও শাপলা চত্বর এলাকায় খাবার জন্য অনেক খাবার হোটেল রয়েছে। এখান থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

এছাড়া পানথাই পাড়ায় অবস্থিত সিস্টেম রেস্তোরাঁ থেকে দেশি খাবার ও পাহাড়ি স্বাদের খাবার খেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়ি শহরের মধ্যে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল ভেদে থাকার জন্য রুম ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত। হোটেল দেখে পছন্দ হলে দামাদামি করে রুম ভাড়া নিবেন।

হোটেল রাজু আবাসিক: খাগড়াছড়ি কলেজ রোডে অবস্থিত। ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01550-606056

গাংচিল আবাসিক হোটেল: খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত। ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01878-332663

হোটেল আবকাশ আবাসিক: খাগড়াছড়ি বাস স্টেশনে অবস্থিত। ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01819-016668

হোটেল গ্রীন স্টার আবাসিক: খাগড়াছড়ি শহরের চাঙ্গী ব্রিজের পাশে অবস্থিত। রুম ভাড়া ১,২০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ: 01994-855114

হোটেল নূর আবাসিক: খাগড়াছড়ি শহরে কোর্ট রোডে অবস্থিত। ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ৩,৫০০ টাকা পর্যন্ত।যোগাযোগ: 01555-778899

আরো পড়ুন

Leave a Comment