লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত (Laboni point sea beach) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরতে আসলে প্রথম লাবনী পয়েন্ট থেকে সমুদ্র সৈকত দেখা শুরু হবে।
লাবণী বিচ (laboni beach) কক্সবাজার শহরের খুবই নিকটে অবস্থিত। শহর থেকে কয়েক মিনিট পথ পায়ে হেঁটে গেলে লাবণী পয়েন্ট বা লাবণী বিচে যেতে পারবেন। এখানে খুব ভেরে ঘুরতে গেলে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, নৌকা বা সাম্পান দেখতে পাবেন।
এই বিচে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকেরা ঘুরতে আসে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত এবং এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখতে পাবেন।
দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে ভ্রমণ করতে আসে। এখান থেকে নীল দিগন্ত সমুদ্রের জলরাশির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। বিশেষ করে চাঁদনী রাতে সমুদ্র সৈকতে হাঁটা সত্যিই রোমাঞ্চকর।
লাবণী পয়েন্ট একটি মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এই সমুদ্র সৈকত তার রূপ পরিবর্তন করে। বসন্ত, বর্ষা, শীত, গ্রীষ্ম এই সৈকতের রূপ বদলায়, একেক সিজনে একেক রকম রূপ ধারণ করে।
এখানে সমুদ্রের গোসল করা, সৈকতে হাঁটা, স্পিড বোট চালানো, হর্সরাইডিং, বীচ বাইক চালানো, জেট স্কী, খাটে শুয়ে সমুদ্র দেখা, সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবেন। লাবণী পয়েন্ট থেকে সোজা পূর্ব দিকে হেঁটে হিমছড়ির দিকে যেতে পারবেন।
লাবণী পয়েন্টে পাবেন ভ্রামামান লকার, সেখানে আপনার গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র জমা রেখে সমুদ্রের পানিতে গোসল করতে পারবেন। এই ভ্রামামান লকার কক্সবাজার জেলা প্রশাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই এখানে নিরাপদে জিনিসপত্র জমা রাখতে পারেন। ঘন্টাপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা। তবে, আমার পরামর্শ আপনি মূল্যবান জিনিসপত্র হোটেলে রেখে আসবেন।
যারা সমুদ্র স্নান করতে নামবেন তারা জোয়ার ভাটার সময় জেনে তারপর সমুদ্রে নামবেন। কারণ, সমুদ্র স্নান করতে প্রতি বছর এখানে হৃদয় বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে। তাই সমুদ্র স্নান করতে নামার আগে পর্যটকদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ছোট বড় অনেক দোকান বসে, যা পর্যটকদের আকর্ষন করে। এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহিরের জিনিসপত্র এখানকার মার্কেট গুলোতে পাওয়া যায়।
হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মোৎসব শারদীয় দূর্গা পূজার বিজয় দশমীতে এখানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়। প্রতিমা বিসর্জনের সময় সৈকতে লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখতে পাবেন। কক্সবাজার জেলা সহ আসেপাশের প্রতিমা বিসর্জনের এজন্য এখানে নিয়ে আসে।
কিভাবে লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত যাবেন
লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার শহরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য সায়েদাবাদ, গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে গ্রীন লাইন, শ্যামলী পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন সহ আরো বিভিন্ন পরিবহন সরাসরি ঢাকা টু কক্সবাজার রুটে চলাচল করে।
এসি, নন-এসি বাস ভেদে ঢাকা টু কক্সবাজার রুটে ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ২,৬০০ টাকা পর্যন্ত। বাসে যেতে সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘন্টার মতো। ঢাকা বাস টার্মিনাল থেকে রাত ১০ টায় বাস ছাড়লে সকাল ৭টার মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন।
ট্রেনে ঢাকা টু কক্সবাজার যেতে কমলাপুর রেলস্টেশন বা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারবেন। সিট ক্লাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১,৭৫০ টাকা পর্যন্ত।
আপনার ভ্রমণ বাজেট বেশি থাকলে বিমানে ঢাকা টু কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমান বন্দর যেতে পারবেন। বিমান সিট ক্লাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। যেতে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় লাগে।
দেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে কক্সবাজারগামী বাসে এসে কলাতলী সি-বিচ রোডে নেমে পায়ে হেঁটে বা অটোরিকশা করে লাবণী পয়েন্ট যেতে পারবেন। এখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত।
লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে কোথায় থাকবেন
লাবণী বিচে ঘুরতে এসে থাকর জন্য কক্সবাজার শহরে প্রায় ৫০০ হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। আপনার বাজেটের মধ্যে হোটেল খুঁজে সেখানে থাকতে পারবেন। সমুদ্র সৈকত থেকে যত দূরে হোটেল ভাড়া নিবেন ততই কম টাকায় থাকতে পারবেন।
কম টাকায় হোটেল খুঁজতে কলতলী বিচ থেকে একটু দূরে রং বিচ হোটেলের সামনের উল্টো পাশের গলিতে কম টাকায় ভালো হোটেল বা রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। নতুন হলে সিএনজি বা রিকশাওলা মামাদের কাছে শুনতে পারেন। কক্সবাজার সরকারি হোটেল ও ৫০০ টাকায় কক্সবাজার হোটেল তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
নিচে মিডিয়ায় বাজেটের মধ্যে কয়েকটি হোটেল বা রিসোর্টের নাম উল্লেখ করা হল।
৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা: কক্স টুড, হেরিটেজ, লং বীচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট ইত্যাদি।
৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা: সী প্যালেস, কোরাল রীফ, সী ক্রাউন, বীচ ভিউ, সী গাল, নিটোল রিসোর্ট, ইউনি রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া ইত্যাদি।
৮০০ থেকে ৩,০০০ টাকা: সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, কোরাল রীফ, মিডিয়া ইন, নীলিমা রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট, ইকরা বিচ রিসোর্ট, উর্মি গেস্টন হাউজ, কল্লোল, অভিসার ইত্যাদি।
লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে কোথায় খাবেন
লাবণী বিচ কক্সবাজার শহরের নিকটে অবস্থিত হওয়ার খাওয়ার জন্য অনেক রেস্তোরাঁ পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আপনি যে হোটেল বা রিসোর্টে থাকছেন সেখানে খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টে আছে কিনা জেনে নিবেন। প্রত্যেকটি রিসোর্টে খাওয়া জন্য রেস্টুরেন্ট থাকে।
লাবণী পয়েন্টের আশেপাশে মিডিয়াম বাজেটের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্তোরাঁ হল পৌষি, ধানসিঁড়ি, রোদেলা, ঝাউবন, নিরিবিলি ইত্যাদি। এই সব রেস্টুরেন্ট গুলোতে দেশি বিদেশি সব রকমের খাবার খেতে পারবেন।
এই সব রেস্টুরেন্ট থেকে সমুদ্রের ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের মাছ কিনে বারবিকিউ বানিয়ে খেতে পারবেন। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি খাবার হল বারবিকিউ।
আপনি যে রেস্টুরেন্টে খাবেন না কেন অবশ্যই খাবার আগে দামাদামি করে তারপর খাবেন।
কোথায় থেকে কেনাকাটা করবেন
কক্সবাজার শহর থেকে নিকটের কারণে লাবণী বিচকে কক্সবাজারের প্রধান বিচ বা সৈকত বলা হয়। এই বিচের নিকটে ছোট, বড় অনেক দোকান দেখতে পাবেন। পর্যটকদের জন্য বিচের পাশেই গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট।
এই মার্কেটে সামুদ্রিক নানা রকমের ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্র দেখতে পাবেন, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাছাড়া ঝিনুকের উপর আপনার নাম বা প্রিয়জনের নাম লিখে নিতে পারবেন।
ঝিনুক মার্কেটে দেশীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র পাবেন।
এছাড়া সমুদ্র সৈকতের পাশে শুটকি মাছের দোকান দেখতে পাবেন। সেখান থেকে সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের শুটকি পাবেন। চাইলে নিজের পরিবারের জন্য শুটকি মাছ কিনে আনতে পারেন।
লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ টিপস
- সমুদ্র সৈকত আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলবেন না।
- অফসিজনে গেলে কম টাকা খরচ হবে।
- সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিবেন।
- কম খরচে থাকার জন্য সৈকত থেকে দূরে হোটেল বা রিসোর্ট খুঁজবেন।
- যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া এবং কেনাকাটা করার আগে দামাদামি করে নিবেন।