ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শশী লজ (Shoshi lodge). যা স্থানীয় মানুষের কাছে ময়মনসিংহ রাজবাড়ী নামে পরিচিত। এটি দেখতে কিছুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলের মতো। ঊনবিংশ শতকে মহারাজা সূর্যকান্ত এই রাজ প্রাসাদ নির্মাণ করেন। মহারাজা সূর্যকান্ত তার দত্তক পুত্র শশীতান্ত আচার্য চৌধুরীর নামানুসারে এই প্রসাদের নামকরণ করেন শশী লজ।
পুরো প্রাসাদটি নয় একর জায়গায় উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রাসাদের মূল ফটকে ১৬ টি গম্বুজ, প্রতিটি ঘরে একই রকমের ঝুলন্ত কয়েকটি ঝাড়বাতি, নাচঘর ও স্নানঘর। মূল প্রাসাদের পিছনে রয়েছে একটি দোতলা স্নানঘর। স্নাসঘরে বসে রানী পুকুরে হাঁসের দেখতেন। গোসল করার জন্য পুকুরে রয়েছে মার্বেল পাথরে বাঁধানো ঘাট।
শশী লজের মূল ভবনের সামনে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। বাগানের মাঝখানে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরতা মর্মর মূর্তি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর জনগণ মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলে।
১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী পুনরায় প্রসাদটি নির্মাণ করেন। ১৯৫২ সালে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হিসাবে প্রসাদের মূল ভবনটি অধ্যক্ষের কার্যালয় ও দপ্তর হিসাবে ব্যবহার করা হত। ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জাদুঘর স্থাপনের জন্য শশী লজটি অধিগ্রহণ করে।
প্রসাদের আশেপাশে বেশকিছু দুষ্প্রাপ্য ও প্রাচীন গাছগাছালি রয়েছে। রয়েছে পদ্মাবাগান। প্রতিদিন দুর দুরন্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন।
শশী লজ প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচী
শশী লজ বা ময়মনসিংহ রাজবাড়ী প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। প্রতি রবিবার বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুরে লাঞ্চের জন্য ১ টা থেকে ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শৌখিন, এনা, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ সহ ময়মনসিংহগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘন্টা। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩৫০ টাকা। মাসাকান্দা বাস টার্মিনাল নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা করে শশী লজ যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে হাওর এক্সপ্রেস (রাত ১০:১৫ মিনিট), ব্রক্ষপুত্র এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিট), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল ৪:৪৫ মিনিট), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর ১:১৫ মিনিট) ও তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল ৭:৩০ মিনিট) থেকে পছন্দসই ও সময় অনুযায়ী ট্রেনে সরাসরি ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। শ্রেণীভেদে ভাড়া ১২০ টাকা থেকে ৫০১ টাকা। ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে শশী লজ যেতে পারবেন। ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ২৫ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ময়মনসিংহ শহরের থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল হেরা, হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল নাইট স্টার আবাসিক হোটেল খান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মুস্তাফিজ উল্লেখযোগ্য।
আপনার পছন্দ ও বাজেটের মধ্যে এসব আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে যেকোনো একটিতে থাকতে পারেন। ময়মনসিংহ আবাসিক হোটেল ভাড়া কত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
কোথায় খাবেন
ময়মনসিংহ শহরে খাবার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল ধানসিঁড়ি, হোটেল সারিন্দা, হোটেল রাজধানী, আভান্তী রেস্টুরেন্ট, সরগরম রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শহরের প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাও খেতে পারেন।
ময়মনসিংহ আরো দর্শনীয় স্থান
শশী লজ ছাড়াও ময়মনসিংহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান সমূহ রয়েছে। এর মধ্যে মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট, ইস্টার্ন হেরিটেজ রিসোর্ট ময়মনসিংহ, অন্য ভুবন রিসোর্ট ময়মনসিংহ, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, মুক্তাগাছা মজিদার বাড়ি, বিপিন পার্ক উল্লেখযোগ্য।