শাপলা বিল বরিশাল

শাপলা বিল বরিশাল জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে অবস্থিত। সাতলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার আবারিত রঙ্গিন রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এক পলক দেখলে মনে হবে পুরো বিল জুড়ে লাল শাপলার চাদর বিছানো।

ঠিক কত বছর ধরে এই বিলে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যাননি। স্থানীয় ষাটোর্ধ কয়েকজন বলেন তাদের জন্মের পর থেকে তারা এই সাতলা বিলে শাপলা ফুল ফুটতে দেখছেন। লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলার সংখ্যা বেশি।

লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে যেকারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। মনোমুগ্ধকর এই সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। দর্শনার্থীরা নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ায়। যারা ছবি তুলতে পছন্দ করেন তাদের জন্য আদর্শ জায়গা।

সাতলা বিলের শাপলা ফুল শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয় বরং এখান থেকে শাপলা তুলে স্থানীরা বাজারে বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। কেউবা আবার বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শীত মৌসুমে বিলের পানি কমে হলে ধান চাষ করেন কৃষকরা।

BM Khalid Hasan Sujon

শাপলা বিল বরিশাল যাওয়ার উপযুক্ত সময়

বছরের তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সাতলা বিলে শাপলা ফুল ফুটে। এসময় সাতলা বিলে গেলে হাজার হাজার লাল শাপলা ফুল দেখতে পাবেন। শাপলা বিলের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে খুব ভোরে সূর্য উঠার আগমুহূর্তে পৌঁছাতে হবে।

কিভাবে যাবেন

শাপলা গ্রাম সাতলা বিলে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে বরিশাল জেলা শহর আসতে হবে। বরিশাল থেকে বাসে চড়ে শিকারপুর নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা করে উত্তর সাতলা বিলে যেতে পারবেন। এছাড়া বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে চড়ে সরাসরি শাপলা বিল সাতলা যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার সময় উজিরপুর নতুনহাট বাস টার্মিনাল নেমে সেখান থেকে সরাসরি সিএনজি বা অটোরিকশা সাতলা শাপলা বিল যেতে পারবেন। এছাড়া বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাসে চড়ে সাতলা ও বাগধা গ্রাম যেতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল

ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, সোহাগ, ঈগল, শাকুরা, লাবিবা, ইম্পেরিয়াল, এনা, দিগন্ত, শ্যামলী পরিবহন সহ বরিশালগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে বরিশাল যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো পদ্মা সেতু পার হয়ে বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এসে থামে।

ঢাকা টু বরিশাল এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১,২০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বাস ছেড়ে যায়।

এছাড়া ঢাকা থেকে অনেক লোকাল বাস বরিশালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এসব লোকাল বাসে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে বরিশাল যেতে পারবেন।

লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল

ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বহু লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অধিকাংশ লঞ্চ গুলো সদরঘাট থেকে রাত ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাতে যাত্রা করলে ভোর ৫ টার দিকে বরিশাল পৌঁছে যাবেন। সকালে অনেক লঞ্চ ছেড়ে সন্ধ্যায় পৌঁছায়।

BM Khalid Hasan Sujon

ঢাকা থেকে বরিশাল চলাচলকারী লঞ্চ গুলোর মধ্যে গ্রীন লাইন, এম ভি মানামী, এডভেঞ্চার ১, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৮, সুরভী ৯, পারাবত ৯, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরো বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে।

এসব লঞ্চের ভাড়া ডেক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৪,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।

কোথায় খাবেন

সাতলা গ্রামে খাবার জন্য ভালো মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট নেই। তাই সাথে করে শুকনো খাবার ও পানি নিতে পারেন। বরিশাল শহরে ফিরে গিয়ে ভালো মানের খাবার খেতে পারেন।

বরিশাল শহরে খাবার জন্য অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বরিশাল ইন, খাবার ঘর হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ, গাডেন ইন রেস্টুরেন্ট, খাবার বাড়ি রেস্তোরাঁ এন্ড সুইটমিট, আকাশ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, তামিম হোটেল উল্লেখযোগ্য।

বরিশালের বিখ্যাত সন্দেশ মিষ্টি এবং সকাল সন্ধ্যা হোটেলের লুচি সবজি ও সরমালাই অবশ্যই স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

কোথায় থাকবেন

সাতলা গ্রামে থাকার জন্য ভালো কোনো হোটেল নেই। তাই আপনাকে বরিশাল শহরে ফিরে গিয়ে রাত্রিযাপন করতে হবে।

বরিশাল শহরে থাকার জন্য ভালো মানের অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। এসব হোটেলে নিরাপদে ও কম খরচে থাকতে পারবেন। আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল রোদেলা, হোটেল গ্রান্ড প্ল্যাজা, রিচমার্ট রেস্ট হাউজ, হোটেল এথেনা, হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখযোগ্য।

বরিশাল আবাসিক হোটেল ভাড়া কত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

বরিশালের আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ

শাপলা বিল সাতলা ছাড়াও বরিশাল জেলায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাসাগর দিঘী, কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি, ভাসমান পেয়ারা বাজার, দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, কলসকাঠী জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য।