সুগন্ধা বিচ, কক্সবাজার ভ্রমণের সকল তথ্য

সুগন্ধা বিচ, কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত গুলোর মধ্যে একটি। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র কয়েক মিনিট পথ পায়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধা বিচ বা সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত দেখতে পাবেন।

সোনালি বালি, নীল দিগন্ত সমুদ্রের জলরাশির জন্য সুগন্ধা বিচ (Sugandha beach) স্থানীয় এবং পর্যটক উভয়ের কাছে জনপ্রিয় একটি স্থান। ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সুগন্ধা বিচের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু বিচ নামকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সুগন্ধা বিচ ছাড়াও আরো কয়েকটি বিচ রয়েছে। এই বিচ গুলো হল কলাতলী বিচ, ইনানী বিচ, লাবনী বিচ। কক্সবাজার শহর থেকে সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত খুব কাছে বলে পর্যটকেরা এই বিচে বেশি সময় কাটায়।

সুগন্ধা বিচ, কক্সবাজার (Sugandha Beach, Cox’s Bazar)

কক্সবাজার যতগুলো সমুদ্র সৈকত রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত। এখানে সব সময় মানুষের উপস্থিতি চেখে পড়ার মতো। কক্সবাজার শহরের খুব নিকটে হওয়ায় এখানে বেশি মানুষের উপস্থিতি থাকে।

তাছাড়া বিচের পাশে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বার্মিজ মার্কেট থাকায় পর্যটকদের কাছে এই বিচটি অত্যান্ত পছন্দনীয়। সুগন্ধা সৈকতে সম্পূর্ণ সোনালি বালি, কোথাও কাঁদা পাবেন না।

এই বিচে হাঁটা, সাঁতার কাটা, ঘোড়ায় চড়া, স্পিড বোট চালানো, ছবি তোলা, খাটে শুয়ে সমুদ্র দেখা, ভলিবল খেলা এবং সূর্যস্ত উপভোগ করতে পারবেন। এই সবকিছু উপলব্ধি করার জন্য সকল বয়সের পর্যটকদের কাছে সুগন্ধা বিচ একটি জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে।

সুগন্ধা বিচের পাশেই ঝাউবন। সারি সারি লম্বা লম্বা  ঝাউগাছে সমাহার দেখতে পাবেন। বিচে ঘোরাঘুরি করে যখন শরীর ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন এই ঝাউবনে এসে বিশ্রাম নিতে পারেন। তবে, গভীর রাত পর্যন্ত ঝাউবনে ঘোরাঘুরি করবেন না।

BM Khalid Hasan Sujon

এই বিচে ভ্রাম্যমাণ লকার পাবেন যেখানে আপনার মোবাইল সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জমা রেখে সমুদ্রের পানিতে হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং স্নান করতে পারবেন। এই ভ্রাম্যমাণ লকার গুলো জেলা প্রশাশক কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাই জিনিসপত্র হারানোর ভয় নেই। প্রতিটি ২০ টাকায় আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখতে পারবেন।

তবে আমার পরামর্শ আপনি যে হোটেলে থাকছেন সেই হোটেলে আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র গুলো রেখে তারপর সমুদ্রে গোসল করতে আসবেন।

সুগন্ধা বিচে ছবি তোলার জন্য অনেক ফটোগ্রাফার পেয়ে যাবেন। তাদের কাছ থেকে ছবি তোলার আগে অবশ্যই দাম ঠিক করে নিবেন। প্রতি পিচ ছবি ৫-১০ টাকা করে নিয়ে থাকে। তাদের বলবেন ছবি বেছে বেছে নিবো।

সুগন্ধা বিচ পয়েন্ট যাওয়ার উপায়

সুগন্ধা বিচে যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার যেতে হবে। তারপর কক্সবাজার থেকে মাত্র কয়েক মিনিট পথ পায়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধা বিচ পয়েন্ট/সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতে যেতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

বাসে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার উপায়

বাসে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার জন্য একাধিক বাস সার্ভিস গ্রীন লাইন, হানিফ পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার যায়।

বাস ও সিট-ক্লাস ভেদে ভাড়া লাগবে ১,৩০০ টাকা থেকে ২,৬০০ টাকার মধ্যে। সাধারণত এসি পরিবহনের ভাড়া বেশি হয়ে থাকে। বাসে যেতে সময় লাগবে ৯ থেকে ১০ ঘন্টার মতো। রাত ১০টায় বাস ছাড়লে সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন।

ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার উপায়

ট্রেনে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন।

পর্যটক এক্সপ্রেস বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে সাধারণ ক্যাবিনের পাশাপাশি এসি ক্যাবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। সিট ক্লাসভেদে ভাড়া লাগবে ৫০০ টাকা থেকে ১,৭৫০ টাকা পর্যন্ত।

বিমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে কক্সবাজার দ্রুত পৌঁছানোর উপায় হল বিমান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার বিমান বন্দর যেতে পারবেন। ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সহ আরো বেশ কয়েকটি বিমান প্রতিদিন ঢাকা টু কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানে যেতে সময় লাগে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা। সিট-ক্লাস ভেদে ভাড়া ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে। কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে সুগন্ধা বিচে যেতে অটোরিকশায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগবে। ভাড়া জনপ্রিয় ১৫ টাকা।

কক্সবাজার শহর থেকে সুগন্ধা বিচে যাওয়ার উপায়

কক্সবাজার জেলা শহর থেকে হেঁটে ৫ থেকে ৭ মিটিনের পথ সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত। বলা যায় কক্সবাজার শহরের একেবারে কাছে অবস্থিত সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত। আমার পরামর্শ এইটুকু পথ আপনি হেঁটে যাবেন।

সুগন্ধা বিচে কোথায় থাকবেন

সুগন্ধা বিচ পয়েন্ট এর পাশেই আপনি থাকার জন্য অনেক গুলো হোটেল বা রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। আপনার পছন্দসই এবং বাজেটের মধ্যে হোটেল ভাড়া নিবেন। নিচে কক্সবাজারে মিড-রেঞ্জ হোটেল সমূহের উল্লেখ করা হল।

হোটেল ইলাফ ইন্টারন্যাশনাল: সুগন্ধা বিচ পয়েন্ট এর পাশে অবস্থিত হল হোটের ইলাফ ইন্টারন্যাশনাল। এখানে আপনার বাজের মধ্যে থাকা, বুফে, মিনি-বার, ওয়াইফাই, ফ্ল্যাট স্কিন টিভি এবং গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা পাবেন। ঠিকানা – প্লট # ৫২, ব্লক-বি, সুগন্ধা পয়েন্ট, কক্সবাজার। আনুষ্ঠানিক খরচ ২,৭০০ টাকা।

লাইটহাউজ ফ্যামিলি রিট্রিট: কক্সবাজারে কম খরচে থাকার জন্য সেরা হোটেল লাইটহাউজ ফ্যামিলি রিট্রিট। এখানে দেশি-বিদেশি খাবার সহ, বারবিকিউ পাবেন। এছাড়া রয়েছে গাড়ি পার্কিং সুবিধা। ঠিকানা – লাইট হাউজ রোড, বাড়ি নং ৮৪, কক্সবাজার ৪৭০০। আনুমানিক খরচ ১,৩০০ টাকা।

হোটেল বিচ পার্ক: সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতের পাশে অবস্থিত হোটেল বিচ পার্ক। মিড-রেঞ্জের মধ্যে থাকতে চাইলে এই হোটেলটি ভালো সার্ভিস পাবেন। এখানে এসি, নন-এসি রুম সহ, ওয়েলকাম ড্রিংকস, ব্রেকফাস্ট, ফ্ল্যাট-স্কিন টিভি, রেফ্রিজারেটরসহ সকল সুবিধা পাবেন। ঠিকানা – প্লট ৪, ব্লক – সি, কলাতলী মেইল রোড, কক্সবাজার। আনুমানিক খরচ ২,৫০০ টাকা।

হোটেল কোস্টাল পীস: মিড-রেঞ্জের মধ্যে থাকার জন্য জনপ্রিয় হোটেল কোস্টাল পীস। থ্রি-স্টার এই হোটেলে পাবেন লন্ড্রী, ওয়াইফাই, জরুরী ডাক্তার সেবা, গাড়ি পার্কিং সহ আরো বিভিন্ন সুবিধা। এছাড়া কফিশপ, বুফে, আ লা কারটে মেন্যু, বারবিকিউ, সি-ফুডসহ আরো বিভিন্ন খাবার ব্যবস্থা। ঠিকানা – বাড়ি ৬, ব্লক – বি, কলাতলী, কক্সবাজার। আনুমানিক খরচ ২,০০০ টাকা।

রয়্যাল বীচ রিসোর্টে: সুগন্ধা বিচের পাশেই অবস্থিত থ্রি স্টার রয়্যাল বীচ রিসোর্ট। এখানে ব্রেকফাস্ট, কফি শপ, রেস্টুরেন্ট পার্কিং সহ নানা ধরনের সুবিধা পাবেন। ঠিকানা – প্লট #বি, ৬৪ পি.ডব্লিউ.ডি হোটেল জোন, কলাতলী, কক্সবাজার। আনুষ্ঠানিক খরচ ১,৮০০ টাকা।

৫০০ টাকায় কক্সবাজার হোটেলকক্সবাজার সরকারি হোটেল তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

সুগন্ধা বিচে কোথায় খাবেন

সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে যতগুলো হোটেল বা রিসোর্ট রয়েছে সকল হোটেল বা রিসোর্টে খাবার জন্য রেস্টুরেন্টে রয়েছে। আপনি যে হোটেল বুকিং করছেন সেখানে রেস্টুরেন্ট বা খাবার ব্যবস্থা আছে কিনা জেনে নিবেন।

যদি সেখানে খাবার ব্যবস্থা না থাকে বা আপনি বাহিরে থেকে খাবার খেতে চাচ্ছেন তাহলে নিচে কক্সবাজারের জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্টুরেন্টের নাম উল্লেখ করা হল। এই রেস্টুরেন্ট গুলো থেকে আপনি খাবার খেতে পারবেন।

শালিক রেস্তোরাঁ: কক্সবাজারে সস্তা ও সুস্বাদু খাবারের জন্য ডলফিন মোড়ে শালিক রেস্তোরাঁ জনপ্রিয়। এখানে সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবার ৭০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। এখানে দেশি মুরগি, খাঁসি, গরুর কালো ভুনা, ডিম, চিকেন, সামুদ্রিক মাছ সবকিছু বেশ সুলভ মূল্যে পেয়ে যাবেন।

ঝাউবন হোটেল: কক্সবাজার সায়মান রোডে নামকরা বাংলা হোটেল ঝাউবন। এখানে ৫০০ টাকার মধ্যে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারবেন। এখানে ভাত, ডাল, ভর্তা, সামুদ্রিক মাছ, দেশি মুরগি, হাঁস, কবুতর, গরু, খাঁসি খেতে পারবেন। এখানে জনপ্রিয় দুইটা খাবার হলো কোরাল মাছের কারি ও লইট্রা ফ্রাই।

আল গণি হোটেল: কক্সবাজার পুলিশ স্টেশন রোডের পাশে আল গণি হোটেল অবস্থিত। সকাল, দুপুর ও রাতে দেশি খাবার খেতে পারবেন ৫০০ টাকার মধ্যে। এখানে ভাত, খিচুড়ি, সবজি, দেশি মুরগি, হাঁস, কবুতর, খাঁসি, গরুর কালো ভুনা পাবেন। এখানে সামুদ্রিক মাছ ও মাছের সুস্বাদু ভর্তা পাবেন।

হোটেল পউষী: কক্সবাজার ডলফিন মোড়ে অবস্থিত হোটেল পউষী। এখানে সকাল, দুপুর, রাতে মাত্র ৬০০ টাকার মধ্যে ভালোভাবে খেতে পারবেন। এখানে সামুদ্রিক মাছ, মুরগী, হাঁস, কবুতর, খাঁসি, গরু পাবেন। এছাড়া সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ পাবেন।

পালংকি রেস্তোরাঁ: ইনানী বিচের পাশেই পালংকি রেস্তোরাঁ অবস্থিত। এখানে মাত্র ৬০০ টাকার মধ্যে বাঙালি, ভারতীয়, থাই ও ইতালীয় খাবার খেতে পারবেন। ৫০০ টাকার মধ্যে গ্রীলড সি ফুড পাবেন, যা অন্যান্য রেস্তোরাঁ থেকে বেশ সস্তা।

সর্তকতা: হোটেলে খাবার আগে কোন খাবারের দাম কত দরদাম করে তারপর খাবেন।

কোথায় থেকে কেনাকাটা করবেন

সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে এসে এখানকার স্থানীয় জিনিসপত্র কিনবেন সেটা কি হয়। সুগন্ধা বিচের পাশেই স্থানীয় অনেক দোকান দেখতে পাবেন। এখানে নানা রকমের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সামুদ্রিক শামুক, ঝিনুক দিয়ে তৈরি করা অসাধারণ সব শো পিস।

আপনার হাতে যদি সময় থাকে তাহলে বিচের পাশে বার্মিজ মার্কেটে গিয়ে নিজের এবং পরিবারের জন্য অসাধারণ সব জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারবেন। এখান থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করার আগে দামাদামি করে কিনবেন।

সর্তকতা অবলম্বন

  • সমুদ্র সৈকত আমাদের রাষ্ট্র সম্পদ, তাই যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলবেন না।
  • সৈকত থেকে প্রবাল, পাথর আনবেন না।
  • হোটেলে খাবার আগে দামাদামি করে খাবেন।
  • জিনিসপত্র কেনার আগে অবশ্যই দামাদামি করে কিনবেন।
  • গভীর রাত পর্যন্ত ঝাউবনে ঘোরাঘুরি করবেন না।
  • কোনো দালাল চক্রের খপ্পরে পড়লে ট্যুরিস্ট পুলিশকে অবগত করবেন।

FAQ (প্রশ্ন উত্তর)

সুগন্ধা বীচের নতুন নাম কি?

সুগন্ধা বীচের নতুন নাম বঙ্গবন্ধু বীচ নামকরণ করা হয়।

আরো পড়ুন