আপনারা যারা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সকল তথ্য তুলে ধরবো। অর্থাৎ সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুন্দর একটি গাইডলাইন দিবো।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আরেকটি নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি দ্বীপ।
এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। এই দ্বীপে প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে বলে স্থানীয় লোকেরা একে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে থাকে।
অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দ্বীপটি বাংলাদেশের সেরা পর্যটন স্থান গুলো মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। এখানে নীল সাগরের জলরাশি এবং সারি সারি নারিকেল গাছ এই দ্বীপকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের আয়তন মাত্র ৮ কিলোমিটার। এখানে প্রতি বছর দেশ বিদেশ থেকে ৩ লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ কোন জেলায় অবস্থিত
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এটা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের একটি ইউনিয়ন। স্থানীয় মানুষের মতে এই দ্বীপের অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এসময় শীতের কারণে আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, অন্যদিকে গরম কম থাকে।
এই দ্বীপে পর্যাপ্ত পরিমান বিদ্যুৎ না থাকায় জন্য গরমের মৌসুমে ভ্রমণ করা অনেক কষ্টকর। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে, তাই এসময় ভ্রমণের কথা চিন্তা না করা ভালো।
নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করলে সুন্দর পরিবেশে সবকিছু উপভোগ করতে পারবেন। তবে, এসময় পর্যটকদের চাহিদা বেশি থাকায় হোটেল, রিসোর্ট ভাড়া অনেক বেশি গুনতে হয়।
সহজে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
সহজে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে টেকনাফ। কারণ এখান থেকে সেন্টমার্টিন যাবার বেশিরভাগ শীপ গুলো ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি এসি, নন-এসি বাস টেকনাফ যায়।
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে শীপে বা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সহজ। আপনি যদি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে চান তাহলে “এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস” শীপে সরাসরি যেতে পারবেন।
এছাড়া নতুন করে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য নতুন এমভি ওয়ান শীপ চালু হয়েছে। এই শীপে করে সরাসরি চট্টগ্রাম টু সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।
বাসে ঢাকা থেকে টেকনাফ যাওয়ার উপায়
বাসে ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যাওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে সেন্টমার্টিন পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, রয়েল কোচ, গ্রীন লাইন সহ আরো বিভিন্ন বাসে টেকনাফ যেতে পারবেন।
বাস ও ক্লাস অনুযায়ী ভাড়া ১১০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে। ঢাকা থেকে বাসে রাত ৮-১০ টার সময় রওনা দিয়ে সকাল ৮টার মধ্যে টেকনাফ পৌঁছে যাবেন।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতিদিন টেকনাফ জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিন কয়েকটি জাহাজ/শীপ চলাচল করে। টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন রুটে সরাসরি চলাচল করা শীপ গুলোর মধ্যে এম ভি ফারহান, এম ভি গ্রীন লাইন, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রজ এন্ড ডাইন, আটলান্টিক ইত্যাদি।
শীপে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। শীপের মান ও সিট ক্লাস অনুযায়ী যাওয়া আসার ভাড়া ৮৫০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে শীপ গুলো প্রতিদিন সকাল ৯:০০ থেকে ৯:৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ৩:৩০ মিনিট টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।
সাধারণত শীপ গুলোতে যাওয়া আসার টিকেট সহ হয়ে থাকে। সেন্টমার্টিন থেকে কবে ফিরবেন তা উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া ট্রলারে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ট্রলার ভাড়া জনপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা। ট্রলারে যেতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। এছাড়া স্পিড বোটে যেতে পারবেন। তবে, শীপে যাওয়া সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ।
কিভাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন
বাসে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য গাবতলী, কলাবাগান, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন গ্রীন লাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, সৌদিয়া, শ্যামলী পরিবহন সহ আরো অনেক পরিবহন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
বাস ও সিট-ক্লাস ভেদে ভাড়া সাধারণত ১৩০০ টাকা থেকে ২৬০০ টাকার মধ্যে। ট্রেনে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারবেন। ট্রেন ভাড়া সিট ক্লাস ভেদে ৫০০-১,৭৫০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া ঢাকা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার থেকে পারবেন। বিমান ভাড়া জনপ্রতি ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। বিমানে যেতে সময় লাগবে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন জাহাজ/শীপে যেতে পারবেন। প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে কর্ণফুলি এক্সপ্রেস শীপ সকাল ৭:০০ টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং বিকাল ৩:০০ টায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।
সেন্টমার্টিন যাওয়া আসার টিকেট একই সাথে হয়ে থাকে। তাই কবে সেন্টমার্টিন থেকে ফিরবেন সেটা বলতে হয়। শীপে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ভাড়া জনপ্রতি সিট ভেদে ২,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন সরাসরি জাহাজ/শীপে যেতে পারবেন। এমভি বে ওয়ান শীপ পতোঙ্গা বন্দর থেকে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সকাল ৭ টায় সেন্টমার্টিন পৌঁছায়।
আবার সেন্টমার্টিন থেকে সকাল ১১ টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে এবং সন্ধ্যা ৭ টায় পতোঙ্গা বন্দরে পৌঁছায়। যাওয়া আসার টিকেট সহ সিট ক্লাস ভেদে ভাড়া ৪,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ হোটেল ভাড়া / রিসোর্ট ভাড়া
সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে থাকার জন্য হোটেল বা রিসোর্ট ভাড়া করতে হবে। যাওয়ার আগে হোটেল বুকিং করে যাওয়া সুবিধাজনক। চাইলে সেখানে গিয়ে দেখে শুনে দরদাম করে পছন্দের হোটেল ভাড়া করতে পারবেন।
নিচে কম খরচে সেন্টমার্টিনের জনপ্রিয় কয়েকটি হোটেল রিসোর্টের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে –
(১) নীল দিগন্ত রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচের কোণাপাড়ায় অবস্থিত। এটা জেটিঘাট থেকে বেশ কিছু দুরে অবস্থিত। এখানে কটেজ টাইপের রুমে জনপ্রতি থাকতে খরচ হবে ১,৫০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা। অগ্রিম বুকিং করতে যোগাযোগ: ০১৭৩০-০৫১০০৫, ০১৭৩০-০৫১০০৯।
(২) ড্রিম নাইট রিসোর্ট: সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম বীচের শেষ প্রান্তে এই রিসোর্টটি অবস্থিত। এখানে প্রত্যেকটি রুমে ২ থেকে ৪ জন পর্যন্ত রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। জনপ্রতি থাকতে খরচ হবে ১,৫০০ টাকা থেকে ৩,৫০০ টাকা পর্যন্ত। অগ্রিম বুকিং করতে যোগাযোগ: ০১৭০৩-২৮৫৬০৭, ০১৬৭১-৬০৫৯৬৪।
(৩) দি আটলান্টিক রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম বীচে অবস্থিত। এখানে থাকার জন্য মোট ৪৩টি রুম আছে। এখানে থাকতে খরচ হবে ৩,৫০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত। অগ্রিম বুকিং করতে যোগাযোগ: ০১৭০০-৯৬৯২১২, ০১৮৩৪-২৬৭৯২২।
(৪) বলু মেরিন রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের ফেরিঘাটের পাশে অবস্থিত। এখানে এসিযুক্ত ডাবল রুমে থাকার খরচ ১৫,০০০ টাকা, নন-এসি রুম ৫,০০০ টাকা, ট্রিপল নন-এসি রুম ৩,০০০ টাকা, ছয়জনের নন-এসি রুম ৪,০০০ টাকা এবং দশ জনের রুম ৫,০০০ টাকা। অগ্রিম বুকিং করতে যোগাযোগ: ০১৭১৩-৩৯৯০০০।
(৫) সায়রী ইকো রিসোর্ট: সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচে নজরুল পাড়ায় এই রিসোর্টটি অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ১৮টি রুম আছে। থাকার জন্য আপনার খরচ হবে ১,৫০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত। অগ্রিম বুকিং করতে যোগাযোগ: ০১৭১১-২৩২৯১৭, ০১৬১০-৫৫৫৫০০।
(৬) প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট: সেন্টমার্টিন বাজারের মধ্যে বলু মেরিন রিসোর্ট রেখে আরো কিছুটা উত্তর দিকে এগিয়ে গেলে প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট দেখতে পাবেন। এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৬টি রুম আছে। যেকোনো একটি রুমে থাকার জন্য খরচ হবে ২,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা। অগ্রিম বুকিং করতে যোগাযোগ: ০১৯৯৫-৫৩৯২৪৮, ০১৫৫৬-৩৪৭৭১১, ০১৮৮৩-৬২৬০০৩।
সেন্টমার্টিন কোথায় খাবেন
সেন্টমার্টিনের অধিকাংশ হোটেল বা রিসোর্ট গুলোতে পর্যটকদের খাবার ব্যবস্থা থাকে। আপনি যে হোটেলে থাকবেন সেখানে খাবার ব্যবস্থা আছে কিনা জেনে নিবেন। যদি খাবার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে বাহিরের রেস্তোরাঁ থেকে খেতে পারবেন।
সেন্টমার্টিন বাজারে খাবার জন্য অনেক গুলো হোটেল বা রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেসব হোটেল বা রেস্তোরাঁ থেকে খেতে পারবেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল হাজী সেলিম পার্ক, হোটেল আল্লাহর দান, আসাম হোটেল, সি বীচ, কুমিল্লা রেস্টুরেন্টে, মারজান রেস্তোরাঁ, রিয়েল রেস্তোরাঁ, হোটেল সাদেক ইত্যাদি।
প্রত্যেকটা হোটেল বা রেস্তোরাঁয় সামুদ্রিক মাছের নানা পদের সাথে বাংলা খাবারের আয়োজন থাকে। প্রতিটা রিসোর্টে বারবিকিউ ব্যবস্থা আছে। তবে, খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই খাবারের দাম যাচাই করে খাবেন।
সেন্টমার্টিনে কি কি খেতে পারবেন
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে বারবিকিউ ও ডাব। এই দ্বীপের ডাব গুলো সাইজে অনেক বড় বড় এবং অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। যারা যাবেন তারা অবশ্যই একটি করে ডাব খাবেন।
যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তারা নিজের পছন্দসই মাছ কিনে বারবিকিউ করে খেতে পারবেন। প্রত্যেকটি হোটেল বা রিসোর্টে এই বারবিকিউ ব্যবস্থা আছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছ যেমন কোরাল, রুপচাঁদা, কালাচাঁদা, ইলিশ, লবস্টার ইত্যাদি মাছের স্বাদ নিতে পারেন।
আরো আছে বিভিন্ন শুঁটকি মাছের ভত্তা। দেশি মুরগির দিয়ে বানানো কুরা খেয়ে টেস্ট করতে পারেন। আর যদি সেন্টমার্টিনের তরমুজ পান তাহলে অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। এখানকার স্থানীয় তরমুজ গুলো অনেক মিষ্টি হয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছবি

সেন্টমার্টিন গিয়ে কি কি দেখবেন
সেন্টমার্টিন গিয়ে আপনাকে কমপক্ষে দুইদিন থাকতে হবে। তাহলে আপনি পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য ঘুরে ঘুরে উপভোগ করতে পারবেন। নিচে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।
ছেড়া দ্বীপ: সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে গিয়ে ছেড়া দ্বীপের অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
স্কুবা ডাইভিং: সেন্টমার্টিন সমুদ্রের নিচের জগতে কি কি আছে সেটা দেখার জন্য স্কুবা ডাইভিং করতে পারেন।
সৈকত দেখা: পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পায়ে হেঁটে বা সাইকেল ভাড়া নিয়ে সৈকত দেখতে পারেন।
প্রবাল দেখা: সেন্টমার্টিন দ্বীপে আছড়ে পড়া ঢেউে প্রবাল, শামুখ সহ আরো বিভিন্ন সমুদ্রের জলজ প্রাণী দেখতে পারেন।
নারিকেল গাছ: সেন্টমার্টিন দ্বীপের আরেক নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। তাই এখানকার লম্বা সারি সারি সারি নারিকেল গাছের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
সেন্টমার্টিন সন্ধ্যা বাজার: প্রত্যেকদিন এই দ্বীপে বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অস্থায়ী বাজার বসে। বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়ার যায়।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খরচ ২০২৪
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খরচ কত হবে সেটা অনেকটা আপনার উপর নির্ভর করে। কারণ, আপনি কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি কি খাবেন, কি কি করবেন সবকিছু উপর নির্ভর খরচ হবে।
সিজনের সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করলে থাকা খাওয়া সহ একটু খরচ বেশি হবে। তবে, ১ দিনের জন্য কম খরচে মোটামুটি মানের হোটেলে থাকা খাওয়া সহ সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য খরচের ধারণা নিচে প্রদান করা হল। এখান থেকে আপনি খরচ সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
সেন্টমার্টিন যাতায়াত খরচ
- ঢাকা থেকে বাসের টিকেট: যাওয়া আসা ২,৫০০-২,৬০০ টাকা (নন-এসি বাস), ৩,৪০০-৪,৫০০ টাকা (এসি বাস)।
- শীপ/জাহাজ ভাড়া: যাওয়া আসা সহ ৯৫০ টাকা (ওপেন ডেক), ১,৩০০-১,৮০০ টাকা (এসি)।
- ছেড়া দ্বীপে যাতায়াত: ট্রলারে ৩০০ টাকা যাওয়া আসা।
- দ্বীপে লোকাল যাতায়াত: দ্বীপে আশেপাশে বাজারে যাতায়াত বাবদ ভ্যান ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা।
- অন্যান্য খরচ: অন্যান্য হাত খরচ ৩০০ টাকা।
সেন্টমার্টিন থাকার খরচ
স্ট্যান্ডর্ড হোটেল বা রিসোর্ট ডাবল বেড বা কাপল রুম ১,৫০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা। মোটামুটি মানের হোটেলে ১,০০০ টাকা থেকে ১,৩০০ টাকা। আরো কম টাকায় থাকতে স্থানীয় মানুষের বাড়িতে থাকতে পারবেন।
সেন্টমার্টিন খাবার খরচ
- প্রথম দিন: সকালে নাস্তা ৮০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ৩০০-৫০০ টাকা এবং রাতের খাবার ৩০০-৫০০ টাকা।
- দ্বিতীয় দিন: সকালে নাস্তা ৮০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ৩০০-৫০০ টাকা এবং রাতের খাবার ৩০০-৫০০ টাকা।
- তৃতীয় দিন: সকালে নাস্তা ৫০-৭০ টাকা, যাত্রা বিতরিততে রাতের খাবার ২০০-৩০০ টাকা।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ভ্রমণ এজেন্সি রয়েছে, যারা সিজনের সময় সেন্টমার্টিন ১ বা ২ রাত থাকা সহ যাওয়া আসা, খাওয়া সব কিছু একটা প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে।
এই প্যাকেজের খরচ নির্ভর করে কোন বাসে যাবেন, কোন জাহাজে যাবেন, কোন রিসোর্টে থাকবেন এসবের উপর। অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্সি গুলো প্যাকেজ নির্ধারন করে ঢাকা থেকে যাওয়া আসা সহ জনপ্রতি ৬,০০০ টাকা থেকে ৮,০০০ টাকার মধ্যে।
যারা সেন্টমার্টিন যাওয়ার বাস টিকেট, শীপ টিকেট, রিসোট বুকিং করা ঝামেলা মনে হয় তারা ভালো কোনো ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারেন।
কখন সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাবেন না
সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল করে। বাকি মাস গুলো আবহাওয়া কারণে প্রশাসন জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে।
তাই নিরাপদে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করার জন্য বাকি মাস গুলোতে সেন্টমার্টিন যাবেন না। কারণ আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউে বড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমাদের দেশের সম্পদ, তাই এমন কিছু করবেন না যাতে প্রকৃতির ক্ষতি হয়।
- সেন্টমার্টিনে মোবাইল নেটওয়ার্ক কম পায়, তাই টেলিটক সিম ব্যবহার করবেন।
- সৈকতের যেকোনো স্থানে ময়লা আবর্জনা (প্লাস্টিক/পলিথিন) ফেলবেন না।
- খাওয়ার সময় অবশ্যই দামাদামি করে খাবেন।
- রাত ১২টার পর বীচে ঘোরাঘুরি করবেন না।
- সমুদ্রে নামার আগে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
- দালানের খপ্পর থেকে এড়িয়ে চলুন।
FAQ (প্রশ্ন উত্তর)
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন কত কিলোমিটার?
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ২৬.১ কিলোমিটার। জাহাজে যেতে দুই ঘন্টা থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন কত কিলোমিটার?
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ১২০ কিলোমিটার। শীপে কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন কত?
সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপের আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার।
আরো পড়ুন
- সেন্টমার্টিন দ্বীপ হোটেল ভাড়া
- কর্ণফুলী এক্সপ্রেস কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন টিকেট
- টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ ভাড়া
- টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ট্রলার ভাড়া
- চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ ভাড়া