সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইডলাইন – ক্যাম্পিং করার সেরা স্থান

সোনাদিয়া দ্বীপ (Sonadia Island) বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার অর্ন্তগত কুতুবজোম ইউনিয়নের সুন্দর একটি দ্বীপ। ৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং করার সেরা স্থান। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণে সোনাদিয়া দ্বীপের অবস্থান।

সোনাদিয়া দ্বীপকে মহেশখালী থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে একটি খাল। এই দ্বীপের ৩ দিকে সমুদ্র সৈকত, আছে ছোট খালের সমন্বয়ে প্যারাবন, জীব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ জলাবন, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি এবং বিচিত্র প্রজাতির সব পাখি।

সোনাদিয়া দ্বীপে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো চারিদিকে নীল সমুদ্রের জলরাশি দেখতে পাবেন। কিন্তু সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো এতে মানুষ এখানে পাবেন না। যারা নিরিবিলি সময় কাটাতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এটা সেরা স্থান। আপনার মনে হয় এই দ্বীপের রাজা আপনি।

এই দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ লাল কাঁকড়ার বিচরণ, তাই অনেকে এই দ্বীপকে লাল কাঁকড়া দ্বীপ বলে। এই দ্বীপটি ২টি পাড়ায় বিভক্ত, পূর্ব পাড়া ও পশ্চিম পাড়া। পূর্ব পাড়ায় মানুষের জনবসতি তুলনামূলকভাবে বেশি। সমুদ্রে মাছ ধরা ও মাছ শুকানো, চিংড়ি মাছের পোনা ও মাছ ধরা এই দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা। এছাড়া কিছু মানুষ নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

সোনাদিয়া দ্বীপের মানব বসতির ১০০-১২৫ বছরের ইতিহাস। এখানে প্রায় ২ হাজার মানুষ বসবাস করে। এই দ্বীপে ১টি সাইক্লোন সেন্টার, ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মসজিদ ও আনুমানিক ১২টি নলকূপ আছে।

এই দ্বীপের চারিদিকে সমুদ্রের নোনা পানির কারণে তেমন কোনো খাদ্য শষ্য চাষবাদ করা যায় না। তবে এখানে তরমুজ চাষ করা হয়, যা অনেক সুস্বাদু হয়। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মহেশখালী থেকে কিনে আনতে হয়।

জীববৈচিত্র্যের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে এবং ক্যাম্পিং করার জন্য প্রত্যেক বছর হাজার হাজার পর্যটকেরা সোনাদিয়া দ্বীপে ভীড় জমাই।

সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ শীতের শুরু থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত। এই সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবং দ্বীপের পরিবেশ ভালো থাকে।

শীতকালে সোনাদিয়া দ্বীপে অনেক চেনা-অচেনা অতিথি পাখি দেখতে পাবেন। তাছাড়া বসন্তজুড়ে এখানে নানা উৎসব হয়ে থাকে।

কিভাবে সোনাদিয়া দ্বীপ যাবেন

সোনাদিয়া দ্বীপে যেতে প্রথমে আপনাকে যেকোনো যানবাহনে কক্সবাজার আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানে সরাসরি কক্সবাজার আসতে পারবেন। কক্সবাজার কাস্তুরী ঘাট বা ৬ নং জেটি ঘাট থেকে স্পিড বোটে জনপ্রতি ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে মহেশখালী দ্বীপ যেতে হবে।

স্পিড বোটে মহেশখালী যেতে সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। মহেশখালী ঘাট থেকে ২৫-৩০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করে গোরকঘাটা বাজারে আসতে হবে। গোরকঘাটা থেকে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় ইজিবাইক ভাড়া করে ঘটিভাঙায় যেতে হবে। গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙায় দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার।

ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদিয়া দ্বীপ যেতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাওয়া যায়। ঘটিভাঙা থেকে খেয় নৌকায় সোনাদিয়া চ্যানেল পার হলেই সোনাদিয়া দ্বীপ। প্রতিদিন এখান থেকে জোয়ারের সময় ট্রলার ছেড়ে যায়। আবার ট্রলারটি যাত্রী নিয়ে ফেরত আসে। ট্রলারে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ২৫ টাকা।

ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদিয়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকাল ১০টায় ট্রলার ছেড়ে যায়। তাই সকাল ১০টার আগে ঘটিভাঙ্গা ঘাটে পৌঁছে যাবেন। জোয়ার ভাঁটার সময়ের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদিয়া পশ্চিম পাড়ায় উদ্দেশ্যে কয়েকটি ট্রলার ছেড়ে যায়। ট্রলারে যেতে সময় লাগবে ৪০-৪৫ মিনিটের মতো।

ঘটিভাঙ্গা থেকে পায়ে হেঁটে সোনাদিয়া দ্বীপে যাওয়া যায়। তবে পায়ে হেঁটে যাওয়া অনেক কষ্টকর। পায়ে হেঁটে গেলে সোনাদিয়া পূর্ব পাড়ায় যেতে হবে। পূর্ব পাড়ায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেই তাই পশ্চিম পাড়া যাওয়া ভালো।

কক্সবাজার ৬ নং ঘাট থেকে সরাসরি স্পিডবোট রির্জাভ করে সোনাদিয়া দ্বীপে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া লাগবে। স্পিডবোট রির্জাভ নিয়ে ৩,০০০-৪,০০০ টাকার মধ্যে কক্সবাজার ৬ নং ঘাট থেকে সোনাদিয়া দ্বীপের পূর্বপাড়া যেতে পারবেন আর পশ্চিম পাড়া গেলে ভাড়া আর একটু বেশি লাগবে।

থাকা ও খাওয়া ব্যবস্থা

সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের থাকা খাওয়া জন্য তেমন কোনো হোটেল, রেস্তোরাঁ নেই। থাকা খাওয়ার দ্বীপের স্থানীয় মানুষের উপর ভরসা করতে হবে। টাকার বিনিময়ে তারা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

এখানে বন বিভাগের অফিস রয়েছে, চাইলে রাতে থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে থাকার জন্য কতৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন হবে।

আপনি যদি ভাবেন একদিনেই সোনাদিয়া দ্বীপে ঘুরে ফিরে আসবো বা রাতে দ্বীপে থাকবো না তাহলে আপনি দ্বীপের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন না। কমপক্ষে এখানে একদিন রাত্রিযাপন করবেন। হাতে যদি সময় থাকে তাহলে দুইদিন সময় নিয়ে সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।

সোনাদিয়া দ্বীপে যাওয়ার আগে থাকা খাওয়ার জন্য গাইডের সাথে যোগাযোগ করবেন। তারা আপনার থাকা-খাওয়ার সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব নিবে। সোনাদিয়া দ্বীপে বিশ্বস্ত দুইজন গাইড হল শামীম ভাই ০১৬৩৫-২৭৯১৪৭, গিয়াস ভাই ০১৮১২-২২৪৪১২।

সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং

ক্যাম্পিং করার জন্য বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলো দ্বীপ আছে তার মধ্যে সেরা স্থান সোনাদিয়া দ্বীপ। বন্ধুদের সাথে মিলে তাবু নিয়ে কয়েক দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন এই দ্বীপ থেকে।

সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং

বিশেষ করে চাঁদনী রাতে সমুদ্র সৈকতের পাশে ক্যাম্পিং করা আর বারবিকিউ পার্টি করা আপনার জীবনের সেরা সময় মনে হবে। তখন বুঝতে পারবেন সৃষ্টিকর্তার তৈরি করা এই পৃথিবী কত সুন্দর।

সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং করার জন্য দুইটা পাড়া আছে। একটি পূর্ব পাড়া অপরটি পশ্চিম পাড়া। ঘোরাঘুরি ও ক্যাম্পিং করার জন্য দ্বীপের পশ্চিম পাড়া সম্পূর্ণ নিরাপদ।

ক্যাম্পিং করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা

  • ক্যাম্পিং করার জন্য সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম পাড়া সম্পূর্ণ নিরাপদ, অযাচিত ঝামেলা এড়াতে দ্বীপের পূর্ব পাড়া এড়িয়ে চলুন।
  • পরিস্কার স্থানে ক্যাম্পিং করবেন।
  • ক্যাম্পিং করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র সাথে নিয়ে যাবেন, দ্বীপে পাবেন না।
  • মশা ও পোকামাকড় নিরোধক স্পে ও আগুন সাথে নিবেন।
  • দ্বীপের স্থানীয় মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করুন।
  • জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না।
  • সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় সাগরের অবস্থান সম্পর্কে ভালো করে জেনে তারপর সমুদ্রে নামবেন।

Leave a Comment