alternatetext
হযরত শাহজালাল মাজার

হযরত শাহজালাল মাজার, সিলেট

৩৬০ আউলিয়ার পূন্যভূমি সিলেটে যেসব পীর, দরবেশ শায়িত আছেন তাদের মধ্যে হযরত শাহজালাল (রঃ) অন্যতম। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে একজন বিখ্যাত পীর। এজন্য তাকে ওলিকুল শিরোমণি বলা হয়।

সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বুরহান উদ্দিনের ওপর রাজা গৌর গোবিন্দের অত্যাচারের প্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল (রঃ) তার সফরসঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে সিলেটে আগমন ঘটে। তার মাধ্যমেই সিলেট অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটে।

সকল ধর্মের মানুষের কাছে হযরত শাহজালাল (রঃ) সমাদৃত ছিলেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে প্রত্যেক দিন শতশত মানুষ হযরত শাহজালাল মাজার জিয়ারত করতে আসেন। সকল ধর্মের মানুষের কাছে এই স্থানটি অত্যন্ত পবিত্র।

হযরত শাহজালাল মাজারে কি কি দেখবেন

মাজারে উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে, এই পুকুরে অসংখ্য গজার মাছ রয়েছে। কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রঃ) ও তার ৩৬০ জন সফরসঙ্গী আউলিয়া নিয়ে সিলেটে আসার সময় এই গজার মাছ নিয়ে এসেছিলেন। মাজারে আসা দর্শনার্থীরা এই গজার মাছ দেখে আনন্দ উপভোগ করেন এবং মাছের খাবার খেতে দেন। এছাড়া মাজারের পাশে একটি কূপ রয়েছে, সেখানে সোনালী ও রূপালী রঙের মাছ রয়েছে।

হযরত শাহজালাল মাজারে অসংখ্য জালালী কবুতর দেখতে পাবেন। কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রঃ) এর আধ্যাত্নিক ক্ষমতার কথা জানতে পেরে ভারতের হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রঃ) তাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং তাকে এক জোড়া নীল ও কালো রঙের কবুতর উপহার দেন। সেই কবুতর বর্তমানে জালালী কবুতর নামে পরিচিত। মাজারে আসা দর্শনার্থীরা কবুতরদের গম ও চাউল খেতে দেন।

হযরত শাহজালাল (রঃ) কেবল একজন দরবেশ ও পীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন ইসলামের একজন বীর মোজাহিদ। তার ব্যবহৃত খড়ম, তলোয়ার, বাটি, প্লেট মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদের বাড়িতে সংরক্ষিত আছে এবং দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। দরগার দক্ষিণ দিকে দরগার মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়।

শাহজালাল (রঃ) মাজারের দক্ষিণ দিকে গ্রীলঘেরা তারকা খচিত ২ ফুট চওড়া একটি ঘর রয়েছে। এই ঘরকে তিনি চিল্লাখানা হিসাবে ব্যবহার করতেন। কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রঃ) এই চিল্লাখানায় প্রায় ২৩ বছর আরাধনা করে কাটিয়েছেন।

BM Khalid Hasan Sujon
নিদের্শনা: হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার শরীফ অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। এখানে ঘোরাঘুরি করার সময় পবিত্রতা রক্ষা করুন।

কিভাবে যাবেন

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার যেতে হলে প্রথমে আপনাকে সিলেট যেতে হবে। দেশের যেকোনো স্থান থেকে বাস, ট্রেন ও আকাশ পথে খুব সহজে সিলেট যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে সিলেট

ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটগামী এস আলম, সৌদিয়া, লন্ডন  এক্সপ্রেস, শ্যামলী, গ্রীন লাইন, এনা, হানিফ, ইউনিক, সোহাগ পরিবহন সহ যেকোনো পরিবহনে চড়ে সিলেট যেতে পারবেন। এসি/নন-এসি বাস ভেদে ঢাকা টু সিলেট ভাড়া ৭০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৩৬ কিলোমিটার এবং যেতে সময় লাগবে ৬-৮ ঘন্টা।

ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে উপবন, পারাবত, জয়ন্তিকা ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে সিলেট যেতে পারবেন। সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১,২৮৮ টাকা।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স করে সিলেট যেতে পারবেন। ঢাকা টু সিলেট বিমান ভাড়া (ইকোনমি ক্লাস) ৪,৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।

BM Khalid Hasan Sujon

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার উপায়

চট্টগ্রাম থেকে শ্যামলী, বিআরটিসি, এস আলম, গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, হানিফ, সোহাগ, এনা পরিবহন চট্টগ্রাম টু সিলেট রুটে চলাচল করে। চট্টগ্রাম টু সিলেট এসি/নন-এসি বাস ভেদে ভাড়া ৯০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম থেকে প্রতি শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস ও প্রতি সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সিলেট যায়। ট্রেনের সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ থেকে ১,৫৪১ টাকা।

সিলেট থেকে হযরত শাহজালাল মাজার যাওয়ার উপায়

সিলেট কদমতলী বাস স্টেশন বা সিলেট রেল স্টেশন থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে খুব সহজে শাহজালালের মাজার যেতে পারবেন। সিএনজি ভাড়া  ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং অটোরিকশা ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা লাগবে। সিলেটের সুরমা নদী পার হয়ে  সিলেটে মূল শহরে মাজার অবস্থিত।

কোথায় থাকবেন

সিলেট শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। সিলেট লামা বাজার ও দরগা রোড এলাকায় স্বল্প খরচে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। এখানে ৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের রুম পেয়ে যাবেন।

আপনার বাজেট যদি বেশি থাকে তাহলে গুলশান, দরগা গেইট, কায়কোবাদ, হোটেল হিল টাউন ইত্যাদি হোটেল থাকতে পারেন। “সিলেট মাজার গেইট হোটেল” সমূহের নাম, ঠিকানা ও ভাড়া জানুন।

কোথায় খাবেন – কি খাবেন

সিলেট জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পাঁচ ভাই, পালকি ও পানসী রেস্টুরেন্ট থেকে কম খরচে নানা ধরনের দেশী সুস্বাদু খাবার খেতে পারবেন। এখানে খাবার মেন্যু হল সাদা ভাত, খেচুড়ি, গরু, খাশি, দেশি মুরগী, বিভিন্ন ধরনের মাছ, সবজি, ডাল, ৩২ প্রকার ভর্তা ইত্যাদি।

এছাড়া সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে খাবার জন্য অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেখান থেকে আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

সিলেট শাহাজালাল মাজার সহ অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সিলেট ভ্রমণে গিয়ে হাতে সময় নিয়ে সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখে আসার পরামর্শ রইল।

সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জাফলং, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, রাতারগুল, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, রাংপানি, বিছানাকান্দি, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাপলা বিল, লালাখাল উল্লেখ্যযোগ্য।

আরো পড়ুন

Similar Posts