alternatetext
হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড়

হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড়, কক্সবাজার

হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড় (Himchori waterfall and hill) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ অবস্থিত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে গেছেন কিন্তু হিমছড়ি যাননি এমন পর্যটক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

যারা একসাথে সমুদ্র সৈকত ও পাহাড়ের সমন্বয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাদের জন্য উপযুক্ত স্থান হিমছড়ি। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি আসার পথে মেরিন ড্রাইভ রোডের একপাশে বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত এবং অপর পাশে উঁচু উঁচু পাহাড় দেখতে দেখতে হিমছড়ি আসতে পারবেন।

ভ্রমণ মৌসুমে এখানে সবচেয়ে বেশি পর্যটকেরা বেড়াতে আসে। হিমছড়িতে প্রাকৃতিকভাবে একটি ঝর্ণা রয়েছে, এই ঝর্ণার জন্য হিমছড়ি এতোটা জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। বর্ষার মৌসুমে ঝর্ণায় জলের পরিমান বেশি থাকে এবং দারুণ রূপ ধারণ করে। তবে, অন্যান্য সময় হিমছড়ি ঝর্ণা পানি থাকে না।

যারা ফটোগ্রাফি করার জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান খুঁজছেন তারা হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড়ে আসতে পারেন। শীতল জলের ঝর্ণা, মেরিন ড্রাইভ রোড, ইনানী বিচ এবং প্রশস্ত সমুদ্র সৈকত দেখতে চাইলে হিমছড়ি আসতে হবে।

BM Khalid Hasan Sujon

এখানে পাহাড়ের পাদদেশে বানানো ইকোপার্ক, সেখানে প্রবেশ করার জন্য ৩৫ টাকা টিকেট কেটে সিঁড়ি বেয়ে ৩০০ ফুট পাহাড়ের উচ্চতায় উঠতে হবে। যদিও সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা একটু কষ্টকর। তবে উপরে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

এখানে আপনি উঁচু পাহাড় থেকে বয়ে আসা প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখতে পাবেন। বহু পর্যটক এই ঝর্ণাতে গোসল করে এবং অধিকাংশ পর্যটকেরা ছবি তোলায় ব্যস্ত সময় পার করে।

সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের উপরে উঠলে একপাশে বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত এবং অন্য পাশে সবুজের সমারোহ দেখতে পাবেন। উঁচু পাহাড় থেকে বিস্তৃত নীল সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাবেন।

এখানের মতো কোলাহলহীন নীরবতাপূর্ণ পরিবেশ অন্য আর কোথাও পাবেন না। উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে হিলটপ রিসোর্ট। এছাড়া বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কয়েকটি বিশ্রামাগার রয়েছে।

BM Khalid Hasan Sujon

এখানে ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার পাবেন, তাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ টাকার বিনিময়ে ছবি তুলে নিতে পারবেন। ছবি তোলার আগে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন এবং ছবি বেছে নেওয়ার কথা বলবেন।

হিমছড়ি ঝর্ণা কোথায় অবস্থিত

হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় অবস্থিত। মূলত হিমছড়ি কক্সবাজার জেলার একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।

কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং কলাতলী সমুদ্র সৈকত থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে হিমছড়ি জলপ্রপাত অবস্থিত। কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে খোলা জিপ গাড়ি, সিএনজি বা অটোরিকশাতে হিমছড়ি যেতে হবে।

BM Khalid Hasan Sujon

হিমছড়ি পাহাড়ের উচ্চতা

হিমছড়ি পাহাড়ের উচ্চতা ৩০০ ফুট। পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি রয়েছে। যদিও সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে উঠা একটু কষ্টকর। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে একপাশে বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত এবং অন্য পাশে সবুজের সমারোহ দেখতে পাবেন।

হিমছড়ি দর্শনীয় স্থান

হিমছড়ি দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে হিমছড়ি ইকোপার্ক। ইকোপার্কে রয়েছে ছোট বড় কয়েকটি ঝর্ণা, বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত, সবুজের সমারোহ, মেরিন ড্রাইভ রোড, পাহাড়ের উচ্চতা দাঁড়িয়ে সূর্য্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন।

ইকোপার্কে প্রবেশ করার পর দেখতে পাবেন বার্মিজ মার্কেট। সেখান থেকে নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে পারবেন। কেনাকাটা করার আগে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।

হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড়ে কিভাবে যাবেন

হিমছড়ি আসতে হলে প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার আসতে হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসার জন্য সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল, গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, সেন্টমার্টিন, গ্রীণ লাইন পরিবহন সহ আরো অনেক পরিবহন সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসে।

এসি, নন-এসি পরিবহন ভেদে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ২,৬০০ টাকা পর্যন্ত। রাত ১০ টায় ঢাকা থেকে বাস ছাড়লে সকাল ৭ টার মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন। যেতে সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা।

ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসার জন্য কমলাপুর রেলস্টেশন বা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে আসতে পারবেন। এসি, নন-এসি সিট ক্লাস ভেদে ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১,৭৫০ টাকা পর্যন্ত।

বাজেট বেশি হলে বিমানে ঢাকা টু কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা ফ্লাইট ঢাকা টু কক্সবাজার রুটে চলাচল করে। সিট ক্লাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। বিমানে যেতে সময় লাগে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।

কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি ভাড়া

কক্সবাজারের যেকোনো স্থান থেকে হিমছড়ি যাওয়ার জন্য সিএনজি, অটোরিকশা বা ছাদ খোলা জিপ গাড়ি পাবেন। সিজনের সময় সিএনজি বা অটোরিকশা রিজার্ভ নিতে চাইলে ভাড়া লাগবে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে।

কলাতলী মোড় থেকে জনপ্রতি লোকাল যেতে ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা ১২০ টাকার মধ্যে। ভাড়া ঠিক করার সময় কি কি ঘুরে দেখবেন, কোথায় কতক্ষণ থাকবেন সেটা বলে নিবেন এবং ভাড়া দামাদামি করে নিবেন।

এছাড়া ছাদ খোলা জিপ গাড়িতে কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যেতে পারবেন। রিজার্ভ যেতে ভাড়া লাগবে ১,০০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্যে। একটি জীপে ৮ থেকে ১০ জন সহজে যেতে পারবেন। যারা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হইচই করে যেতে যাত তারা ছাদ খোলা জীপে যেতে পারেন।

যারা পরিবার নিয়ে একটু নিরিবিলি পরিবেশ হিমছড়ি যেতে চান তারা সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে যেতে পারবেন। দুপুরে একটু রোদের তাপ কমলে হিমছড়ি রওনা দিবেন তাহলে পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে সূর্য্যস্ত দেখতে পাবেন।

হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড় দেখার টিকেট মূল্য কত

হিমছড়ি ঝর্ণা ও পাহাড় দেখতে হিমছড়ি ইকোপার্কে প্রবেশ করতে হবে। ইকোপার্কে প্রবেশ করতে কাউন্টার থেকে টিকেট কাটতে হবে। বর্তমানে ইকোপার্কে প্রবেশ মূল্য ৩৫ টাকা।

হিমছড়ি কোথায় থাকবেন

হিমছড়ি কক্সবাজার শহরের কাছে হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটকেরা কক্সবাজার হোটেল বা রিসোর্ট গুলোতে থাকা সুবিধাজনক মনে করে। পর্যটকদের কথা চিন্তা করে কক্সবাজারে বর্তমান ৫০০ টির বেশি হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।

কক্সবাজারের উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ গুলোর মধ্যে লং বীচ, সী গাল, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, মিডিয়া ইন, আইল্যান্ডিয়া, কল্লোল, নীলিমা রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট, অভিসার, নিটোল রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, কক্স টুডে, ওশেন প্যারাডাইজ, উর্মি গেস্ট হাউজ, ইউনি রিসোর্ট, ইকরা বিচ রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।

এই সব হোটেল বা রিসোর্ট গুলোর ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজ থেকে ভাড়া জেনে অগ্রিম রুম বুকিং করতে পারবেন। সিজন ভেদে ভাড়া কম বেশি হয়ে থাকে।

কক্সবাজারে কম খরচে হোটেল পেতে সমুদ্র সৈকত থেকে দূরে শহরের গলির মধ্যে দিকে হোটেল খুঁজবেন। বিচ ও মেইন রোড় থেকে যত দূরে হোটেল খুঁজবেন তত কম টাকায় হোটেল ও রিসোর্ট পাবেন। কম টাকায় হোটেল ও রিসোর্ট খুঁজতে রিকশাওলা মামাদের পরামর্শ নিতে পারবেন।

কোথায় খাবেন এবং কি খাবেন

কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি ঝর্ণা ঘুড়ে আসতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। তাই খাবার জন্য সাথে হালকা কিছু শুকনো খাবার নিতে পারেন বা কক্সবাজার ফিরে এসে খেতে পারেন।

কক্সবাজার খাবার জন্য বিভিন্ন মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে। মোটামুটি বাজেটের মধ্যে খাওয়ার জন্য ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, রোদেলা, নিরিবিলি রেস্তোরাঁ গুলো উল্লেখযোগ্য। খাবার আগে দাম জেনে নিবেন।

কক্সবাজার ঘুরতে এসে পর্যটকদের জনপ্রিয় একটি খাবার হল বারবিকিউ। রেস্তোরাঁ থেকে সমুদ্রের পছন্দমত মাছ কিনে সেটা বারবিকিউ করে খেতে পারবেন।

Similar Posts