alternatetext
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত (Patenga sea beach) চট্টগ্রামের জেলার সবচেয়ে সুন্দর ও জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্র। চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি হওয়ায় ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই সৈকতকে আরো আধুনিক ও পর্যটকবান্ধব করে তোলার জন্য অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সৈকতের আকর্ষণীয় সাজসজ্জা পর্যটকদের নজর কেড়েছে।

পতেঙ্গা সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যস্তের দৃশ্য সত্যিই মনোরাম। সকালে ভেরে ও বিকালে সূর্যোদয় ও সূর্যস্তের দৃশ্য দেখার জন্য পর্যটকদের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

পতেঙ্গা সৈকত থেকে দেখতে পাবেন চট্টগ্রাম বন্দরের অপেক্ষমান সারি সারি বড় বড় জাহাজ। জোয়ারের সময় বড় বড় ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ছে। সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পীড বোড রাইডিং করার ব্যবস্থা রয়েছে।

BM Khalid Hasan Sujon

এছাড়া পতেঙ্গা সৈকতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে ঘোড়া ও সী বাইক। পর্যটকদের কেনাকাটা করার জন্য রয়েছে বার্মিজ মার্কেট এবং খাবার জন্য রয়েছে নানা ধরনের স্ট্রিট ফুড। সৈকতে বাতির ব্যবস্থা করায় রাতে সৈকতে ঘুরতে আরো বেশি ভালো লাগবে। পাশাপাশি রাতে সৈকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

পতেঙ্গা সী বিচের কাছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক জেটি ঘাট, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি ও প্রজাপতি পার্ক। দর্শনীয় সব স্থাপনা গুলো কাছাকাছি হওয়ায় একদিনে ঘুরে দেখে আসতে পারবেন।

পতেঙ্গা সৈকতের পাশে প্রজাপতি পার্কে ৭০ প্রজাতির প্রায় ১০০০ প্রজাপতি আছে। যারা সুন্দর সুন্দর এই প্রজাপতি দেখতে চান তারা সকাল সকাল পার্কে চলে যাবেন। বিকালে প্রজাপতি গুলো ঝোপের আড়ালে চলে যায়।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছবি

ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আনন্দময় সময় কাটানোর জন্য চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।

BM Khalid Hasan Sujon

সতর্কতা: পতেঙ্গা সৈকতের প্রস্থ খুব বেশি না। তাই এখানে সাঁতার কাটা ঝুঁকিপূর্ণ।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাব

পতেঙ্গা সৈকতে যেতে প্রথমে আপনাকে চট্টগ্রাম আসতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি / বাস / প্রাইভেট কার সহ বিভিন্ন উপায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত আসতে পারবেন।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

BM Khalid Hasan Sujon

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। সড়ক পথে ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী ইউনিক, গ্রীন লাইন, সোহাগ, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, মর্ডাণ লাইন, সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি নন-এসি বাসে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে পর্যটন, কক্সবাজার, সোনার বাংলা, সুবর্ন, তূর্ণা-নিশীতা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। ট্রেনের সিটভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪০৫ টাকা থেকে ১৩৯৮ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে আকাশ পথে বিমানে চট্টগ্রাম যেতে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস বাংলা, নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যাস্ট্রা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। সিট-ক্লাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা সৈকত

চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান বা জিরো পয়েন্ট থেকে পতেঙ্গা সৈকতের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রাইভেট কার, সিএনজি, মোটরবাইক বা লোকাল বাসে সরাসরি পতেঙ্গা সৈকত যেতে পারবেন।

চট্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট যেতে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া লাগবে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া চট্টগ্রাম নিউমার্কেট, লালখান বাজার, চক বাজার মোড়, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড় ও রেল স্টেশন রোড় থেকে পতেঙ্গা সৈকতগামী লোকাল বাস পেয়ে যাবেন।

চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে কিছু সময় অপেক্ষা করলে পতেঙ্গাগামী ৬ নং বাস পেয়ে যাবেন। বাসের সুপারভাইজারকে জিজ্ঞেস করবেন পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত যাবে কিনা। যদি না যায় তাহলে ফ্রিপোর্ট বা কাঠগড় পর্যন্ত গিয়ে নেমে গিয়ে অটোরিকশা বা ইজিবাইক করে সৈকতে যেতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

পতেঙ্গা সৈকতে পর্যটকদের খাবার জন্য সৈকতে স্ট্রিট ফুডের অনেক দোকান রয়েছে। সেখান থেকে সামুদ্রিক বিভিন্ন ধরনের মাছ, কাঁকড়া ভাড়া সহ বিভিন্ন ভাজাপোড়া খেতে পারবেন। এছাড়া সৈকতের ফুড কোর্ট গুলোতে খাবার জন্য অনেক ফাস্ট ফুডের  আইটেম পাবেন।

যারা ভালো মানের খাবার খেতে চান তারা চট্টগ্রাম শহরের গিয়ে বারকোড ক্যাফে, ক্যাফে ৮৮, সেভেন ডেইজ ধাবা, গলফ হার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কোষ্টাল মারমেইড রেস্টুরেন্ট এন্ড লাউঞ্জ, বোনানজা পোর্ট, গ্রিডি গাটস, হান্ডির নাম রেস্টুরেন্টে গিয়ে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

এছাড়া চট্টগ্রামের বিখ্যাত মেজবানি খেতে চাইলে চকবাজার অবস্থিত “মেজবান হাইলে আইয়্যুন” রেস্তোরাঁ চলে যান। চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে “হোটেল জামান” চলে যান।

কোথায় থাকবেন

পতেঙ্গা সৈকতের পাশে পর্যটকদের থাকার জন্য তেমন ভালো হোটেল মোটেল নেই। চট্টগ্রাম শহরের পাশে পতেঙ্গা সৈকত হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটকেরা সৈকতে দিনে এসে দিনে চট্টগ্রাম শহরে ঘুরে চলে যায়।

আপনি যদি পতেঙ্গা সৈকতের পাশে রাতে থাকতে চান তাহলে বাটারফ্লাই পার্ক রিসোর্টে থাকতে পারবেন। এখানে রুম ভাড়া ৪,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া পতেঙ্গা সৈকতের পাশে মিডিয়াম মানের হোটেলে থাকতে চাইলে সিপিইজেট (CPEZ) এলাকায় থাকতে পারবেন।

চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল পাবেন। এসব হোটেল গুলোতে আপনার বাজেট অনুযায়ী থাকতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহরের উল্লেখযোগ্য করেকটি হোটেলের নাম হল:

  • হোটেল প্যারামাউন্ট: চট্টগ্রাম নতুন স্টেশনের বিপরীত পাশে অবস্থিত। রুম ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ 01713-248754
  • হোটেল ল্যান্ডমার্ক: ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম অবস্থিত। রুম ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ 01820-141995, 01731-886997
  • হোটেল সাফিনা: চট্টগ্রাম এনায়েত বাজারে অবস্থিত। রুম ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ 031-0614004
  • হোটেল এশিয়ান: চট্টগ্রাম এসআর স্টেশন রোডে অবস্থিত। রুম ভাড়া ১,৫০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ 01711-889555

এছাড়া হোটেল অবকাশ, হোটেল লর্ডস ইন, হোটেল রেডিসন ব্লু, হোটেল ল্যান্ডমার্ক ইত্যাদি হোটেল রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

একদিনে পতেঙ্গা ভ্রমণ

রাজধানী ঢাকা থেকে একদিনে পতেঙ্গা দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখে আবার ঢাকা ফিরে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে রাতের বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে সকাল সকাল নাস্তা করে বের হয়ে পতেঙ্গা সী বিচ, প্রজাপতি পার্ক সহ আরো দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে রাতের বাসে আবার ঢাকা ফিরে আসতে হবে।

প্রশ্ন উত্তর (FAQs)

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কোথায়?

পতেঙ্গা সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের একটি পর্যটন কেন্দ্র। যা বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত।

চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা কত কিলোমিটার?

চট্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট থেকে পতেঙ্গা ২৫ কিলোমিটার।

আরো পড়ুন

Similar Posts