alternatetext
মনপুরা দ্বীপ

মনপুরা দ্বীপ, ভোলা

মনপুরা দ্বীপ (Manpura dip) বাংলাদেশের ভোলা জেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তরদিকে মেঘনা নদীর মোহনায় এই দ্বীপের অবস্থান। এই দ্বীপের আয়তন ৩৭৩ বর্গ কিলোমিটার, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ।

মনপুরা দ্বীপের তিন দিকে মেঘনা নদী এবং দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর। প্রাকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা। এই দ্বীপের বিশেষ আকর্ষণ হলো এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। এছাড়া রয়েছে মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন, চৌধুরী প্রজেক্ট ও হরিণের অভয়াশ্রম।

২০২৯ সালে এই দ্বীপ নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে “মনপুরা” নামে চলচ্চিত্র নিমির্ত হওয়ার পর থেকে এই দ্বীপের জনপ্রিয়তা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মোটরসাইকেল এই দ্বীপের প্রধান যানবাহন।

মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনটি মেঘনা নদীর ৫০০ মিটার ভেতরে তৈরি করা হয়েছে। দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত এখানে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীরাও সময় কাটায়। জোয়ারের সময় এখানে বসে থাকলে মনে হবে আপনি মেঘনা নদীর গভীরে ভাসছেন। নদীর উত্তাল ঢেউে মাঝে মাঝে স্টেশনটি কেঁপে উঠে। আপনি রোমাঞ্চকর অনুভূতির সাক্ষী হবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

এই দ্বীপে রয়েছে হরিণের অভায়শ্রম। জোয়ারের সময় হরিণ গুলো সড়কের পাশে চলে আসে। স্থানীয়দের কথিত, হরিণের দল যখন রাস্তা পার হয় তখন কয়েক মিনিট পর্যন্ত সময় অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের মোটরসাইকেল নিয়ে। আপনার ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা পেতে পারেন এই হরিণের দলের।

দ্বীপে আরো রয়েছে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে মাছের ঘের। যাকে চৌধুরী প্রজেক্ট বলা হয়। রয়েছে মাছ চাষের জন্য পুকুর ও লেক। লেকের পাশ দিয়ে সারি সারি হাজার হাজার নারিকেল গাছ। এমন লেকের পাড়ে একটা বিকাল কাটানোর অনুভূতি অন্য রকম। যদিও  ঘূর্ণি ঝড়ের আঘাতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে কিন্তু সৌন্দর্য এখনো কমেনি।

এখানে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা হয়েছে সবুজ গাছেন বিস্তৃত বাগান। মাইলের পর মাইল সবুজ গাছগাছালি মনপুরার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। শীত মৌসুমে এখানে বহু অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে।

ক্যাম্পিং ও সাইক্লিং করার জন্য এই দ্বীপ আদর্শ স্থান। রাস্তার একপাশে সবুজের সমারোহ এবং অন্য পাশে মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউ দেখতে দেখতে সাইক্লিং করাটা সত্যিই আনন্দের।

BM Khalid Hasan Sujon

মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

ভোলা মনপুরা ভ্রমণের উপযুক্ত সময় শীতকাল। শীতের সময় এখানে ক্যাম্পিং ও সাইক্লিং করা সত্যি মজার ব্যাপার। এছাড়া শীতের মৌসুমে এখানে অতিথি পাখিদের দেখা পাবেন। বর্ষার মৌসুমে মনপুরা যাওয়ার পথ বেশ কঠিক হয়ে যায়।

ভোলা মনপুরা কিভাবে যাবেন

মনপুরা বিছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় যাওয়ার একমাত্র বাহন লঞ্চ। ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫ টায় এমভি ফারহান- ৩ ও ৪ নামে দুইটি লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে সকাল ৭ টা থেকে ৭ টা ৩০ মিনিটে মনপুরা দ্বীপ পৌঁছায়।

জনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়ে লঞ্চের ডেক চড়ে মনপুরা যেতে পারবেন। লঞ্চে মনপুরা যাওয়ার পথে লঞ্চ থেকে সূর্যোদয় দেখতে পাবেন। যেতে সময় লাগে ১২-১৩ ঘন্টা। মনপুরা লঞ্চ ঘাট থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে হাজির বাজার গিয়ে থাকার জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

মনপুরা থেকে ঢাকা ফেরার জন্য মনপুরা রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাট প্রতিদিন দুপুর ২ টায় এমভি ফারহান- ৩ ও ৪ নামে দুইটি লঞ্চ ঢাকা উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।

আবার ঢাকা বা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটে এসে সি-ট্রাকে করে মনপুরা যেতে পারবেন। প্রতিদিন তজুমদ্দিন ঘাট থেকে বিকাল ৩ টায় সি-ট্রাক ছেড়ে যায়। আবার মনপুরা থেকে সকাল ১০ টায় সি-ট্রাক ছেড়ে আসে। 

এছাড়া ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন দুইটা লঞ্চ মনপুরা জনতা বাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে এপ্রিল মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই রুট ডেঞ্জার জোন হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই এই সময় এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে।

কোথায় থাকবেন

মনপুরা থাকার জন্য সরকারি ডাকবাংলো, কারিতাস ডাকবাংলো ও প্রেসক্লাব ডাকবাংলো রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে কম খরচে এখানে থাকতে পারবেন। ডাকবাংলোতে থাকার জন্য জনপ্রতি খরচ হবে ২০০-৩০০ টাকা প্রতিরাত।

এছাড়া হাজির বাজারে থাকার জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন। মনপুরা পুলিশ ফাঁড়ির পাশে অবস্থিত হোটেল সায়মা ও বাজারের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হানিফ হোটেলে সিঙ্গেল রুম ২০০ টাকা, ডাবল বেড রুম ৪০০ টাকা দিয়ে থাকতে পারবেন। 

মনপুরা দ্বীপের হোটেল সমূহের মোবাইল নাম্বার

  • হোটেল আইল্যান্ড: মোবাইল নাম্বার 01711-701286
  • হোটেল দ্বীপ: মোবাইল নাম্বার 01713-965106
  • কারিতাস হোটেল: মোবাইল নাম্বার 01923-376365
  • প্রেসক্লাব ডাকবাংলো: মোবাইল নাম্বার 01913-927706
  • জেলা পরিষদ ডাকবাংলো: মোবাইল নাম্বার 01934-175369
  • পানি উন্নয়ন বোড ডাকবাংলো: মোবাইল নাম্বার 01923-376365

কোথায় খাবেন

মনপুরা বাজারে খাবার জন্য হোটেল পাবেন। এখানে শীতের মৌসুমে হাঁসের মাংস ভূনা খুব জনপ্রিয় খাবার। এছাড়া মহিষের দুধের দই, গলদা, ইলিশ, কোরাল মাছ খেতে পারবেন।

এছাড়া ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে কম খরচে বাবুল ভাইয়ের হোটেল থেকে আকর্ষনীয় সব খাবার খেতে পারবেন।

মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ পরামর্শ

  • বর্ষাকাল এড়িয়ে শীতের মৌসুমে মনপুরা ভ্রমণে যাবেন।
  • নদী পথে ভ্রমণের সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিবেন।
  • কোনো কিছু কেনাকাটা করার আগে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।
  • স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
  • এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে দ্বীপের সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট হয়।
  • দলগত ভ্রমণে খরচ ও নিরাপত্তা জোরদার হয়।

প্রশ্ন উত্তর (FAQ)

মনপুরা দ্বীপ কোথায় অবস্থিত?

মনপুরা দ্বীপ ভোলা জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তর দিকে মেঘনা নদীর মোহনায় একটি দ্বীপ মনপুরা। ভোলা জেলার কিছুটা অংশ জুড়ে এই দ্বীপ অবস্থিত।

আরো পড়ুন