যাদুকাটা নদী, সুনামগঞ্জ – কিভাবে যাবেন, খরচ ও ট্যুর প্ল্যান
যাদুকাটা নদী (Jadukata river) সুনামগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ ভারত উত্তর পূর্ব সীমান্তের একটি নদী। যার দৈর্ঘ্য ৩৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫৭ কিলোমিটার। এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় হতে, যা বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভপুর প্রবেশ করেছে।
বিশ্বম্ভপুর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। যাদুকাটা নদীর গভীরতা ৮ মিটার এবং অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গকিলোমিটার। বছরের সব সময় এই নদীতে পানি থাকে। বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ বেশি থাকে।
এই নদীর আদি নাম রেণুকা। কথিত আছে গ্রামের এক বধু নদীর তীরে বসে তার শিশুপুত্র যাদুকে কোলে নিয়ে নদীর মাছ কাটছিলেন। এক পর্যায়ে অন্যমনস্ক হয়ে মাছের জায়গায় তার শিশুপুত্র যাদুকে কেটে ফেলেন। এই কাহিনী থেকেই নদীটির নাম হয় যাদুকাটা নদী।
নদীতে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির ধারা, একদিকে সবুজ পাহাড়, নীল আকাশ সব মিলিয়ে অপূর্ব এক ক্যানভাসের সৃষ্টি করে। নদীতে দেখতে পাবেন স্থানীয় মানুষদের পাথর, কয়লা ও বালি আহরণ করার দৃশ্য। দেশের খনি শিল্পে এই নদীর ব্যাপক অবদান রয়েছে।
এই নদীর সাথে মিলে আছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা, খাসিয়া পাহাড়, আউলিয়া শাহ্ আরেফিনের আস্তানা, হিন্দু সম্প্রদায়ের পূন্যতীর্থ স্থান। নদীর এই অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রত্যেকদিন দেশ বিদেশ থেকে শতশত পর্যটকদের আগমন ঘটে।
যাদুকাটা নদী ভ্রমণে কিভাবে যাবেন
যাদুকাটা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, আব্দুল্লাহপুর থেকে শ্যামলী, এনা, হানিফ, গ্রীন লাইন, এস আলম সোহাগ পরিবহন সহ আরো বিভিন্ন পরিবহনের এসি / নন-এসি বাস নিয়মিত চলাচল করে।
এসি/নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৩০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ বাসে যেতে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সুনামগঞ্জ যেতে ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটগামী যেকোনো ট্রেনে চড়ে সিলেট যাবেন। সিলেটের কুমারগাও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জগামী বিরতিহীন বাসে চড়ে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টা।
সুনামগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি বা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে যাদুকাটা নদী যেতে পারবেন। মোটরসাইকেল ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এক মোটরসাইকেলে দুইজন যেতে পারবেন।
নদীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখতে চাইলে বারিক্কা টিলায় উঠে পড়ুন। এখান থেকে চারিদিকের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। নদীর আশেপাশে থাকা শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা, নিলাদ্রি লেক ও টাঙ্গুয়ার হাওর এক খরচে দেখে আসবেন।
কোথায় খাবেন
পর্যটকদের জন্য যাদুকাটা নদীর আশেপাশে খাবার জন্য তেমন ভালো কোনো হোটেল নেই। লাউড়ের গড় বাজারে মোটামুটি মানের খাবারের হোটেল পাবেন। বারিক্কা টিলার নিচে সকালের নাস্তা করার জন্য ও দেশী খাবারের হোটেল রয়েছে। সেখান থেকে খেতে পারবেন।
এছাড়া নদী ভ্রমণে যাওয়ার সময় সাথে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন। যারা ভালো মানের খাবার খেতে চান তারা সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
পর্যটকদের থাকার জন্য এখানে তেমন ভালো কোনো হোটেল নেই। অধিকাংশ পর্যটকেরা টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে গিয়ে হাউজ বোডে রাত্রিযাপন করে এবং টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা ও নিলাদ্রি লেক ভ্রমণ করে।
যারা প্রয়োজনে নদীর কাছাকাছি থাকতে চান তারা বড়ছড়া বাজারে অবস্থিত আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। বড়ছড়া বাজারে থাকার জন্য মোটামুটি মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
যারা ভালো মানের হোটেলে থাকতে চান তারা সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন। এখানে ১,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকার মধ্যে বহু হোটেল পেয়ে যাবেন।
নিচে কয়েক হোটেলের নাম উল্লেখ করছি –
- হোটেল নূরানী, পুরাতন বাসস্টেশন, সুনামগঞ্জ
- হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্টেশন, সুনামগঞ্জ
- হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্টেশন, সুনামগঞ্জ
- হোটেল সারপিনিয়া, জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ
- হোটেল টাংগুয়া ইন, তাহিরপুর বাজার
- হিজল রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট, টেকেরঘাট
যাদুকাটা নদী ভ্রমণ পরামর্শ
- সাঁতার না জানলে নদীতে নামবেন না।
- বাংলাদেশের বর্ডার অতিক্রম করবেন না।
- নৌকা ভাড়ার ক্ষেত্রে দামাদামি করে নিবেন।
- পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না।
- স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
- হাতে সময় নিয়ে নদীর কাছে থাকা শিমুল বাগান, নিলাদ্রি লেক ও বারিক্কা টিলা ঘুরে দেখে আসবেন।
- রাত্রিযাপন করতে চাইলে বড়ছড়া বাজারে চলে যান।
- কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে অফ সিজনে যান।
আশেপাশের আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ
- শিমুল বাগান
- বারিক্কা টিলা
- নিলাদ্রি লেক
- টাঙ্গুয়ার হাওর