alternatetext
মেলখুম ট্রেইল

মেলখুম ট্রেইল ভ্রমণ গাইডলাইন ও পরামর্শ

চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার জোরাগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় অবস্থিত মেলখুম ট্রেইল একটি গিরিপথ। যারা একদিনের জন্য ট্রেইল দিতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আদর্শ জায়গা। মীরসরাই রেঞ্জের মধ্যে যতগুলো ঝিরি রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে পরিস্কার এই ট্রেইল।

মেলখুমের প্রবেশ পথে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে আছে ১০০ থেকে ২০০ ফুট খাড়া উঁচু পাহাড়। চলার পথ অনেকটাই সরু হওয়ায় সূর্যের আলো পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করে না। যার ফলে দিনের বেলায়ও এখানে অন্ধকার থাকে।

এখানে কোনো পাথর পাবেন না তবুও মাঝে মাঝে সূর্যের আলোর কিরণ স্বচ্ছ পানিতে ঝিলিক দিয়ে আপনাকে বিমোহিত করবে। কিছু কিছু জায়গায় পানির গভীরতা অনেক বেশি ও গাড় নীল মনে হবে।

মেলখুমের ভেতর দেখতে পাবেন প্রজাপতির ঝাঁক, রং বেরঙের ঘাস ফড়িং, স্বচ্ছ পানিতে ঠান্ডা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে ঝিরির ছোট ছোট মাছ আপনার পায়ে এসে খুনসুটি করবে। এসব কিছু দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন মোল্লারখুম/মেলখুম/মেলাখুম।

BM Khalid Hasan Sujon

স্থানীয় লোকেদের মতে মেল হল বিশেষ এক প্রকার লতাপাতা। যা স্থানীয় লোকেরা এই খুমের পানিতে মাছ শিকারের জন্য মেল পাতার রস ছিটিয়ে দিত। রস ছিটানোর কিছু সময়ের মধ্যে কুমে থাকা (চিংড়ি) মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠত। স্থানীয়রা এভাবে মাছ শিকার করতে করতে একসময় এই অঞ্চলের নাম হয়ে উঠে মেলখুম বা মেলকুম।

মেলখুম ট্রেইল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বর্ষা মৌসুম ছাড়া যেকোনো সময় মেলখুম ভ্রমণ করতে পারেন। কারণ বর্ষা মৌসুমে ঝিরিতে পানির পরিমান অনেক বেশি থাকে এবং ঝিরি পিচ্ছিল থাকে। যেকারণে ট্রেকিং করা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

মেলখুম ট্রেইল কাদের জন্য উপযুক্ত

যারা নতুন ট্রেকিং করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য মেলখুম ভ্রমণ উপযুক্ত স্থান। কারণ এখানে ট্রেকিং করা অনেক সহজ। যাদের ভবিষ্যতে ট্রেকিং করার ইচ্ছা আছে তারা এই ঝিরিপথকে প্র্যাকটিস হিসাবে বেছে নিতে পারেন। আর যারা ট্রেকিং করতে ভালোবাসের তাদের জন্য তো কোনো কথায় নেই।

BM Khalid Hasan Sujon

কিভাবে মেলখুম যাবেন

বাসে ঢাকা থেকে: ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে মীরসরাইের সোনাপাহাড় বাজারে নামতে হবে। বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন আপনাকে যেন মীরসরাইের সোনাপাহাড় বাজারে নামিয়ে দেয়। এসি/নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ থেকে ১,২০০ টাকা (ভাড়া পরিবর্তনশীল)। যারা রাতে পৌঁছাবেন তারা সোনাপাহাড় বাজার না নেমে বারৈয়ারহাট নামবেন। বারৈয়ারহাট থেকে সকালে নাস্তা করে জনপ্রতি ২৫ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে সোনাপাহাড় বাজার চলে যাবেন।

বাসে চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রামের এ কে খান মোড় থেকে মীরসরাইগামী যেকোনো বাসে চড়ে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে সোনাপাহাড় বাজারে নেমে যাবেন। যেতে সময় লাগবে এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা।

সোনাপাহাড় বাজার থেকে মেলখুম যাওয়ার উপায়

সোনাপাহাড় বাজার থেকে পূর্বদিকের রাস্তা দিয়ে মেলখুম যেতে হবে। এই রাস্তা দিয়ে ৫-৭ মিনিট হাঁটার পর রেললাইন পেয়ে যাবেন। রেললাইন পেরিয়ে পাহাড় কাটা মাটির রাস্তা দিয়ে ১৫-২০ মিনিট হাঁটলে ছোট একটি কালভার্ট দেখতে পাবেন।

কালভার্টের ডানপাশে ছোট একটি বালুর ঝিরি দেখতে পাবেন। এটা সরু একটা ঝিরি ৬-৭ ফিটের মত, যেখানে কোন পাথর দেখতে পাবেন না। এই ঝিরি ধরে উজারে হাটা শুর করবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

ঝিরি দিয়ে ৪০-৫০ মিনিট হাঁটার পর মেলখুমের দেখা পেয়ে যাবেন। পুরো মেলখুম ট্রেইল শেষ করতে ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগবে। উল্লেখিত পথে যাত্রা করলে পথ হারানোর ভয় নেই। পথ চিনতে সমস্যা হলে স্থানীয় মানুষের কাছে শুনতে পারেন।

কোথায় খাবেন

মেলখুম ট্রেকিং এসে খাবার জন্য বারৈয়ারহাট পৌরসভায় বেশ কিছু খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়া মেলখুম প্রবেশের আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের আধা কিলোমিটার উত্তরে আরশিনগর ফিউচার পার্ক ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। আপনার সুবিধা ও পছন্দসই স্থান থেকে খাবার খেতে পারবেন। 

কোথায় থাকবেন

অধিকাংশ পর্যটকেরা মেলখুম ভ্রমণে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসে। মেলকুম এক দিনের ট্রেকিং করার জন্য আদর্শ স্থান। তাই এখানে আসা পর্যটকদের রাত্রিযাপন করার প্রয়োজন হয় না।

যারা রাত্রিযাপন করতে তারা মীরসরাই বাজারে এসে মোটামুটি মানের হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। আর যারা ভাল মানের হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চাচ্ছেন তারা চট্টগ্রাম শহরে চলে যান। চট্টগ্রাম শহরে রাত্রিযাপন করার জন্য অনেক ভাল মানের হোটেল রয়েছে। “চট্টগ্রাম আবাসিক হোটেলের নাম্বার” ও রুম ভাড়া জানুন।

পরামর্শ

  • সাঁতার না জানলে খুমে নামবেন না।
  • ট্রেকিং এর জন্য ভালো জুতা ও লাইফ জ্যাকেট নিবেন।
  • ট্রেকিং কখনো ভারি ব্যাগ সঙ্গে নিবেন না।
  • সাথে শুনকো খাবার ও পানির বোতল নিবেন।
  • দলগত ভাবে ট্রেকিং করবেন।
  • অতিরিক্ত এক সেট কাপড়/গামছা সাথে রাখবেন।
  • স্থানীয় মানুষের কাছে ভালো ব্যবহার করুন।
  • মুখের পানির ময়লা (খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল) ফেলবেন না।

আরো পড়ুন

Similar Posts