সহস্রধারা ঝর্ণা ২ ভ্রমণ গাইড – যাওয়ার উপায় ও খরচ
চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের চিরসবুজ বনাঞ্চল সমৃদ্ধ সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের মধ্যে অবস্থিত সহস্রধারা ঝর্ণা ২। বর্ষাকাল ছাড়াও এই ঝর্ণায় সব সময় কম বেশি পানি থাকে। এই ঝর্ণার খুব কাছে সুপ্তধারা ঝর্ণা নামে আর একটি ঝর্ণা রয়েছে।
উঁচু উঁচু পাহাড় দ্বারা ঘেরা প্রকৃতির সৃষ্ট সহস্রধারা লেক। ঝর্ণা থেকে এই লেকের পানির উৎস। সীতাকুণ্ডের মীরসরাই রেঞ্জে যতগুলো ঝর্ণা রয়েছে তার মধ্যে এই ঝর্ণার আসার ট্রেইল অনেক সহজ। তাই দেশ বিদেশের বহু পর্যটক প্রত্যেক দিন এখানে ভিড় জমায়।
সহস্রধারা ২ ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময়
বর্ষাকালে ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময়। কারণ বর্ষাকালে ঝর্ণায় প্রচুর পানি থাকে এবং চারিপাশে পরিবেশ সবুজ থাকে। তবে বছরের অন্যান্য সময় এই ঝর্ণায় কম বেশি পানি থাকে।
সহস্রধারা ঝর্ণা ২ যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সহস্রধারা ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে সীতাকুণ্ড বাজার আসতে হবে। ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, ফকিরাপুল বাস স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী এস আলম, হানিফ, শ্যামলী, সোহাগ, গ্রীন লাইন, ইউনিক, ঈগল, এনা সহ যেকোনো পরিবহনে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,২০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো আন্তঃনগর এক্সপ্রেসে চড়ে ফেনী রেলস্টেশন নেমে যাবেন। সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২৬৫ থেকে ৯০৯ টাকা। ফেনী রেলস্টেশন থেকে ২৫ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে মহিপাল বাস স্টেশন যাবেন। সেখান থেকে লোকাল বাসে ৯০ টাকা ভাড়া দিয়ে সীতাকুণ্ড বাজার নেমে যাবেন।
চট্টগ্রাম শহরের অলংকার মোড়, কদমতলী ও এ কে খাস মোড় থেকে ফেনীগামী যেকোনো বাসে ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে সীতাকুণ্ড বাজার আসতে পারবেন। এছাড়া রিজার্ভ সিএনজি বা প্রাইভেট কার নিয়ে সীতাকুণ্ড বাজার আসতে পারেন। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া ৩০০ টাকা।
সীতাকুণ্ড থেকে সহস্রধারা ঝর্ণা ২ যাওয়ার উপায়
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজি ভাড়া করে চলে যাবেন সহস্রধারা ঝর্ণায়। সিএনজি আপনাকে সহস্রধারা সেচ প্রকল্পের পাশে নামিয়ে দিবে। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা এবং লোকালে জনপ্রতি ২০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। যেতে যেতে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি দেখতে পারবেন।
সহস্রধারা সেচ প্রকল্পের ভিতর দিয়ে আপনাকে পায়ে হেঁটে সহস্রধারা ঝর্ণায় যেতে হবে। পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে আনুমানিক ২০-২৫ মিনিট। যাত্রাপথে আপনার সাথে আরো পর্যটকদের পেয়ে যাবেন। তাই পথ হারানোর ভয় নেই।
এছাড়া ইঞ্জিন চালিত নৌকায় সহস্রধারা লেক পার হয়ে সহস্রধারা ঝর্ণা ২ এর যেতে পারবেন। একই নৌকায় যাওয়া-আসা সহ জনপ্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। নৌকা থেকে নেমে একটু সামনে এগিয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত সহস্রধারা ঝর্ণা ২ পৌঁছে যাবেন।
ফেরার জন্য একই নৌকায় চড়ে সেচ প্রকল্পের সুইচ গেইট এসে ছবি তুলতে পারবেন। লেকের গভীরতা অনেক বেশি তাই যারা সাঁতার জানেন না তারা লেকের পানিতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিবেন।
প্রবেশ টিকেট মূল্য
ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হবে।
কোথায় খাবেন
খাবার জন্য সীতাকুণ্ড বাজার মোটামুটি মানের কয়েকটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সৌদিয়া হোটেল, আল-আমিন হোটেল ও আপন রেস্তোরাঁ। এখান থেকে পছন্দসই খাবার খেতে পারবেন।
এছাড়া যারা ভালো মানের খাবার খেতে চান তারা চট্টগ্রাম শহরের চলে যান। চট্টগ্রাম শহরে খাবার জন্য অনেক ভালো মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুণ্ড বাজারে থাকার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেল সৌদিয়া, রুম ভাড়া ৭০০ থেকে ১,২০০ টাকা। মোবাইল নাম্বার 01991-787979, 01816-518119। হোটেল সাইমুন, রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ৭০০০ টাকা। মোবাইল নাম্বার 01827-334082, 01825-128767.
সীতাকুণ্ডে সরকারি ডাকবাংলো রয়েছে। অনুমতি নিয়ে স্পল্প খরচে সেখানে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের গিয়ে ভালো মানের হোটেল থাকতে পারেন।
সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান
সহস্রধারা ঝর্ণা দেখার পাশাপাশি সীতাকুণ্ডে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তাই হাতে কমপক্ষে ২-৩ দিন সময় নিয়ে আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে আসতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রুপসী ঝর্ণা, সোনাইছড়ি ট্রেইল, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, চন্দ্রনাথ মন্দির, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।