alternatetext
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ভ্রমণ বিস্তারিত তথ্য

রাতারগুল সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট ফতেহপুর ইউনিয়নের গুয়াইন নদীর দক্ষিণে অবস্থিত একটি মিঠাপানির জলাবন। বর্তমান পৃথিবীতে সর্বমোট ২২ টি মিঠাপানির জলাবন আছে রয়েছে, তার মধ্যে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest) অন্যতম।

সিলেট রাতারগুল জলবনের আয়তন ৩০,৩২৫ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর জায়গায় জুড়ে বন এবং বাকি জায়গা জুড়ে ছোট বড় জলাশয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার রাতারগুল জলাবনকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষণা করেন। এর ২০১৫ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর ২০৪.২৫ হেক্টর বনভূমিকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করে।

নিচে স্বচ্ছ মিঠাপানি উপরে ঘন নিবিড় গাছের চাদয়ায় গাঁ ছমছমে পরিবেশ। এজন্য রাতারগুলকে বলা হয় বাংলার আমাজন। মিঠাপানির এই জলাবনটিতে সর্বমোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বনের ভেতর এমনও জায়গা আছে যেখানে সূর্যের আরো পৌঁছায় না।

এখানকার গাছপালা বছরের ৪ থেকে ৫ মাস পানির নিচে থাকে। বর্ষা মৌসুমে এই বনে ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। এছাড়া সারা বছর এখানে পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে।

BM Khalid Hasan Sujon

রাতারগুল মূলত প্রাকৃতিক জলাবন হলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ বন বিভাগ এখানে বেত, হিজল, কদম সহ নানা জাতের জলসহি গাছ গালিয়েছে। জলাবন বলে এখানে সাপের আবাস ও জোঁক, গুইসাপ, বানর, বেজিও দেখা যায়।

এছাড়া এখানে সাদা বক, মাছরাঙা, টিয়া, পানকৌড়ি, ঘুঘু, চিল, বাজপাখি, বুলবুলি পাখির দেখা মিলবে। শীতকালে রাতারগুলে বিভিন্ন রকমের অতিথি পাখি উপস্থিত চেখে পড়ে। এর মধ্যে বালিহাঁস, পরিযায়ী পাখি উল্লেখযোগ্য।

বছরের সব সময় এখানে পর্যটকদের আগমন ঘটে, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে। এসময় ডিঙি নৌকা ভাড়া নিয়ে বনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এবং চারিদিকের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ভ্রমণ করতে রাতারগুল বন বিট থেকে অনুমতি নিতে প্রবেশ করতে হয়।

BM Khalid Hasan Sujon

রাতারগুল জলাবনের নামকরণ

সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ “রাতা গাছ” নামে পরিচিত। এই রাতা গাছের নাম অনুসারে এই বনের নামকরণ করা হয় রাতারগুল।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে (জুলাই থেকে অক্টোবর) সিলেট রাতারগুল জলাবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এসময় বনে পানির পরিমান বেশি থাকে এবং গাছপালা সবুজ ও সতেজে থাকে। তখন ডিঙি নৌকা নিয়ে বনের সব জায়গায় ঘুরতে পারবেন।

রাতারগুল নৌকা ভাড়া কত

এখানে দুইটা নৌকা ঘাট রয়েছে, চৌরঙ্গি ঘাট ও মাঝের ঘাট। একেক ঘাটের নৌকা ভাড়া একেক রকম। চৌরঙ্গি ঘাট থেকে রাতারগুল জলাবনের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। মাঝের ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া ১,৫০০ টাকা (সরকার নির্ধারিত ফি)। একটি নৌকায় ৪-৫ জন ঘুরতে পারবেন। দেড় থেকে দুই ঘন্টা ঘুরতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

রাতারগুল জলাবনে কায়াকিং

রাতারগুল জলাবনে কায়াকিং করতে পারবেন। এখানে নৌকায় চড়ে যে মজ পাবেন তার থেকে দ্বিগুণ মজা পাবেন কায়াকিং করে। নৌকায় বনের ভেতর সব জায়গায় যেতে না পারলেও কায়াকিং করে বনের সব জায়গায় যেতে পারবেন।

এখানে দুই জন ১ ঘন্টার জন্য কায়াকিং করতে ৩০০ টাকা খরচ হবে। কায়াকিং করার জন্য যোগাযোগ করুন মানুষ ভাই। মোবাইল নাম্বার 01715-644410.

কিভাবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট যাবেন

ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাস সৌদিয়া, হানিফ, শ্যামলী, এনা, গ্রীনলাইন, এস আলম, ইউনিয়ন পরিবহনে সরাসরি সিলেট যেতে পারবেন। এসি, নন-এসি বাস ভেদে ভাড়া ৭০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। রাস্তায় জ্যাম না থাকলে যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টার মতো।

ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত ও উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে সিলেট যেতে পারবেন। ট্রেনের সিট ভেদে ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১২৮৮ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে করে সিলেট যেতে পারবেন। ঢাকা টু সিলেট বিমান ভাড়া ৪,৪০০ টাকা।

সিলেট থেকে রাতারগুল কিভাবে যাব

সিলেট শহর থেকে রাতারগুল যেতে হলে আপনাকে হযরত শাহজালাল রহঃ এর মাজারের সাথে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে সিএনজি স্টেশন আসতে হবে। এখান থেকে রাতারগুলের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। সিএনজিতে যেতে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগবে।

আপনি যদি লোকাল সিএনজি করে যান তাহলে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা। আর সিএনজি রিজার্ভ নিলে গেলে ভাড়া লাগবে ৫০০-৬০০ টাকা। সিএনজি রিজার্ভ নেওয়া ভালো তবে, ভাড়া ঠিক করার সময় দামাদামি করে নিবেন। সিএনজি আপনাকে নৌকা ঘাটে নামিয়ে দিবে।

এখানে দুইটা নৌকা ঘাট রয়েছে, চৌরঙ্গি ঘাট ও মাঝের ঘাট। একেক ঘাটের ভাড়া একেক রকম। তাই সিএনজি মামাকে বলবেন যে ঘাটের নৌকা ভাড়া কম সেই ঘাটে নিয়ে যেতে। চৌরিঙ্গি ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং মাঝের ঘাট থেকে সরকার নির্ধারিত নৌকা ভাড়া ১,৫০০ টাকা (যাওয়া-আসা)।

নৌকায় মাঝি আপনার কাছ থেকে টিপস নেওয়া জন্য ৩ টি স্পটের কথা বলবে। আপনি তার কথায় কান না দিয়ে বলবেন ওয়াচ টাওয়ারে উঠে অন্য পথ দিয়ে ঘুরে আবার ফিরে আসবেন। আপনার হাতে সময় থাকলে রাতারগুল থেকে বিছানাকান্দি যেতে পারেন।

কোথায় খাবেন

খাবার জন্য সিলেট জিন্দাবাজারে ভালো মানের কয়েকটি খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পানশি, পাঁচ ভাই, পালকি। পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁর খাবারের মান অনেক ভালো এবং তুলনামূলক সস্তা। এখানে খাবার জন্য প্রায় ২৯ প্রকার ভর্তা সহ সাদা ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল, খিচুড়ি পাবেন।

এই রেস্তোরাঁর পাঁচ মিশালী আইটেম বেশ আকর্ষনীয়। মাছ বা মাংস নিলে সাদা ভাত ও ডাল একদম ফ্রি। এখানকার এসি রুমে বসে খেলে অতিরিক্ত বিল প্রদান করতে হবে।

কোথায় থাকবেন

রাতারগুল থাকার জন্য কোনো হোটেল বা গেস্ট হাউজ নেই। তাছাড়া এখানে থাকার প্রয়োজন হয় না। পর্যটকেরা সিলেট শহর থেকে রাতারগুল ঘুরতে যায় আবার সিলেট শহরের ফিরে আসে।

সিলেট শহরের হযরত শাহজালাল (রহঃ) দরগাহ গেইট মাজারে আশেপাশে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে ১,০০০ থেকে ৩,৫০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। সিলেট মাজার গেইট হোটেল সমূহের তথ্য জেনে নিন।

সিলেট ভ্রমণে গিয়ে অধিকাংশ পর্যটকেরা দরগা গেইট বা মাজার গেইট হোটেল সমূহে রাত্রিযাপন করে। কারণ এখান থেকে সিলেটে সব ট্যুরিস্ট স্পট গুলোতে যাওয়ার যানবাহন পাওয়া যায়।

রাতারগুল ভ্রমণ সতর্কতা

  • রাতারগুল জলাবনে সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।
  • বর্ষা মৌসুমে পানি বেশি থাকায় গাছের ডালে সাপ আশ্রয় নেই, তাই সব সময় সতর্ক থাকুন।
  • রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সঙ্গে ছাতা নিয়ে চান।
  • ওয়াচ টাওয়ারে সাবধানে উঠবেন।
  • ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে ছবি তোলার আগে ছবির মূল্য জেনে নিবেন।
  • জলাবনের ভেতর উচ্চ শব্দে কথা বলবেন না, কারণ এটা বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য।
  • পানিতে ময়লা জিনিস (পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট) ফেলবেন না।
  • নৌকা চালকদের সাথে এবং স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।

সিলেটের আরো দর্শনীয় স্থান

রাতারগুল ছাড়াও সিলেটে অনেক জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এগুলোর মধ্যে বিছানাকান্দি, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার, জাফলং উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন

Similar Posts