alternatetext
শাপলা বিল সিলেট Shapla bill sylhet

শাপলা বিল সিলেট – কিভাবে যাবেন, থাকা-খাওয়া খরচ ও পরামর্শ

শাপলা বিল সিলেট (Shapla bill sylhet)  জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি হাওর। এটি অনেকের কাছে ডিবির হাওর নামে পরিচিত। চারটি ডিবি বিল, হরফকাট বিল, কেন্দীবিল ও ইয়াম বিল একত্রে লালা শাপলার বিল বলা হয়। এই লাল শাপলার বিলের আয়তন ৯০০ একর বা ৩.৬৪ বর্গ কিলোমিটার।

নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে (বর্ষা মৌসুমে) এই বিলগুলোতে লাল শাপলার রাজ্যে পরিণত হয়। তখন সমস্ত বিলে হাজার হাজার লাল শাপলা ছড়িয়ে থাকে। যতদূর চোখ যাবে দেখতে পাবেন সমস্ত বিল জুড়ে লাল গালিচা বিছিয়ে দেওয়া আছে।

ভোরে সূর্যের আলোয় লক্ষ লক্ষ লাল শাপলার হাসিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। প্রকৃতি যেত তার আপন হাতে সাজিয়েছে এই লাল শাপলার বিলকে। আপনি এখানে একটি সকাল উপভোগ করতে পারলে সারাজীবন মনে রাখতে পারবেন।

শীতকালে এই (হাওর) বিলে নানা প্রজাতির অথিতি পাখিদের আগমন দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বালিহাঁস, সাদাবক, জল ময়ুরী, বালিহাঁস, পানকৌড়ি, পাতিসরালি সহ অসংখ্য প্রজাতির অতিথি পাখিদের কলকাকলি মুখর করে রাখে লাল শাপলা বিল বা ডিবির হাওর।

BM Khalid Hasan Sujon

এখানে প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন একটি মন্দির রয়েছে। স্থানীয় লোক মুখে শোনা যায়, জৈন্তা রাজ্যের কোন এক রাজাকে এই হাওরের পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। তার স্মৃতিতে এই হাওরে (বিলে) একটি মন্দির নির্মান করা হয়। এছাড়া ডিবি বিল ও হরফকাটা বিলের মধ্যস্থালে রাজা রাম সিংহের একটি সমাধিস্থল রয়েছে।

লাল শাপলা বিল সিলেট যাওয়ার উপযুক্ত সময়

সাধারণত বর্ষা মৌসুম নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে সিলেট লাল শাপলার বিলে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। এসময় এই বিলে অসংখ্য লাল শাপলা ফুল ফোটে। শাপলা ফুলের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে খুব ভোরে সূর্য আলো ফোটার আগে এখানে পৌঁছাতে হবে।

বর্ষা মৌসুমে লাল শাপলার বিলে নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। নৌকায় ঘুরতে ভাড়া লাগবে ৫০০-৬০০ টাকা। নৌকা থেকে দেখতে পাবেন দূর মেঘালয় পাহাড়ে খাসিয়াদের পান-সুপারির বাগান। ভোরের বিলের চারপাশের প্রকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনার মনে হবে শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো ক্যানভাস।

BM Khalid Hasan Sujon

লাল শাপলা বিল সিলেট যাওয়ার উপায়

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে লাল শাপলা বিল বা ডিবির হাওর যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে সিলেট শহরে যেতে হবে। সিলেট শহর থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর লাল শাপলার বিল অবস্থিত।

বাসে ঢাকা থেকে সিলেট: ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী হানিফ, সোহাগ, এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, গ্রীন লাইন সহ যেকোনো পরিবহনে করে সিলেট যেতে পারবেন। এসি/নন-এসি বাস ভেদে ভাড়া ৭০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।

ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট: ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সিলেট যেতে পারবেন। সিট ভেদে ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১,২৮৮ টাকা পর্যন্ত।

বিমানে ঢাকা থেকে সিলেট: ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউ এস বাংলা, নভোএয়ার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর যেতে পারবেন। ঢাকা টু সিলেট বিমান ভাড়া (ইকোনমি ক্লাস) ৪,৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।

BM Khalid Hasan Sujon

ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট: চট্টগ্রাম থেকে উদায়ন এক্সপ্রেস ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস নামে দুইটি ট্রেন সিলেট যায়। সিট ভেদে ভাড়া ৪৫০ থেকে ১,৫৪১ টাকা পর্যন্ত। যেকোনো রুটের ট্রেনের টিকেট বুকিং করতে ভিজিট করুন https://eticket.railway.gov.bd/ ওয়েবসাইট।

সিলেট থেকে লাল শাপলা বিল যাওয়ার উপায়

সিলেট কদমতলী থেকে বাসে করে জৈন্তাপুর বাজারে না মেনে আরো ২ কিলোমিটার সামনে ডিবির হাওর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে নেমে যাবেন। সেখান থেকে গ্রামের রাস্তা ধরে ১ কিলোমিটার হাঁটলে ডিবির হাওর বা লাল শাপলা বিল পৌঁছে যাবেন। ডিবির হাওর বিজিবি ক্যাম্প থেকে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে পথ দেখিয়ে দিবে।

সিলেট শহরের যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি, প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেল করে জৈন্তাপুর বাজারের ২ কিলোমিটার সামনে ডিবির হাওর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে আসতে হবে। সারাদিনের জন্য রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া লাগবে ১,৬০০ থেকে ১,৮০০ টাকা। সিএনজি ভাড়া করার সময় অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।

লাল শাপলা বিলে নৌকায় করে ঘোরার জন্য নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। একটি নৌকায় ৪-৫ জন ঘুরে বেড়াতে পারবেন। শাপলা বিল নৌকা ভাড়া লাগবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

কোথায় খাবেন

শাপলা বিলের আশেপাশে খাবার জন্য কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। তাই আপনাকে সাথে করে শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে যেতে হবে। চাইলে জৈন্তাপুর উপজেলা শহরে গিয়ে জৈন্তাপুর হিল রিসোর্ট থেকে ভালো মানের বাংলা খাবার খেতে পারেন।

এছাড়া সিলেট শহরে ফিরে গিয়ে জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পানসী রেস্টুরেন্ট, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট, পালকি রেস্টুরেন্ট, গ্র্যান্ড বাফেট ও রয়্যাল ডাইন থেকে কম খরচে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

লাল শাপলা বিল বা ডিবির হাওর বেড়াতে গিয়ে থাকার জন্য তামাবিল জৈন্তাপুর রোড়ে বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। আপনার বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী রিসোর্টে থাকতে পারেন।

এছাড়া সিলেট শহরে ফিরে এসে বাজেটের মধ্যে আদর্শ হোটেল ও রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। এখানে ৫০০ থেকে ৪,০০০ টাকার মধ্যে আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট পেয়ে যাবেন।

সিলেটের সেরা কয়েকটি আবাসিক হোটেল হল গুলশান, সুরমা, হোটেল হিল টাউন, কায়কোবাদ ইত্যাদি। সিলেট মাজার গেইট এলাকায় অবস্থিত সেরা আবাসিক হোটেল সমূহের তথ্য জানুন।

সিলেট দর্শনীয় স্থান

সিলেট ভ্রমণে গেলে লাল শাপলা বিল সহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তামাবিল, জাফলং, লালাখাল সিলেট, বিছানাকান্দি টুরিস্ট স্পট, রাংপানি সিলেট, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

Similar Posts