সিলেট জাফলং ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য
সিলেট জাফলং (Sylhet Jaflong) সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনহাট উপজেলার অন্তর্গত ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি পর্যটনস্থল। যা পর্যটন প্রেমীদের কাছে প্রকৃতির কণ্যা হিসাবে পরিচিত।
প্রকৃতি যেন আপন হাতে সাজিয়েছে সিলেটের জাফলংকে। জাফলং জিরো পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে মিলবে ডাউকি ব্রিজ। তার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে পাথুরে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, মেঘালয়ের উঁচু উঁচু পাহাড়, তার উপর ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘ। সব মিলিয়ে এখানকার প্রকৃতি জাফলংকে অনন্য করে তুলেছে।
জাফলংয়ের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানকার আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, শ্রমিকদের পাথর তোলার দৃশ্য, পাথরের উপর দিয়ে স্বচ্ছ পানির ধারা, পাহাড়ি ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু।
একেক ঋতুতে জাফলং একেক রূপ ধারণ করে। যা পর্যটকদের সারা বছর জাফলং ভ্রমণে আগ্রহী করে তুলে। তবে আমার কাছে জাফলং ভ্রমণের সেরা সময় মনে হয়েছে বর্ষাকাল বা তার ১-২ মাস পর। কারণ বর্ষাকালে জাফলংয়ের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
সিলেট জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বছরের যেকোনো সময় জাফলং ভ্রমণে যেতে পারবেন। কারণ একেক ঋতুতে জাফলং একেক রূপ ধারণ করে। তবে জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল বা তার ১-২ মাস পর। অর্থাৎ ইংরেজি জুন থেকে ডিসেম্বর মাস।
জাফলং যাওয়ার উপায়
জাফলং যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে সিলেট আসতে হবে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানে করে সিলেট আসতে পারবেন।
ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার উপায়
ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী সৌদিয়া, গ্রীন লাইন, এস আলম, হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী, সোহাগ, এনা, লন্ডন এক্সপ্রেস সহ অন্যান্য পরিবহনে করে সিলেট যেতে পারবেন। এসি/নন-এসি বাস ভেদে ঢাকা টু সিলেট ভাড়া ৭০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৩৬ কিলোমিটার এবং যেতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে জয়ন্তিকা, উপবন, পারাবত ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সিলেট যেতে পারবেন। সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১,২৮৮ টাকা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ফ্লাইটে করে সিলেট যেতে পারবেন। ঢাকা টু সিলেট বিমান ভাড়া (ইকোনমি ক্লাস) ৪,৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে বিআরটিসি, হানিফ, এস আলম, সোহাগ, গ্রীন লাইন, শ্যামলী, এনা, সৌদিয়া পরিবহন চট্টগ্রাম টু সিলেট রুটে চলাচল করে। চট্টগ্রাম টু সিলেট বাস ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে প্রতি শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস ও প্রতি সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সিলেট যায়। ট্রেনের সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ১,৫৪১ টাকা।
সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার উপায়
সিলেট শহর থেকে জাফলংয়ের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার, যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা ৫২ মিনিট। সিলেট শহরের যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি, লেগুনা, প্রাইভেট কার ও বাসে করে জাফলং যেতে পারবেন।
বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে থেকে সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কার রিজার্ভ ভাড়া নিয়ে জাফলং যেতে পারবেন। সিএনজিতে সর্বোচ্ছ ৫ জন, লেগুনাতে ১০ জন ও প্রাইভেট কারে আসন অনুযায়ী যেতে পারবেন।
সিলেট থেকে জাফলং রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া ১,৩০০ থেকে ১,৬০০ টাকা, লেগুনা ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা এবং প্রাইভেট কার ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা। ভাড়া ঠিক করার সময় অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন এবং জাফলং যাওয়ার পথে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখে যেতে পারবেন। গাড়ির ড্রাইভারকে আগেই বলে নিবেন পথে কি কি দেখবেন।
যারা সিলেট থেকে বাসে জাফলং যেতে চাচ্ছেন তারা কদমতলী থেকে জাফলংগামী বাস পেয়ে যাবেন। গেইটলক বিরতিহীন বাসে জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং লোকাল বাসে জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা। এছাড়া সিলেট শহরের সোবহানীঘাট থেকেও জাফলংগামী বাস ও লেগুনা পেয়ে যাবেন।
আপনারা যারা গ্রুপ করে জাফলং যেতে চান তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় রিজার্ভ বাস বা প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে যাওয়া। সিলেট থেকে গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্ট সহজে যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন ও কি খাবেন
জাফলং খাবার জন্য বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে সীমান্ত ভিউ রেস্টুরেন্ট, জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্ট ও জাফলং পর্যটন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। আপনি এখানে থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।
যদি বড় গ্রুপ নিয়ে ঘুরতে যান তাহলে তাহলে আগেই এখানকার রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার দেওয়া ভালো। এখানকার খাবারের মান আমার কাছে বেশ ভালো মনে হয়েছে এবং কম খরচে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।
এছাড়া সিলেট শহরের জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পালকি রেস্টুরেন্ট, পানসী রেস্টুরেন্ট ও পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট থেকে কম খরচে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। এখানকার ভর্তা গুলো আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। এখান থেকে সকালের নাস্তা সহ দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারেন।
খাবারের মেন্যু গুলোর মধ্যে গরুর মাংস, খাশির মাংস, দেশি মুরগী, কালো ভুনা, বিভিন্ন পদের মাছ, সবজি, ডাল, ডিম, ভর্তা, সাদা ভাত, খিচুড়ি উল্লেখযোগ্য।
কোথায় থাকবেন
জাফলং ভ্রমণে গিয়ে অধিকাংশ পর্যটকেরা রাত্রিযাপন করার জন্য সিলেট শহরে ফিরে আসেন। কারণ সিলেট শহরে রাত্রিযাপন করার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল ও লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।
সিলেট শহরে বেশি ভাগ আবাসিক হোটেল গুলো হযরত শাহজালাল মাজারের আশেপাশে অবস্থিত। এছাড়া তালতলা, আম্ভরখানা, কমদতলী ও লামাবাজারে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
যে সকল পর্যটকেরা জাফলং রাত্রিযাপন করতে চান তারা জাফলং জিরো পয়েন্টের কাছে জাফলং গ্রিন রিসোর্ট, মামার বাজার এলাকায় হোটেল প্যারিসনও জাফলং ইন হোটেল সহ বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজ পাবেন।
এছাড়া জাফলংয়ের কাছে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট ও ল্যান্ডস্কোপ ভিউ রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে পারেন। কম খরচে রাত্রিযাপন করার জন্য সরকারি গেস্ট হাউজে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন। “সিলেট জাফলং হোটেল ভাড়া” ও অন্যান্য তথ্য জানুন
সিলেট জাফলং ভ্রমণ টিপস
- জাফলং সীমান্তবর্তী এলাকা তাই আইন-কানুন মেনে চলুন।
- কোনো কিছু কেনাকাটা বা ভাড়া ঠিক করার সময় দামাদামি করে নিবেন।
- কম খরচে ট্যুর দিয়ে চাইলে গ্রুপ করে ট্যুর করুন।
- পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
- জাফলং অনেক ভারতীয় পণ্য পাওয়া যায়, নকল পণ্য যাচাই করে কিনবেন।
- স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
- পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
- বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন, মোবাইল নাম্বার 01320-158350
জফলংয়ের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
জাফলং এর আশেপাশে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। হাতে সময় নিয়ে এসব দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে আসবেন। এর মধ্যে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, লালাখাল, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, শাপলা বিল, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, রাংপানি উল্লেখযোগ্য।
আরো পড়ুন
- সিলেট ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
- সিলেট থেকে জাফলং কত কিলোমিটার
- সিলেট থেকে রাতারগুল কত কিলোমিটার
- সিলেট থেকে বিছানাকান্দি কত কিলোমিটার
- সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কত কিলোমিটার