গুঠিয়া মসজিদ (Guthia mosque) বা বাইতুল আমান জামে মসজিদ বরিশাল জেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রামে প্রায় ১৪ একর জায়গায় উপর অবস্থিত।
২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু ব্যাক্তিগত উদ্যোগে নিজ বাড়ির সামনে এই মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৬ সালে। তখন থেকে গুঠিয়া নামে এই মসজিদটি পরিচিত লাভ করে।
এই মসজিদ কমপ্লেক্সের ভিতর রয়েছে ডান পাশে বড় পুকুর, পুকুরে শান বাঁধানো ঘাট, পুকুর পাড়ের চারপাশে সারিসারি নারিকেল গাছ, পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদ, মসজিদের ভিতর একসাথে ১৫শ মুসল্লী নামাজ পড়তে পারে। মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের স্থান রয়েছে। মসজিদে সাথে ১৯৩ ফুট উচ্চতা একটি মিনার রয়েছে।
এছাড়া এই মসজিদ কমপ্লেক্সের ভিতর ২০ হাজার লোকের ধারণক্ষমতার ঈদগাহ ময়দান, এতিমখানা, ডাকবাংলো, লেক, গাড়ি পাকিং সুবিধা, হ্যালিপেড, ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান রয়েছে। ঈদগাহ প্রবেশ পথের দুইপাশে দুইটি ফোয়ারা আছে।
মসজিদের নির্মাণশৈলীতে এশিয়া, মধ্য প্রাচ্য ও ইউরোপের নামকরা মসজিদের ছাপ লক্ষ করা যায়। মসজিদে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের কাঁচ, ফ্রেম ও বোস স্পিকার। মসজিদটি নির্মাণে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার শ্রামিক কাজ করছে। নির্মাণ ব্যায় ২০ কোটি টাকা।
মসজিদ কমপ্লেক্সে জমজমের পানি, কাবা শরীফ, আরাফার ময়দান, জাবালে নূর, জাবালে রহমত, নবী (সাঃ) জন্মস্থান, খলিফাদের কবরস্থান, মা হাওয়ার কবরস্থান, অন্যান্ন বিখ্যাত জায়গা ও মসজিদের মাটি সংরক্ষণ করা আছে।
গুঠিয়া মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স দেখতে এবং নামাজ পড়তে প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। বিশেষ করে শুক্রবার জুম্মা নামাজ পড়তে এই মসজিদে হাজার হাজার মুসল্লীদের আগমন ঘটে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে এখানে ঘুরতে আসে। গুঠিয়া মসজিদটির তত্ত্বাবধানে ৩০ জন কর্মচারী রয়েছে।
গুঠিয়া মসজিদ কিভাবে যাবেন
গুঠিয়া মসজিদ যেতে হলে প্রথমে আপনাকে বরিশাল জেলা সদর শহরে আসতে হবে। বরিশাল জেলা শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স যেতে পারবেন। বরিশাল জেলা সদর থেকে এই মসজিদের দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার।
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস ও লঞ্চে করে বরিশাল যেতে পারবেন। নিচে দুভাবে যাওয়ার উপায় উল্লেখ করা হল।
বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, সোহাগ, ঈগল, শাকুরা, লাবিবা, ইম্পেরিয়াল, এনা, দিগন্ত, শ্যামলী পরিবহন সহ বরিশালগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে বরিশাল যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো পদ্মা সেতু পার হয়ে বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এসে থামে।
ঢাকা টু বরিশাল এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১,২০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বাস ছেড়ে যায়।
এছাড়া ঢাকা থেকে অনেক লোকাল বাস বরিশালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এসব লোকাল বাসে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে বরিশাল যেতে পারবেন।
লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বহু লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অধিকাংশ লঞ্চ গুলো সদরঘাট থেকে রাত ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাতে যাত্রা করলে ভোর ৫ টার দিকে বরিশাল পৌঁছে যাবেন। সকালে অনেক লঞ্চ ছেড়ে সন্ধ্যায় পৌঁছায়।
ঢাকা থেকে বরিশাল চলাচলকারী লঞ্চ গুলোর মধ্যে গ্রীন লাইন, এম ভি মানামী, এডভেঞ্চার ১, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৮, সুরভী ৯, পারাবত ৯, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরো বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে।
এসব লঞ্চের ভাড়া ডেক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৪,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
বরিশাল শহরে খাবার জন্য অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বরিশাল ইন, খাবার ঘর হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ, গাডেন ইন রেস্টুরেন্ট, খাবার বাড়ি রেস্তোরাঁ এন্ড সুইটমিট, আকাশ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, তামিম হোটেল উল্লেখযোগ্য।
বরিশালের বিখ্যাত সন্দেশ মিষ্টি এবং সকাল সন্ধ্যা হোটেলের লুচি সবজি ও সরমালাই অবশ্যই স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
কোথায় থাকবেন
বরিশাল শহরে থাকার জন্য ভালো মানের অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। এসব হোটেলে নিরাপদে ও কম খরচে থাকতে পারবেন। আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল রোদেলা, হোটেল গ্রান্ড প্ল্যাজা, রিচমার্ট রেস্ট হাউজ, হোটেল এথেনা, হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখযোগ্য।
বরিশাল আবাসিক হোটেল ভাড়া কত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
বরিশালের আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ
গুঠিয়া মসজিদ ছাড়াও বরিশাল জেলায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাসাগর দিঘী, কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি, ভাসমান পেয়ারা বাজার, দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, কলসকাঠী জমিদার বাড়ি, শাপলা বিল বরিশাল উল্লেখযোগ্য।