বরিশাল জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে স্বরুপকাঠি-বরিশাল সড়কে মাধবপাশায় দুর্গাসাগর দিঘী (Durga sagar) অবস্থিত। এটি দেশের দক্ষিণ অঞ্চল বরিশাল জেলার একটি বৃহৎ দিঘী। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ণ এলাকাবাসীর পানি সংকটের জন্য এই দিঘী খনন করে। স্থানীয়দের কাছে এই দিঘীটি দুর্গাসাগর মাধবপাশা দিঘী নামে পরিচিত।
রাজা শিব নারায়ণ তার স্ত্রী দুর্গামতির নামানুসারে এই দিঘীর নামকরণ করেন দুর্গাসাগর। এই দিঘীর জলাভূমির আয়তন ২৭ একর ও পাড় জমি সহ আয়তন ৪৫.৪২ একর। ১৯৭৪ সালে সরকারি উদ্যোগে এই দিঘীটি পুনরায় খনন করে।
সম্পূর্ণ দিঘীটি উঁচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দুইটি গেইট আছে। দিঘীর তিন দিকে ৩ টি ঘাটলা ও দিঘীর মাঝখানে জঙ্গলপূর্ণ ছোট একটি দ্বীপ রয়েছে। দিঘীর চারপাশে নারিকেল, শিশু, সুপারি, মেহগনি গাছ ও বসার বেঞ্চ রয়েছে। দিঘীর উত্তর পাশে বড় একটি বাঁধানো ঘাট আছে। যার ফলে বৃহৎ দিঘীটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
শীতকালে দিঘীতে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এর মধ্যে বালিহাঁস, সরাইল সহ প্রায় ৬ প্রজাতির হাজার হাজার পাখি। বর্তমানে “দুর্গাসাগর দিঘীর উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারণ্য” নামে একটি প্রকল্পের অধিনে বরিশাল জেলা প্রশাসন দিঘীটি তত্ত্বাবধান করছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রতি বছর চৈত্রমাসের অষ্টমী তিথীতে এখানে পবিত্র স্নানের উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়। শীতের মৌসুম সহ বছরের যেকোন সময় প্রায় আড়াইশ বছরের পুরাতন ঐতিহাসিক দুর্গাসাগর দিঘীর সৌন্দর্য দেখতে শতশত দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে।
দুর্গাসাগর দিঘী প্রবেশ মূল্য
দুর্গাসাগর দিঘীর প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা।
কিভাবে যাবেন
দুর্গাসাগর মাধবপাশায় দিঘী দেখতে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে বরিশাল শহরে আসতে হবে। বাস ও লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে পারবেন। বরিশাল বাস টার্মিনাল থেকে চাখার যাওয়ার বাসে চড়ে দিঘীর সামনে নামতে পারবেন।
বরিশাল লঞ্চ ঘাট থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে দিঘীতে যেতে পারবেন। এছাড়া বরিশাল শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা রিজার্ভ করে দুর্গাসাগর ঘুরে আসতে পারেন।
বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, সোহাগ, ঈগল, শাকুরা, লাবিবা, ইম্পেরিয়াল, এনা, দিগন্ত, শ্যামলী পরিবহন সহ বরিশালগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে বরিশাল যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো পদ্মা সেতু পার হয়ে বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এসে থামে।
ঢাকা টু বরিশাল এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১,২০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বাস ছেড়ে যায়।
এছাড়া ঢাকা থেকে অনেক লোকাল বাস বরিশালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এসব লোকাল বাসে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে বরিশাল যেতে পারবেন।
লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বহু লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অধিকাংশ লঞ্চ গুলো সদরঘাট থেকে রাত ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাতে যাত্রা করলে ভোর ৫ টার দিকে বরিশাল পৌঁছে যাবেন। সকালে অনেক লঞ্চ ছেড়ে সন্ধ্যায় পৌঁছায়।
ঢাকা থেকে বরিশাল চলাচলকারী লঞ্চ গুলোর মধ্যে গ্রীন লাইন, এম ভি মানামী, এডভেঞ্চার ১, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৮, সুরভী ৯, পারাবত ৯, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরো বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে।
এসব লঞ্চের ভাড়া ডেক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৪,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
বরিশাল শহরে খাবার জন্য অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বরিশাল ইন, খাবার ঘর হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ, গাডেন ইন রেস্টুরেন্ট, খাবার বাড়ি রেস্তোরাঁ এন্ড সুইটমিট, আকাশ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, তামিম হোটেল উল্লেখযোগ্য।
বরিশালের বিখ্যাত সন্দেশ মিষ্টি এবং সকাল সন্ধ্যা হোটেলের লুচি সবজি ও সরমালাই অবশ্যই স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
কোথায় থাকবেন
বরিশাল শহরে থাকার জন্য ভালো মানের অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। এসব হোটেলে নিরাপদে ও কম খরচে থাকতে পারবেন। আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল রোদেলা, হোটেল গ্রান্ড প্ল্যাজা, রিচমার্ট রেস্ট হাউজ, হোটেল এথেনা, হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখযোগ্য।
বরিশাল আবাসিক হোটেল ভাড়া কত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
বরিশালের আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ
দুর্গাসাগর দিঘী ছাড়াও বরিশাল জেলায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে গুঠিয়া মসজিদ, কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি, ভাসমান পেয়ারা বাজার, দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, কলসকাঠী জমিদার বাড়ি, শাপলা বিল বরিশাল উল্লেখযোগ্য।