কলসকাঠী জমিদার বাড়ি, বরিশাল

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহাসিক কলসকাঠী জমিদার বাড়ি। ১৭০০ সালে জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠাতা করে। তিনি ছিলের জমিদার রামাকান্তের পুত্র।

জানকী বল্লভ রায় ছিলেন দুই ভাই। তিনি ছিলেন ছোট, তার বড় ভাইয়ের নাম রাম বল্লভ। বড় ভাই ছোট ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার ব্যাপারে জানকী বল্লভ জানার পর রাতের আঁধারে মুর্শিদাবাদ চলে যান এবং নবাবের কাছে বিস্তারিত বলেন।

তখন মুর্শিদাবাদের নবাব তাকে অরংপুর পরগানার জমিদার হিসাবে নিযুক্ত করেন। জমিদারি পেয়ে তিনি কলসকাঠিতে এসে বসতি স্থাপন করেন। এভাবে কলসকাঠীতে জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এখানে ১৩ জন আলাদা আলাদা জমিদার বসবাস করতেন এবং তাদের আলাদা আলাদা জমিদার বাড়ি ছিলো। কলসকাঠীকে বলা যায় পূর্ণাঙ্গ একটি প্রাচীন শহর। অনেকটা সোনারগাঁও পানাম নগরের মতো। জমিদার বাড়ি গুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। মূল জমিদার বাড়ি বের হয়ে আরো কয়েকটি জমিদার বাড়ি দেখতে পাবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি আজ ধংসের পথে। সম্পূর্ণ জমিদার বাড়ির দোয়াল গুলো লতাপাতায় ঘিরে রেখেছে। দেখলে মনে হয় ভূতুরে বাড়ি। ধারণা করা হয় এখানে প্রায় ২০০ টির বেশি রুম রয়েছে। ইট, সুরকি আর পোড়া মাটির কারুকার্যে ঘেরা প্রায় দুই বিঘা জায়গায় উপর কলসকাঠী জমিদার বাড়ি।

জমিদার বাড়ির পাশে অবস্থিত শিব মন্দির। প্রায় শত বছরের এই মন্দিরে কষ্টি পাথরের মূর্তি ও অন্যান্য নিদর্শনে পরিপূর্ণ। চুরির ভরে এই মূল্যবান মূর্তি গুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

মন্দিরের সামনে ছোট একটি বেদি রয়েছে। পূজার সময় এখানে প্রাণী বলি দেওয়া হয়। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এখানে জগদ্বত্রী পূজা হয়। দুর দুরান্ত থেকে পূজায় অংশ নিতে বহু মানুষ এখানে আসেন।

কলসকাঠী জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন

কলসকাঠী জমিদার বাড়ি যেতে হলে প্রথমে আপনার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাস টার্মিনাল আসতে হবে। বরিশাল জেলা থেকে বাকেরগঞ্জগামী বাসে চলে বাকেরগঞ্জ আসতে পারবেন।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরের সাহেবগঞ্জ খেয়া পার হয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি বা অটোরিকশা করে ৩ কিলোমিটার দূরে কলসকাঠী বাজারের কিছুটা আগে জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।

বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল

ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, সোহাগ, ঈগল, শাকুরা, লাবিবা, ইম্পেরিয়াল, এনা, দিগন্ত, শ্যামলী পরিবহন সহ বরিশালগামী যেকোনো পরিবহনে চড়ে বরিশাল যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো পদ্মা সেতু পার হয়ে বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এসে থামে।

ঢাকা টু বরিশাল এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১,২০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বাস ছেড়ে যায়।

BM Khalid Hasan Sujon

এছাড়া ঢাকা থেকে অনেক লোকাল বাস বরিশালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এসব লোকাল বাসে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে বরিশাল যেতে পারবেন।

লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল

ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বহু লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অধিকাংশ লঞ্চ গুলো সদরঘাট থেকে রাত ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাতে যাত্রা করলে ভোর ৫ টার দিকে বরিশাল পৌঁছে যাবেন। সকালে অনেক লঞ্চ ছেড়ে সন্ধ্যায় পৌঁছায়।

ঢাকা থেকে বরিশাল চলাচলকারী লঞ্চ গুলোর মধ্যে গ্রীন লাইন, এম ভি মানামী, এডভেঞ্চার ১, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৮, সুরভী ৯, পারাবত ৯, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরো বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে।

এসব লঞ্চের ভাড়া ডেক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৪,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।

কোথায় খাবেন

বাকেরগঞ্জ উপজেলায় খাবার জন্য ভালো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। তাই ভালো মানের খাবার খেতে চাইলে বরিশাল জেলা শহরে আসতে হবে।

বরিশাল শহরে খাবার জন্য অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বরিশাল ইন, খাবার ঘর হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ, গাডেন ইন রেস্টুরেন্ট, খাবার বাড়ি রেস্তোরাঁ এন্ড সুইটমিট, আকাশ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, তামিম হোটেল উল্লেখযোগ্য।

বরিশালের বিখ্যাত সন্দেশ মিষ্টি এবং সকাল সন্ধ্যা হোটেলের লুচি সবজি ও সরমালাই অবশ্যই স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

কোথায় থাকবেন

বাকেরগঞ্জ থাকার জন্য জেলা পরিষদের একটি ডাকবাংলো রয়েছে। অনুমতি নিতে সেখানে থাকতে পারেন।

বরিশাল শহরে থাকার জন্য ভালো মানের অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। এসব হোটেলে নিরাপদে ও কম খরচে থাকতে পারবেন। 

আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল রোদেলা, হোটেল গ্রান্ড প্ল্যাজা, রিচমার্ট রেস্ট হাউজ, হোটেল এথেনা, হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখযোগ্য। বরিশাল আবাসিক হোটেল ভাড়া কত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

বরিশালের আরো দর্শনীয় স্থান সমূহ

কলসকাঠী জমিদার বাড়ি ছাড়াও বরিশাল জেলায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে গুঠিয়া মসজিদ, দুর্গাসাগর দিঘী, কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি, ভাসমান পেয়ারা বাজার, শাপলা বিল বরিশাল উল্লেখযোগ্য।