ছোট সোনা মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

ছোট সোনা মসজিদ রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার শাহবাজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে অবস্থিত। ১৪৯৪ থেকে ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে জনৈক মনসুর ওয়ালী মুহাম্মদ বিন আলী ছোট সোনা মসজিদ (Choto Sona Mosque) নির্মাণ করেন। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হোসেন শাহ স্থাপত্য রীতিতে তৈরি।

সোনা মসজিদের বাহিরের দিকে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল, মসজিদের গায়ে সূর্যের আলো পড়লে এর রং সোনার মতো ঝলমল করত। এজন্য এই মসজিদের নামকরণ করা হয় সোনা মসজিদ। অযত্নে অবহেলায় সোনালী রং এখন তামাটে রঙে পরিণত হয়েছে। এই মসজিদকে সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন বলে আখ্যাত।

মসজিদের দেয়ালগুলো ইট ও পাথরের তৈরি। উত্তর-দক্ষিণে ৮২ ফুট লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া, দেয়ালের উচ্চতা ২০ ফুট এবং ৬ ফুট পুরু। মসজিদের চারকোণে চারটি বুরুজ আছে, এগুলোর ভূমি নকশা অষ্টকোণাকার। বুরুজগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশ পর্যন্ত।

মসজিদের পূর্ব দেয়ালে পাঁচটি, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে তিনটি করে খিলানযুক্ত দরজা আছে। উত্তর দেয়ালের পশ্চিম পাশে দরজার জায়গায় সিঁড়ি রয়েছে। এই সিঁড়ি মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম দিকে দোতলায় অবস্থিত একটি কামরায় চলে গেছে। সেখানে সুলতান বা শাসনকর্তার নামাজের স্থান।

BM Khalid Hasan Sujon

মসজিদের অভ্যন্তরভাগের উত্তর দক্ষিণে তিনটি ও পূর্ব-পশ্চিমে পাঁচটি মোট ৮ টি স্তম্ভ আছে। পূর্ব দেয়ালের ৫ টি দরজা বরাবর মসজিদের অভ্যন্তরে ৫ টি মিহরাব রয়েছে। এর মধ্যে মাঝখানেরটি আকারে বড় এবং প্রতিটির নকশা অর্ধ-বৃত্তাকার। সর্ব উত্তরের মিহরাবের দোতলায় কামরাটিতেও একটি মিহরাব রয়েছে।

মসজিদের অভ্যন্তরে ৮ টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর ১৫ টি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। এর দুপাশের সারিতে ৩ টি করে মোট ১২ টি অর্থ-বৃত্তকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের বাহিরের যেকোনো পাশ থেকে তাকালে কেবল মাত্র ৫ টি গম্বুজ দেখা যায়। তবে পেছনের গম্বুজ গুলো দেখা যায় না। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে মসজিদের ৩ টি গম্বুজ ও পশ্চিম পাশের দেয়ার কিছুট বিধ্বস্ত হয়। এরপর ব্রিটিশ সরকার ১৯৯০ সালে গম্বুজ ও দেয়াল সংস্থার করেন।

পুরো সোনা মসজিদের অলংকরণে ইট, পাথর, টাইল ও টেরাকোটা ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে পাথরের পাথরের খোদাই করা কাজই বেশি। মসজিদের বিভিন্ন স্থানে পাথরের উপর লতাপাতা, গোলাপ ফুল, ঘন্টা ও ঝুলন্ত শিকল খোদাই করা আছে।

মূল মসজিদের প্রবেশপথে ২.৪ মিটার চওড়া ও ৭.৬ মিটার উচ্চতার পাথরের তৈরি একটি তোরণ আছে। তোরণটি মসজিদের সামনের দরজা বরাবর অবস্থিত। তোরণের সামান্য পুবে বাঁধানো মঞ্চের উপর উত্তর-দক্ষিণে বরাবর ২ টি কবর আছে। করব দুইটি কার সেটার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে ধারণা করা নির্মাতা ওয়ালি মোহাম্মদ ও তার স্ত্রীর।

BM Khalid Hasan Sujon

মূল ছোট সোনা মসজিদের উত্তর প্রান্তে বিশাল একটি দিঘী আছে। দক্ষিণ-পূর্ব পাশে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল হক টুলুর কবর আছে। কবর দুটো ১.৩ মিটার উঁচু পাচিল দিয়ে ঘেরা।

ছোট সোনা মসজিদ কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে করে খুব সহজে রাজশাহীর  চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী ও কল্যানপুর বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী পরিবহন,  ন্যশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীন ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহন, মড্র্ন তুহিন এলিট পরিবহনে চড়ে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮৫০ থেকে ১,৫০০ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা  চড়ে সরাসরি সোনা মসজিদ যেতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতি শুক্রবার বাদে বনলতা এক্সপ্রেস দুপুর ১:৩০ মিনিটে, রবিবার বাদে সিক্লসিটি এক্সপ্রেস ২:৩০ মিনিটে, মঙ্গলবার বাদে পদ্মা এক্সপ্রেস রাত ১০:৪৫ মিনিটে ও বৃহস্পতিবার বাদে ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬ টায় রাজশাহী ছেড়ে যায়।

ট্রেনের সিট ভেদে ভাড়া শোভন চেয়ার ৪৫০ থেকে ৫৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা চেয়ার ৮৬৩ থেকে ৯৪৯ টাকা, এসি সিট ১,০৩৫ থেকে ১,৩৪০ টাকা এবং এসি বার্থ ১,৫৪৭ টাকা। রাজশাহী রেলস্টেশন নেমে লোকাল বাসে ৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে “কনসাট আম বাজার” নেমে যাবেন। সেখান থেকে ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সোনা মসজিদ যেতে পারবেন।

আকাশ পথে যেতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স বিমানে চড়ে সরাসরি রাজশাহী যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে রাজশাহী বিমান ভাড়া ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা।

কোথায় খাবেন

ছোট সোনা মসজিদের আশেপাশে খাবার জন্য তেমন কোনো হোটেল নেই। শিবগঞ্জ উপজেলার মোটামুটি মানের খাবার হোটেল আছে। শিবগঞ্জের বিখ্যাত আদি চমচমের স্বাদ নিবেন।

খাবার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে ভালো মানের হোটেলে ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ক্যাফে ভিলেজ, আলাউদ্দীন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, ভাই ভাই হোটেল, শরিফা হোটেল, সারুয়ার হোটেল উল্লেখযোগ্য।

কোথায় থাকবেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে থ্রি-স্টার মানের হোটেল স্কাই ভিউ ইন (01955-668899)। এছাড়া মোটামুটি মানের অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল স্বপ্নপুরী (01711-416041), হোটেল রংধনু (01712-339687), হোটেল আল-নাহিদ (01713-376902), হোটেল রাজ (01761-855471), নবাবগঞ্জ বোডিং (01715-167646) উল্লেখযোগ্য।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আবাসিক হোটেল সমূহের বিস্তারিত তথ্য জানুন।

আশেপাশের আরো দর্শনীয় স্থান

ছোট সোনা মসজিদ ভ্রমণের পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আরো দর্শনীয় স্থান একদিনে ঘুরে আসতে পারেন। এর মধ্যে আলপনা গ্রাম, কানসাট আম বাজার, দারাসবাড়ি মসজিদ, কানসাট জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন