বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্য দারাসবাড়ি মসজিদ (Darash Bare Masjid) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছোট সোনা মসজিদ ও কোতোয়ালি দরজার মধ্যবর্তী স্থানের ওমরপুর অবস্থিত। ১৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান শামস উদ্দীন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তারই আদেশক্রমে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
নির্মাণের শুরুতে মসজিদটির নাম ছিল ফিরোজপুর মসজিদ কিন্তু ১৫০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ রমজান দারাসবাড়ি মাদ্রাসা নির্মাণ করার পর থেকে মানুষের কাছে দারাসবাড়ি মসজিদ হিসাবে পরিচিত লাভ করে।
দীর্ঘদিন মাটিচাপা থাকার পর ৭০ দশকের প্রথমে মসজিদটির খনন কাজ শুরু হয়। খনন শেষে মসজিদটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত হয়ে আছে, চারপাশে লতা-পাতা ও গাছ-গাছালিতে ঘেরা।
ইট দ্বারা নির্মিত এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ, ফুট ফুট ৯ ইঞ্চি এবং বারান্দা ১০ ফুট ৭ ইঞ্চি। বারান্দার ৭ টি স্তম্ভের উপর ৬ টি ক্ষুদ্রাতি গম্বুজ, যার মধ্যে মধ্যবর্তীটি একটু বড়। এছাড়া উপরে ৯ টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ ও উত্তর-দক্ষিণে ৩ টি জানালা ছিল।
মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে ৯ টি কারুকার্য খচিত মেহরাব আছে। উত্তর-পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজের জন্য প্রস্তরস্তম্ভের উপর একটি ছাদ ছিল। এখনো একটি মেহরাব আছে। বর্তমানে মসজিদের চারপাশের দেয়াল ও কয়েকটি প্রস্তর স্তম্ভর ছাড়া আরো কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই।
দারাসবাড়ি মসজিদের উত্তর পাশে বিশাল আয়তনের একটি দিঘী রয়েছে। এই মসজিদের সাথে ভারতের চামচিকা মসজিদের অনেক মিল লক্ষ করা যায়। এখান থেকে প্রাপ্ত তোগরা অক্ষরে উৎকীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি বর্তমানে কোলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
দারাসবাড়ি মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসা
১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ১ রমজান স্বাধীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের শাসনামলে তারই আদেশক্রমে গৌড়ের পিরোজপুর দারাসবাড়ি মসজিদ সংলগ্ন একটি বিশাল আবাসিক মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়। ধারণা করা হয় দারাসবাড়ি মাদ্রাসা বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। দারাসবাড়ি মাদ্রাসা ও মসজিদের মাঝখানে ৬০ বিঘা জায়গা জুড়ে বিশাল একটি দিঘী আছে।
দারাসবাড়ি মসজিদ কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও আকাশ পথে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে বাস, সিএনজি বা অটোরিকশা করে ছোট সোনা মসজিদ এর নিকটে অবস্থিত দারাসবাড়ি মসজিদ যেতে পারবেন।
বাসে ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ঢাকার গাবতলী ও কল্যানপুর বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী পরিবহন, ন্যশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীন ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহন, মড্র্ন তুহিন এলিট পরিবহনে চড়ে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮৫০ থেকে ১,৫০০ টাকা।
ট্রেনে ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতি শুক্রবার ব্যাতীত বনলতা এক্সপ্রেস দুপুর ১:৩০ মিনিটে, রবিবার ব্যাতীত সিক্লসিটি এক্সপ্রেস ২:৩০ মিনিটে, মঙ্গলবার ব্যাতীত পদ্মা এক্সপ্রেস রাত ১০:৪৫ মিনিটে ও বৃহস্পতিবার ব্যাতীত ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬ টায় রাজশাহী ছেড়ে যায়।
ট্রেনের সিট ভেদে ভাড়া শোভন চেয়ার ৪৫০ থেকে ৫৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা চেয়ার ৮৬৩ থেকে ৯৪৯ টাকা, এসি সিট ১,০৩৫ থেকে ১,৩৪০ টাকা এবং এসি বার্থ ১,৫৪৭ টাকা। রাজশাহী রেলস্টেশন নেমে লোকাল বাসে ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে যেতে পারবেন।
আকাশ পথে ঢাকা থেকে রাজশাহী টু চাঁপাইনবাবগঞ্জ
যাদের বাজেট বেশি তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার বিমানে করে রাজশাহী যেতে পারবেন। ইকোনমিক ক্লাস ভেদে ভাড়া ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা। রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেট কার, বাস ও সিএনজি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
শিবগঞ্জ উপজেলার ভালো মানের খাবার হোটেল না থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে খাবার জন্য ভালো মানের হোটেল আছে। এর মধ্যে ভাই ভাই হোটেল, ক্যাফে ভিলেজ, সারুয়ার হোটেল, আলাউদ্দীন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, শরিফা হোটেল উল্লেখযোগ্য। এসব হোটেল থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।
শিবগঞ্জে বিখ্যাত আদি চমচম মিষ্টি অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।
কোথায় থাকবেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল আল-নাহিদ (01713-376902), হোটেল স্বপ্নপুরী (01711-416041), হোটেল রংধনু (01712-339687), নবাবগঞ্জ বোডিং (01715-167646), হোটেল রাজ (01761-855471) উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া থ্রি-স্টার মানের হোটেল স্কাই ভিউ ইন (01955-668899) তে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
আশেপাশে আরো দর্শনীয় স্থান
দারাসবাড়ি মসজিদ ভ্রমণের পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আরো দর্শনীয় স্থান একদিনে ট্যুর করতে পারেন। এর মধ্যে আলপনা গ্রাম, কানসাট আম বাজার, ছোট সোনা মসজিদ, কানসাট জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য।