alternatetext
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান সমূহ

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান সমূহ

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান সমূহ আজকের ভ্রমণ টিপস এ উল্লেখ করবো। আপনারা যারা সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সেন্টমার্টিন যেতে চাচ্ছেন তারা সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে কক্সবাজার জেলার বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার উপকূল হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে বলে স্থানীয় ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরা ও বলা হয়। আবার অনেকে দারুচিনি দ্বীপ বলে। বিখ্যাত লেখক, হুমায়ুন আহমেদ এই দ্বীপটি নিয়ে “দারুচিনি দ্বীপ” নামের পূ্র্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি বানানোর পরে এই দ্বীপের পরিচিত আরো বেড়ে যায়।

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের সেরা পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। নীল আকাশের সাথে নীল জলরাশি, সারি সারি লম্বা নারিকেল গাছ এসব মিলিয়ে পর্যটকদের আকর্ষন টানে।

BM Khalid Hasan Sujon

সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। এসময় শীতের কারণে আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। তাছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে ভ্রমণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

বৃষ্টি ও গরমের মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে ঔ সময় সেন্টমার্টিন ভ্রমণ না করায় ভালো। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে গেলে অনুকূল পরিবেশে নিরিবিলি পরিবেশে সবকিছু উপভোগ করতে পারবেন।

তবে, এই সময় ফুল সিজনে গেলে হোটেল, রিসোর্টের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে। যার ফলে অনেক বেশি ভাড়া আপনাকে গুনতে হবে।

BM Khalid Hasan Sujon

কিভাবে সেন্টমার্টিন যাবেন

সেন্টমার্টিন দ্বীপ যাওয়ার জন্য কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সরাসরি জাহাজ ছেড়ে যায়। অধিকাংশ জাহাজ গুলো টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। তাই সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ চলে আসা সুবিধাজনক।

টেকনাফ থেকে জাহাজ, ট্রলার এবং স্পিডবোটে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি এসি, নন-এসি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজ, ট্রলায় বা স্পিডবোট সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক।

আপনি যদি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তাহলে ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজার গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। কক্সবাজার থেকে “এমভি কর্ণফুলী শীপ” সরাসরি সেন্টমার্টিন যায়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন দ্বীপ যাওয়ার জন্য “এমভি বে ওয়ান শীপ” চালু হয়েছে। 

BM Khalid Hasan Sujon

কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সরাসরি চলাচল করে এমন কতগুলো জাহাজ হলো—

এমভি গ্রীন লাইন (১): ছোট জাহাজ অভিজাত ভাবে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন।

এমভি বে কুরুজ (১): এসি জাহাজে বিলাসবহুল সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন।

কিয়ারি সিন্দাবাদ: টেকনাফ থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।

কিয়ারি কুরুজ ডাইন: জাহাজে খাবারের সুবিধাসহ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন।

কর্ণফুলি এক্সপ্রেস: কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।

টেকনাফ জেটিঘাট থেকে অগ্রিম টিকেট নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া ভালো। জাহাজ ভাড়া ৭০০ টাকা ২৫০০ টাকার মধ্যে হবে। একেক জাহাজে একেক রকম সুযোগ-সুবিধা ও ভাড়া।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ হোটেল ভাড়া

সিজনের সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপে হোটেল ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। তবে যাচাই বাছাই করে কম টাকায় হোটেল পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল হল–

বলু মেরিন রিসোর্ট

সেন্টমার্টিন ফেরিঘাটের একেবারে কাছে বলু মেরিন রির্সোট। এখানে মোট ৪১টি গেস্টরুম রয়েছে। একজন, দুজন, তিনজন এবং দশজন পর্যন্ত রুমে থাকতে পারবেন।

৫,০০০ টাকায় নন-এসি রুম ও ১৫,০০০ টাকার আশেপাশে এসি রুম পেয়ে যাবেন। ৫,০০০ টাকায় ১০ জনের গ্রুপ নিয়ে থাকার জন্য বড় রুম পেয়ে যাবেন।

নীল দিগন্ত রিসোর্ট

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পূর্বদিকের সৈকতের পাশে জাহাজ ঘাটের সাথে নীল দিগন্ত রিসোর্ট দেখতে পাবেন। কম বাজেটে থাকার জন্য আপনার জন্য এটা সেরা রিসোর্ট হতে পারে।

৩,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকার মধ্যে নন-এসি রুম পেয়ে যাবেন। এই রুম থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং সমুদ্র দেখতে পাবেন।

জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট

সেন্টমার্টিন দ্বীপের নারিকেল গাছ ঘেরা সৈকতের পাশে জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট অবস্থিত। এখানে আপনি পরিবার নিয়ে থাকতে পারবেন।

পরিবার নিয়ে থাকতে চাইলে রিসোর্ট থেকে অতিরিক্ত অনেক সুযোগ সুবিধা পাবেন। পরিবার নিয়ে ২,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকার মধ্যে এখানে থাকতে পারবেন।

কোরাল ভিউ রিসোর্ট

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পূর্বদিকের সৈকতের জাহাজ ঘাটের সাথে কোরাল ভিউ রিসোর্ট অবস্থিত। থাকার জন্য আপনার কাছে এটা সেরা রিসোর্ট হতে পারে।

৩,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকার মধ্যে এখানে থাকতে পারবেন। রুমে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

দ্য আটলান্টিক রিসোর্ট

দ্যা আটলান্টিক রিসোর্টের আগের নাম ছিল লাবিবা বিলাশ রিসোর্ট। ৪৩টি রুমের বিশাল একটি রিসোর্ট। এখানে কম বাজেটে এবং বিলাসবহুল থাকার রুম রয়েছে। আলাদা করে পার্টি করার জায়গা রয়েছে এই রিসোর্টে।

১,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন রুমে থাকতে পারবেন। অনুষ্ঠান করার জন্য আলাদা পার্টি করার জায়গা রয়েছে এই ১৫,০০০ টাকার বাজেটের মধ্যে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান সমূহ

সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে রিসোর্ট ভাড়া নেওয়ার পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলো নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছেড়া দ্বীপে যাওয়া: বন্ধু-বান্ধব বা পরিবার সাথে নিয়ে ট্রলারে করে ছেড়া দ্বীপে যাওয়া জমায় আলাদা। চারিদিকে নীল সমুদ্র যা সারাজীবন আপনার মনে রাখার মতো একটি স্মৃতি হয়ে থাকবে।

সৈকত দেখা: সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সৈকতে বের হবেন। সৈকতে হাঁটার জন্য পানির বোতল, সানক্রিম এবং স্যান্ডেল নিতে ভুলবেন না। প্রচন্ড রোদে ছায়াশীতল জায়গা এখানে আপনি পাবেন না।

প্রবাল দেখা: সৈকতে প্রবাল ঢেউ আছড়ে পড়লে শামুখ সহ বিভিন্ন জলপ্রাণী দেখতে পাবেন। তবে, পিচ্ছিল পাথর থেকে দেখে শুনে সাবধানে হাঁটবেন।

নারিকেল গাছ দেখা: সেন্টমার্টিনের আরেক নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। তাই এখানে এসে লম্বা লম্বা সারি সারি নারিকেল গাছের সুন্দর ছবি তুলতে পারবেন।

স্কুবা ডাইভিং করা: সেন্টমার্টিন দ্বীপে নীল সাগরের নিচে কি আছে দেখতে চাই স্কুবা ডাইভিং করতে হবে। এর মাধ্যমে নতুন নতুন রং-বেরঙের সামুদ্রিক প্রাণী, গাছপালা দেখতে পাবেন। খরচ পড়বে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা।

সাইকেল চালানো: সেন্টমার্টিন দ্বীপে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে অনেক সময় প্রয়োজন। তাই এখান থেকে সাইকেল ভাড়া নিয়ে দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সাইকেল চালানোর সময় চোরাবালির স্তূপ থেকে সাবধানে চালাবেন।

দোলনা বিলাস: সারাদিন সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘোরাঘুরি করার পর বিকালে দোলনায় শুয়ে অবকাশ কাটাতে পারবেন। সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে সূর্যস্ত দেখতে পাবেন।

সন্ধ্যার বাজার: এখানে বিকাল বেলা থেকে রাত পর্যন্ত দ্বীপে অস্থায়ী বাজার বসে। এখানে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, শো-পিস সহ খাদ্য খাবার যাবেন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোথায় খাবেন

সেন্টমার্টিনের অধিকাংশ রিসোর্ট গুলোতে থাকার সাথে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি যখন রিসোর্ট ভাড়া করবেন তখন জেনে নিবেন সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা।

রিসোর্টে যদি খাওয়া ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সেন্টমার্টিন বাজারে কিছু খাবার হোটেল আছে সেখান থেকে খেতে পারবেন। এখানে যেসকল রেস্তোরাঁ গুলো থেকে খেতে পারবেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল–

হোটেল আল্লাহর দান, আসাম হোটেল, সি বিচ, বাজার বিচ, রিয়েল রেস্তোরাঁ, সেন্টমার্টিন, হাজি সেলিম পার্ক, হোটেল সাদেক, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।

কোন সময় সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করবেন না

সেন্টমার্টিন ভ্রমণেন উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই সময় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজ চলাচল করে। বাকি সময় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রশাসন জাহাজ ভ্রমণ বন্ধ রাখে।

আরও দেখুন: জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই

অনেকে বন্ধ-বান্ধব মিলে স্পিড বোট, ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যায়। এতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন কত কিলোমিটার

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ১২০ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে জাহাজে সরাসরি সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে পারবেন। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস শীপ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল করে।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন কত কিলোমিটার

টেকনাফ উপজেলা থেকে সেন্টমার্টিন ২৬.১ কিলোমিটার। টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজ সেন্টমার্টিন চলাচল করে। ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।

শেষ কথা

আজকের ভ্রমণ টিপস এ আমরা জানলাম কিভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান সমূহ, হোটেল বা রিসোর্ট ভাড়া সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন।

আরো পড়ুন

Similar Posts